ঢাকা,শনিবার, ৪ মে ২০২৪

কক্সবাজার-চট্টগ্রাম দ্বিতল এক্সপ্রেসওয়েসহ দুই বিকল্প নিয়ে এগোচ্ছে সরকার

নিজস্ব প্রতিবেদক ::
প্রথমবারের মতো বসছে রেল, আকাশযাত্রা পাচ্ছে আন্তর্জাতিক মান। এরমধ্যে ধুঁকতে থাকা সড়কের উন্নয়নে একটি উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনা নিয়ে অনেকটা এগিয়েছে সরকার; হচ্ছে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার এক্সপ্রেসওয়ে।
প্রাথমিক সমীক্ষা শেষে ভাবনার জন্য দুটি প্রস্তাব উঠে এসেছে। নতুন রুটে নয়, বন্দরনগরী টু পর্যটন নগরীর বিদ্যমান দেড়শ কিলোমিটার মহাসড়ককে ঘিরেই প্রাথমিকভাবে ৪২ হাজার কোটি টাকার এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের প্রাথমিক পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ বলে জানাচ্ছেন কর্মকর্তারা।

এক প্রস্তাবে বিদ্যমান সড়কের দুই পাশে কম গতির যানবাহন চলাচলের দুটি লেইনসহ ছয় লেইনের এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের কথা বলা হয়েছে।

আর দ্বিতীয়টিতে সড়কের মাঝখানে দ্বিতল সড়ক তৈরি করে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের প্রস্তাব রাখা হয়েছে।

শুধু যে সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ এগিয়েছে তা নয়, জাপানের খ্যাতনামা মারুবেনি করপোরেশনও এগিয়ে এসেছে এ এক্সপ্রেসওয়ের সঙ্গে যুক্ত থাকতে। অর্থায়নের পাশাপাশি জাপানি কোম্পানিটি বিশাল ব্যয়ের প্রকল্পটিতে নির্মাণ কাজের দায়িত্বও পাচ্ছে; যেটি হবে সরকারি পর্যায়ে জাপান-বাংলাদেশ যৌথ সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্ব বা পিপিপি প্রকল্প বলে জানিয়েছেন বাস্তবায়নকারী সংস্থা সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. আব্দুল মালেক।

দেশের আরও বিভিন্ন সড়ক-মহাসড়কের এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ ও পরিকল্পনার মধ্যেই নতুন এ এক্সপ্রেসওয়ের উদ্যোগের আলোচনাও গতি পেয়েছে।

এ বিষয়ে অতিরিক্ত সচিব আব্দুল মালেক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, এ প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাই সমীক্ষা নিয়ে আমরা মারুবেনি করপোরেশনের সঙ্গে গত ৩ ফেব্রুয়ারি বৈঠক করেছি। আরও বৈঠক আছে। এরপর দুপক্ষের সমঝোতার ভিত্তিতে বাস্তবায়নের পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, কক্সবাজারের মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্র বন্দর থেকে দ্রুততম সময়ে আমদানি-রপ্তানি পণ্য পরিবহন এবং পর্যটননগরীটির সঙ্গে বিশ্বমানের যোগাযোগ ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ককে এক্সপ্রেসওয়ে রূপান্তরের এই উদ্যোগ নিয়ে কাজ শুরু করেছে সরকার।

সরকার টু সরকার (জি টু জি) পর্যায়ে এ প্রকল্প বাস্তবায়নে অর্থায়ন করবে জাপান। বন্ধুপ্রতীম দেশটির সঙ্গে ২০১৮ সালে প্রকল্পটি নিয়ে সমঝোতা চুক্তিও হয়েছে বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।

প্রস্তাবিত এ এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ প্রকল্পে অর্থায়ন ও বাস্তবায়নের জন্য শীর্ষস্থানীয় কোম্পানি মারুবেনি করপোরেশনকে বাছাইও করেছে জাপান। কোম্পানিটি বিদ্যুৎ, জ্বালানি, নৌবাণিজ্য, ইস্পাত, আবাসন, তথ্যপ্রযুক্তি এবং পিপিপি প্রকল্পে অর্থায়ন, অবকাঠামো নির্মাণসহ আরও অনেক ধরনের ব্যবসার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট।

২০২৯ সালের মধ্যে এ এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে প্রকল্পটির পরিকল্পনা করা হচ্ছে, যাতে বিদ্যমান ১৫১ কিলোমিটার সড়কের বাঁক সরলীকরণের মাধ্যমে ১৩১ কিলোমিটারে কমিয়ে আনা সম্ভব হবে। এবং এক্সপ্রেসওয়েটি নির্মাণ হলে মাত্র দেড় থেকে দুই ঘণ্টায় চট্টগ্রাম-কক্সবাজার ভ্রমণ করা সম্ভব হবে। এতে পর্যটনে যেমন বিনিয়োগ বাড়বে, তেমনি দেশি-বিদেশি পর্যটকদের আকর্ষণীয় ভ্রমণ গন্তব্যে পরিণত হবে কক্সবাজার।

প্রকল্পটি নিয়ে ইতোমধ্যে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পুরকৌশল বিভাগ একটি সমীক্ষা পরিচালনা করেছে। এ বিভাগের অধ্যাপক ড. ইশতিয়াক আহমেদের নেতৃত্বে করা এ সম্ভাব্যতা যাচাই প্রতিবেদন গত ডিসেম্বরে জমা দেওয়া হয়; যাতে দুটি বিকল্প প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২১ সালের জুনে শেষ করার চুক্তি থাকলেও কোভিড-১৯ মহামারীর কারণে সমীক্ষা দলের কাজ শেষ করতে ছয় মাস দেরি হয়।

সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের এক কর্মকর্তা জানান, গত ১৭ ফেব্রুয়ারি সমীক্ষা প্রতিবেদনের ভিত্তিতে মারুবেনি করপোরেশনের কাছে বিস্তারিত প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়েছে।

পাঠকের মতামত: