ঢাকা,রোববার, ৫ মে ২০২৪

ব্র্যাকের মাঠকর্মীর বিয়ে প্রতারণা

চকরিয়ায় নদীতে লাফ দিয়ে মাদরাসা শিক্ষার্থীর আত্মহত্যার চেষ্টা

নিজস্ব প্রতিবেদক, চকরিয়া
প্রেম মানে না জাত -ধর্ম। প্রেম মানে না ৭ তলার মেয়ের ঝুপড়ী ঘরে বসবাস। প্রেমের টানে সাত সাগর তের নদী পার হয়ে প্রেমিক – প্রেমিকা এক রশিতে গলায় জুলিয়ে আত্নহত্যা করার ঘটনাও আছে এই পৃথিবীতে। এই ধরনের একটি ঘটনা ঘটেছে কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার বদরখালী -মহেশখালী সেতুতে রোববার ১৮ জুন ভোরে। প্রেমিকা ভিকটিম মাদ্রাসার ছাত্রী। পরিচয় গোপন করে হিন্দু সম্প্রদায়ের যুবক তার সঙ্গে তৈরি করেছেন প্রেমের অগাধ সম্পর্ক। বিয়ের আশ্বাসে সবকিছু কেড়ে নেওয়ার পর ওই মাদরাসা ছাত্রী বুঝতে পারে সে প্রতারণার শিকার হয়েছে। তাতে রাগে অভিমানে ওই মাদরাসা ছাত্রী বদরখালী ফেরিঘাট এলাকায় সেতু থেকে নদীতে লাফ দিয়ে আত্মহত্যা করার চেষ্টা চালিয়েছে। এসময় পথচারী লোকজন এগিয়ে এসে তাকে নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা করেছেন।
ভিকটিম মাদরাসা ছাত্রীর পরিবারের অভিযোগ সুত্রে জানা গেছে, চকরিয়া উপজেলার বদরখালীস্থ ব্র্যাক অফিসে কর্মরত সংগঠক লাভলু ঘোষ মহেশখালী উপজেলার কালারমারছড়া ইউনিয়নের ঝাপুয়া এলাকার ফিল্ড অফিসার হিসেনে দায়িত্বরত রয়েছে।

দীর্ঘদিন সেখানের কেন্দ্রে থাকাবস্থায় এক গ্রাহকের ঝাপুয়া মাদ্রাসায় পড়ুয়া এক মেয়ের সাথে তার পরিচয়ের সুবাদে (মুসলিম পরিচয় দিয়ে) প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। সম্পর্কের একপর্যায়ে ওই ছাত্রীকে বিভিন্ন সময় যৌন হয়রানিও করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন পরিবার সদস্যরা।
এরই মধ্যে প্রেমিকা মাদরাসা ছাত্রী তার প্রেমিক লাভলু ঘোষ অমুসলিম বিষয়টি জানতে পেরে রোববার ভোর সাড়ে ৬ টায় প্রেমিকা লাভলু ঘোষের সামনে বদরখালী মহেশখালী ব্রীজ থেকে নদীতে ঝাপ দিয়ে আত্মহত্যা করার চেষ্টা চালায়।
ওইসময় ঘটনাটি টের পেয়ে পথচারী লোকজন ওই মেয়েটিকে ঝাপটে ধরে নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা করে । একপর্যায়ে উপস্থিত লোকজন প্রতারক প্রেমিক লাভলু ঘোষ চড়থাপ্পড় দিয়ে তাড়িয়ে দিয়ে মাদারাসা ছাত্রীকে ইজ্জত বাঁচাতে তার মা- বাবার হাতে তুলে দেন।

গতকাল দুপুরে বদরখালী ব্র্যাক অফিসে গিয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত লাভলু ঘোষ তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তবে তিনি ওই ছাত্রীর সঙ্গে কয়েকবার মোবাইল ফোনে কথা বলেছেন বলে স্বীকার করেন।
বদরখালী ব্র্যাক অফিসের শাখা ব্যবস্থাপক ছাবের আহমদ বলেন, আমাদের মাঠ সংগঠক লাভলু ঘোষের বিরুদ্ধে নারী কেলেঙ্কারির যে অভিযোগটি উঠেছে, তা আমরা অবশ্যই খতিয়ে দেখবো। তিনি যদি এইধরনের ঘটনায় জড়িত রয়েছে প্রমাণ মেলে অবশ্যই তার বিরুদ্ধে বিধিমোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

নাম প্রকাশ না করার সর্তে ভিকটিম মাদরাসা ছাত্রীর মা বলেন, লাভলু ঘোষ ব্রাক ব্যাংকে চাকরির সুবাদে আমাদের এলাকায় ঋণ দেন। আমিও উক্ত ব্যাংকের ঋণগ্রহীতা । আমাকে ঋণ দেওয়ার সময় ম্যানেজার ছাবেরসহ কর্মসূচি সংগঠক লাভলু ঘোষ আমাদের বাড়িতে আসেন এবং আমার মেয়েকে পছন্দ করে লাভলু ঘোষের সাথে বিয়ের প্রস্তাব দেন।
একপর্যায়ে আমার ভাইকে ঋণ নিয়ে দেওয়ার সময় আমাকে ফোন করে আমার মেয়ে এবং আমাকে একা যাওয়ার প্রস্তাব দেন লাভলু ঘোষ।
তিনি দাবি করেন, আমার মেয়ে দুইদিন আগে বান্ধবী বাসায় যাবে যাওয়ার কথা বলে লাভলু ঘোষের বদরখালী ভাড়া বাসায় চলে যান। আমি আত্মীয়দের বাসায় এবং তার বান্ধবীদের বাসায় অনেক খোঁজাখুঁজির পর একপর্যায়ে আজকে (১৮ জুন) সকাল ৯ টার সময় এক সিএনজি গাড়ি চালক এবং বদরখালীর স্থানীয় কিছু লোক আমার মেয়েকে আমার বাড়িতে নিয়ে আসেন। তখন আমার মেয়েকে বাড়িতে নিয়ে আসা লোকজন সমস্ত ঘটনা আমাকে খুলে বলেন।

ভিকটিমের মা আরও বলেন, আমার মেয়ে প্রতারিতা হওয়ার কারণে বদরখালী সেতু থেকে লাফ দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলো। এসময় পথচারী লোকজন দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে তাকে উদ্ধার করে সেতুর টোল পয়েন্টে নিয়ে যান। তখন উপস্থিত লোকজন উভয়ের কথা শুনেন।

এসময় উপস্থিত সবাইকে আমার মেয়ে বলেন, গত একবছর যাবত অভিযুক্ত লাভলু ঘোষ ( রাজ পরিচয়ে) নাম দিয়ে তার সঙ্গে সম্পর্কের বাঁধনে আবদ্ধ করেন। পরে আমার মেয়ে লাভলু ঘোষের পরিচয় নিশ্চিত হন,তাকে বলে বিয়ে করলে মুসলিম ধর্মে আসতে হবে। তাতে রাজি হয়ে এতদিন আমার মেয়ের সঙ্গে সম্পর্ক অব্যাহত রাখে লাভলু ঘোষ।
কিন্তু শেষমুহুর্তে এসে প্রতারণা করায় রাগে অভিমানে আমার মেয়ে বদরখালী মহেশখালী সেতু থেকে লাফ দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করে।

ভিকটিম ওই মাদরাসা ছাত্রীর মায়ের অভিযোগ, বদরখালী ব্র্যাক ব্যাংকে অবিবাহিত মেয়েদের ঋণ দেওয়ার বিধান না থাকলেও আমার সুন্দরী মেয়েকে টার্গেট করে এই ঋণ প্রদান করে আমার মেয়ের এত বড় সর্বনাশ করেছেন ব্যাংক ম্যানেজার ও কর্মসূচির সংগঠক লাভলু ঘোষ। আমি মা হিসেবে আমার মেয়ের সাথে লাভলু ঘোষ পরিচয় গোপন করে যা করেছে তার জন্য ব্যাংকের ম্যানেজার ও অভিযুক্ত লাভলু ঘোষের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।

পাঠকের মতামত: