ঢাকা,রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪

৪০ লক্ষ টাকার রাজস্ব ঘাটতিতে পেকুয়া বাজার নিলাম

পেকুয়া প্রতিনিধি :: কক্সবাজারের পেকুয়ায় কবির আহমদ চৌধুরী বাজার নিলামে এবার রাজস্ব ঘাটতি হয়েছে ৪০ লক্ষ টাকারও বেশী। এবার ওই বাজারটিতে ইজারা মূল্যের সরকারী রাজস্বের বড় ধরনের দরপতন হয়েছে। গেল বছরের ইজারা মূল্য থেকে এবার বাজারটির দরের মূল্যের পতন হয়েছে ৪০ লক্ষ টাকারও বেশী। তবে গেল ১৪২৮ বাংলায় দরপত্র আহবান ও টেন্ডার ছিল প্রতিযোগিতামূলক। এবার অনেকটা সমঝোতার মধ্যে বাজারটির নিলাম নিস্পত্তি হয়েছে।

বড় ধরনের রাজস্ব ও সরকারী ভ্যাট ফাঁকি দিয়ে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট কবির আহমদ চৌধুরী বাজারের ইজারা প্রাপ্তি হয়েছেন।
১৬ মার্চ (বুধবার) বিকেল ৩ টায় পেকুয়া উপজেলার হাট বাজার সমূহের ইজারা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
পেকুয়ার ইউএনও এর কার্যালয়ে উপজেলার সবকটি সরকারের রাজস্বভূক্ত হাট বাজারের ইজারা নিস্পত্তি ওই দিন চুড়ান্ত করা হয়। সর্বোচ্চ ডাককারী হিসেবে এবার কবির আহমদ চৌধুরী বাজার ইজারা পেয়েছেন পেকুয়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও উপজেলা যুবলীগ সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম।

মেসার্স রমিজ আহমদ এন্টারপ্রাইজের অনুকুলে বাজারটি উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান পেয়ে যান। চলতি ১৪২৮ বাংলার চৈত্রমাস থেকে আগামী ১৪২৯ বাংলার চৈত্রমাস পর্যন্ত ১ বছর মেয়াদকাল পর্যন্ত মেসার্স রমিজ আহমদ এন্টারপ্রাইজ বাজারটির টোল আদায় করবে।
গেল ১৪২৮ বাংলায় পেকুয়া বাজারের ইজারা মূল্য ছিল ১ কোটি ৩৫ লক্ষ টাকা। ১৫% ভ্যাট ও ৫% আয়করসহ দাখিলকৃত সর্বমোট বাজারটির মূল্য ছিল ১ কোটি ৬২ লক্ষ টাকা। সেই বার ওই বাজারটির সর্বোচ্চ ডাককারী ছিলেন কক্সবাজার জেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম সম্পাদক মুহাম্মদ শওকত হোসেন। এবারের ইজারা মূল্যের বাজারটির টেন্ডার নিষ্পত্তি হয়েছে ১ কোটি ৪ লক্ষ টাকায়। বর্তমান ও সাবেক ইজারা মূল্যের হিসাব মেলালে তফাৎ হিসেবে বাজারটির ইজারা মূল্যের ৪০ লক্ষ টাকারও বেশী ঘাটতি রয়েছে। পেকুয়া বাজারের ইজারা কার্যক্রম স্থগিত রাখতে উচ্চ আদালতে রিট পিটিশন দায়ের করা হয়েছে।
কোভিড-১৯ এর কারণে স্থবির হয়ে গিয়েছিল পৃথিবীর স্বাভাবিক গতি। এর নেতিবাচক প্রভাব জাতীয় ও স্থানীয় অর্থনীতিতে পড়েছে। বাজারটিতেও স্থবিরতা বিরাজ করছিল। সরকারী টোল আদায়ে ঘাটতি হয়েছে। এতে করে সরকারকে অধিক মূল্যে রাজস্ব দিয়ে বাজার ইজারা প্রাপ্তি ব্যক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হন। ক্ষতি পুষিয়ে নিতে ইজারাদার রাষ্ট্রপক্ষের ধারস্থ হয়েছিলেন। কোন ধরনের সাড়া ও কর্ণপাত না হওয়ায় ইজারাদার মহামান্য হাইকোর্টে একটি রিট আবেদন রুজু করেন। চলতি বছরের ১৫ মার্চ বাজারের ইজারাদার বারবাকিয়া ইউনিয়নের জালিয়াকাটার নন্না মিয়ার পুত্র মো: শওকত হোসেন রিট আবেদনের বাদী। যার পিটিশন নং ৩৩৮৭/২২।
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে ভূমি মন্ত্রনালয়ের সচিব জেলা প্রশাসক কক্সবাজার, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক রাজস্ব, কক্সবাজার, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, পেকুয়া, ইউনিয়ন সহকারী ভূমি কর্মকর্তা, পেকুয়াকে বিবাদী করা হয়। বিচারপতি জাফর আহমদ ও বিচারপতি কাজী জিন্নাত হকের সমন্বয় হাইকোর্ট বেঞ্চে রিট আবেদনটি শুনানী দিন রয়েছে। বাদী পক্ষে মামলাটি পরিচালনা করছেন সুপ্রিম ও হাইকোর্ট বিভাগের জৈষ্ট্য আইনজীবি এডভোকেট এস,এম জুলফিকার আলী।
এ ব্যাপারে শিলখালী ইউপি চেয়ারম্যান কামাল হোসেন জানান, হাটবাজার ইজারার রাজস্ব থেকে ইউনিয়ন পরিষদ সমূহের উন্নয়ন ও অবকাঠামো নির্মাণ করা হয়। ৪০ লক্ষ টাকা ঘাটতি মানে এটি বৃহৎ ঘাটতি। এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে স্থানীয় সরকার উন্নয়ন কাঠামো গুলোতে। আসলে বিষয়টি সম্পর্কে আমি স্পষ্ট নই। প্রতিযোগিতা না হয়ে থাকলে অবশ্যই সরকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত রয়েছে এটা স্বাভাবিক।
টইটং ইউপি চেয়ারম্যান জাহেদুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, হাটবাজারের ইজারা পেকুয়ায় হয়েছে বিষয়টি আমি জেনেছি। তবে কিভাবে হয়েছে সে সম্পর্কে আমি ওয়াকিফহাল নয়।
পেকুয়ার ইউএনও পূর্বিতা চাকমা জানান, টেন্ডার আহবান হয়েছে স্বচ্ছভাবে। এর আগে হাটবাজার ইজারা বিজ্ঞপ্তি জাতীয় ও স্থানীয় পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। জনগনকে জানানো হয়েছিল। এখানে কোন লুকোচুরি হয়নি। দরপত্র আহবানকারীদের মধ্যে সর্বোচ্চ ডাককারীকে বাজারটির ইজারা নিষ্পত্তি করা হয়েছে। হাটবাজার ইজারা দরপত্র মূল্যায়ন কমিটি সর্বোচ্চ ডাককারীকে বাজার ইজারা দিয়েছে। বক্সে টেন্ডার জমা ছিল। সেখানে আমার অফিসের কর্মচারী ও আনসার সদস্যরা ছিল। এখানে প্রভাবিত করার সুযোগ ছিল না কারও। এরপরও প্রশ্ন অথবা সরকারী মূল্যের অস্বাভাবিকতা থেকে থাকলে ডিসি স্যারের সাথে আলাপ করবো। এরপর করণীয় কি হবে সেটি জানা যাবে।

পাঠকের মতামত: