ঢাকা,শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪

চকরিয়ায় চরণদ্বীপ তুলাতুলি ও চৈম্মারঘোনায় মুজিব কিল্লা সহ

জেলায় সাড়ে ১৫ কোটি টাকার মুজিব কিল্লা নির্মাণে চরম অনিয়ম

নিজস্ব প্রতিবেদক, কক্সবাজার ::

# ৪ বছরে ৮টির ২টি কাজ সমাপ্ত        # অনিয়মে বন্ধ ২ টির কাজ         # কালো তালিকায় ২ ঠিকাদারী প্রতিষ্টান

ঘূর্ণিঝড় ও বন্যার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে জনগনের জানমাল রক্ষায় দেশের উপকূলীয় এলাকায় সেই সময় মাটির কিল্লা নির্মাণ করেছিলেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। দীর্ঘদিন রক্ষণাবেক্ষণের অভাবসহ নানাবিধ কারণে বেদখল হয়ে যায় এসব কিল্লা। বর্তমান সরকার সেগুলো ফের সংস্কার ও সংরক্ষণের উদ্যোগ নেয় ২০১৮ সালে।

মুজিব কিল্লা সংস্কার ও পুণঃ নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় কক্সবাজারের ৪ উপজেলায় ৮টি মুজিব কিল্লা নির্মাণের জন্য সাড়ে ১৫ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। উক্ত ৮টি মুজিব কিল্লার নির্মাণের জন্য তিন বছরের সময় বরাদ্দ দেওয়া হয়। উক্ত সময়ের মধ্যে কোন কেল্লার নির্মাণ কাজ শেষ করতে পারেনি সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ফলে প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদেরকে বারবার তাগাদা দেওয়ার পরও কাজ সমাপ্ত করতে না পারায় ২ ঠিকাদারের কার্যাদেশ বাতিল করা হয়।

বরাদ্দ পাওয়া ৮ মুজিব কিল্লার মধ্যে মাত্র ২টি কিল্লাই নির্মাণ কাজ সমাপ্ত করে সংশ্লিষ্টরা। নির্মাণ কাজে নানা অনিয়মের কারণে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে তিনটি প্রকল্প। ফলে গুরুত্বপূর্ণ এ প্রকল্পটির ভবিষ্যৎ মুখ থুবড়ে পড়েছে। জেলা ত্রাণ ও পূনর্বাসন কর্মকর্তা মো: জাহাঙ্গীর আলম নানা অনিয়ম দুর্নীতি এবং কাজের মান নিম্ন হওয়ায় প্রকল্পটি এগোয়নি বলে স্বীকার করেন এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাগণ এখন তা তদারকির দায়িত্ব পালন করছেন বলে জানান।

জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তার কার্যালয় সুত্রে জানা যায় – কক্সবাজারে ৮ মুজিব কিল্লা নির্মাণের জন্য ২০১৮ সালে ১৫ কোটি ৫০ লাখ ৮৮ হাজার ৮৯২ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। এরমধ্যে চকরিয়া উপজেলার চৈম্মারঘোনা মুজিব কিল্লার নির্মাণের জন্য ১ কোটি ৪২ লাখ ৪৭ হাজার টাকা, চরণদ্বীপ তুলাতুলি মুজিব কিল্লার জন্য ১ কোটি ৮১ লক্ষ ৯৫ হাজার ৩৫৪ টাকা, পেকুয়া উপজেলার শরৎঘোনা মুজিব কিল্লা নির্মাণের জন্য ১ কোটি ৯৭ লক্ষ ৯৩ হাজার ১০ টাকা, পূর্ব উজানটিয়া মুজিব কিল্লা নির্মাণের জন্য ১ কোটি ৬৩ লাখ ৫১ হাজার টাকা, মহেশখালী বড়দিয়া মুজিব কিল্লা নির্মাণের জন্য দুই কোটি ১০ লাখ ৯০৫ টাকা, সোনাদিয়া মুজিব কিল্লার জন্য ২ কোটি ১৬ লাখ ১২ হাজার টাকা, চরপাড়া মুজিব কেল্লা নির্মাণের জন্য ২ কোটি ৩৪ লাখ হাজার টাকা এবং কুতুবদিয়া আজম কলোনি মুজিব কেল্লা নির্মাণের জন্য ২ কোটি ৪ লাখ ১৮ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়।

জেলা প্রশাসনের কাজের অগ্রগতি নিরূপণ প্রতিবেদনে দেখা যায়- চকরিয়া চৈম্মার ঘোনা মুজিব কিল্লা এবং মহেশখালীর বড়দিয়া মুজিবকিল্লা নির্মাণ কাজ শেষ করে ঠিকাদার সংশ্লিষ্ট প্রশাসনকে বুঝিয়ে দিয়েছে। পক্ষান্তরে দীর্ঘ চার বছরেও বাকি ছয়টি মুজিব কিল্লার কাজ এখনো শেষ করতে পারেনি।

কাজে নানা অনিয়মের কারণে চকরিয়ার চরণদ্বীপ তুলাতুলি মুজিব কিল্লার কার্যাদেশ বন্ধ করে দেয়া হয়। ঠিকাদার কাজল ব্রাদার্স যথাসময়ে কাজ না করায় এবং কাজের গুণগত মান খুবই নিম্নমানের হওয়ায় কাজটি বন্ধ করে দেওয়া হয়। পাশাপাশি সোনাদিয়া মুজিব কিল্লা নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

মহেশখালীর চরপাড়া মুজিব কিল্লার ঠিকাদারকে ও কালো তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। তাদের কাজে যথেষ্ট গাফিলতি এবং নানা অনিয়ম ধরা পড়ায় কাজ বন্ধ করে দিয়েছে প্রশাসন। নতুন করে দরপত্র আহ্বান করে ঠিকাদার নিয়োগ করে এটির কাজ শুরু হবে বলে জানিয়েছেন জেলার ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মোঃ জাহাঙ্গীর আলম।

কুতুবদিয়ার আজম কলোনি নির্মাণ কাজ কিছুটা অগ্রগতি হওয়ার পর ঠিকাদারের কারণে কাজ বন্ধ রয়েছে। ফলে জেলার আটটি মুজিব কিল্লা নির্মাণের মধ্যে শুধুমাত্র দুটিই শেষ করতে পেরেছে ঠিকাদার। ঠিকাদারদের স্বেচ্ছাচারিতা, কাজের অনিয়ম গাফেলতি ও জবাবদিহিতার অভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প মাঠেই মারা পড়েছে।

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের উপকূলীয় এলাকার নিরাপত্তা প্রকল্পটি অনেকটা হুমকির মুখে পড়েছে মুজিব কিল্লা নির্মাণ কাজ বন্ধ হওয়ার কারণে। কাজ কবে শেষ করতে পারবে তার সঠিক নির্দেশনাও নেই কোথাও। সাড়ে ১৬ কোটি টাকার কাজ অনেকটা দায়সারাভাবে কোনমতে শেষ করতে পারলে যেন বাঁচে এমন অবস্থা।

জানা যায়, ২০১৮ সালে দেশের ঘূর্ণিঝড়প্রবণ ১৬টি জেলার ৬৪টি উপজেলা এবং বন্যা ও নদী ভাঙনপ্রবণ ২৪টি জেলার ৮৮টি উপজেলায় এগুলো নির্মাণ ও সংস্কার প্রকল্প গ্রহন করা হয়। বাস্তবায়নের দায়িত্ব রয়েছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর। প্রকল্পের কাজ ২০১৮ সালের জুলাই মাসে শুরু হয়ে যা শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০২১ সালের ডিসেম্বরে। কিন্তু সময়মতো কাজ শেষ না হওয়ায় এর মেয়াদ বাড়ে ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। বর্তমানে ২০২৩ সালের নতুন অর্থ বছর চললে ও অদ্যাবধি কাজ শেষ করতে পারেনি সংশ্লিষ্ট প্রশাসন।

জেলা ত্রাণ ও পূনর্বাসন কর্মকর্তা মো: জাহাঙ্গীর আলমের মতে ৪ উপজেলায় তদারকির জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা, প্রকৌশলীসহ শক্তিশালী কমিটি রয়েছে। তাদের পর্যবেক্ষনে অনিয়ম ধরা পড়ে ফলে ২টি কিল্লার কাজ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে পাশাপাশি ঠিকাদারের লাইসেন্স বাতিল করা হয়েছে। তবে কখন পুণরায় কাজ শুরু হবে তা জানাতে পারেননি।

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের গুরুত্বপূর্ণ মুজিব কিল্লার নির্মাণ কাজ শেষ হলে জেলার ৪ টি ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসপ্রবণ উপজেলার মানুষ আশ্রয় দিতে পারবে। নিরাপদ আশ্রয় পাবে ৩ লক্ষ বন্যা কবলিত মানুষ।

পাঠকের মতামত: