ঢাকা,শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪

চকরিয়ায় ওএমএস চাল আটা বিক্রিতে অনিয়ম তদন্তে জেলা খাদ্য কর্মকর্তা (ফলোআপ )

নিজস্ব প্রতিবেদক, চকরিয়া ::

চকরিয়া উপজেলা খাদ্য অধিদপ্তরের অধীনে পৌরসভা এলাকার চারটি পয়েন্টে পরিচালিত বিশেষ ওপেন মার্কেট সেলের (ওএমএস) চাল-আটা বিক্রিতে অনিয়মের ঘটনা অবশেষে তদন্ত শুরু হয়েছে। ভোক্তা সাধারণের পক্ষথেকে লিখিত অভিযোগ ও গণমাধ্যমে এ সংক্রান্ত খবর প্রকাশের জেরে গতকাল মঙ্গলবার ২৬ অক্টোবর ওএমএস কর্মসুচির অনিয়মের বিষয়টি জানতে ঘটনাস্থল চকরিয়া এসেছেন জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন চকরিয়া উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক তপন মল্লিক।

সংশ্লিষ্ট সুত্রের পরিসংখ্যান মতে, চকরিয়া পৌরসভার বিজয় মঞ্চ, ভাঙ্গারমুখ, থানা সেন্টার ও পালাকাটা স্টেশন পয়েন্টে রশিদ আহমদ, ইয়ার মোহাম্মদ, বেলাল উদ্দিন বিজু ও নুরুল হক নামের চারজন ডিলার ওএমএস কর্মসুচির চাল আটা বিপনণের দায়িত্ব পেয়েছেন। গত ২৫ জুলাই থেকে শুরু হয়ে চলতি অক্টোবর মাসের ২০ তারিখ পর্যন্ত দৈনিক ৬হাজার কেজি বা ছয় মেট্রিক টন করে চারজন ডিলার কমপক্ষে ৪৩৫ মেট্রিক টন চাল উত্তোলন করেছেন। আর দুপুরের পর মোকামে বিক্রি বন্ধ করে দিয়ে তাঁরা উল্লেখিত সময়ে অধৈকের বেশি অর্থ্যাৎ ২০০ মেট্রিক টন সরকারি মুল্যের ৩০ টাকা দামের চাল কালোবাজারে ৪০ থেকে ৪৫ টাকা দামে বিক্রি করে অন্তত ২০ লাখ টাকা হরিলুট করেছে।

অভিযোগ রয়েছে, চকরিয়া পৌরসভার চারটি পয়েন্টে ওএমএস চাল আটা বিক্রিতে নীতিমালা লঙ্ঘন হচ্ছে। পাশাপাশি যিনি চাল ক্রয় করতে আসবেন, তার টিপসই সংরক্ষন রাখার বাধ্যবাধকতা থাকলেও তা মানা হচ্ছেনা। পক্ষান্তরে ডিলাররা তৈরী করছেন টিপসই সংরক্ষন তালিকা। এছাড়া বরাদ্দ উত্তোলন ও বিপনণের ক্ষেত্রে চাহিদাপত্র দাখিলের নিয়ম থাকলেও তদারক কর্মকর্তাদের কাছে এসব বিষয় উপস্থাপন করা হচ্ছেনা।

অভিযোগ উঠেছে, উপজেলা খাদ্য অফিসের দাযিত্বশীল কর্মকর্তা তপন মল্লিকের যোগসাজশে দীর্ঘদিন ধরে এসব চাল আটা বিক্রিতে অনিয়ম চলে এলেও ডিলারদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। এমনকি নজরদারি না থাকায় গরিবদের জন্য বরাদ্দকৃত বেশিরভাগ চাল কালোবাজারে বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। এতে লাভবান হচ্ছেন অফিসের কর্মকর্তা ও কতিপয় ডিলাররা।

উপজেলা খাদ্য বিভাগ সুত্রে জানা গেছে, সরকারি নির্দেশনার আলোকে এসব ডিলার পয়েন্টে উত্তোলনকৃত চাল আটা সঠিকভাবে বিক্রি হচ্ছে কী না তা তদারক করতে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষথেকে চারজন কর্মকর্তাকে টেক অফিসার নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

তাদের মধ্যে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা বিভাগের একাডেমিক সুপারভাইজার রতন বিশ^াসকে চকরিয়া বিজয় মঞ্চ, উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা নাজমুল হোসেনকে ভাঙ্গারমুখ, আনসার ভিডিপি কর্মকর্তা গণেশ যাদবকে থানা সেন্টার ও উপজেলা পরিসংখ্যান কর্মকর্তা আমির হোসেন ইমনকে পালাকাটা পয়েন্টে তদারক কর্মকর্তা নিয়োগ দেন চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সৈয়দ সামসুল তাবরীজ।

সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানা গেছে, কার্যক্রম শুরুর প্রথমদিকে উল্লেখিত টেক অফিসাররা নির্ধারিত পয়েন্টে গিয়ে ওএমএস চাল আটা বিক্রি কার্যক্রম তদারক করলেও একমাসের বেশি সময় ধরে তাঁরা যথাসময়ে উপস্থিত থাকতে পারছেনা। এ সুযোগে ডিলাররা বরাদ্দের অধৈক পরিমাণ চাল আটা বিক্রি করে ‘ফুরিয়ে গেছে’ অজুহাতে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে প্রতিদিন দুপুরের পর বিক্রি কার্যক্রম বন্ধ করে দেন। এতে বেশিরভাগ ভোক্তা সাধারণ চাল আটা না পেয়ে ফেরত চলে যেতে বাধ্য হন। আর তাতে অবশিষ্ট থাকা চাল আটা বিক্রি করা হচ্ছে কালোবাজারে।

বিষয়টি প্রসঙ্গে জানতে চাইলে চকরিয়া উপজেলার ভারপ্রাপ্ত ইউএনও (সহকারি কমিশনার ভুমি) মো.রাহাত উজ-জামান চকরিয়া নিউজকে বলেন, ওএমএস কর্মসূচির চাল আটা বিক্রিতে টেক অফিসাররা দায়িত্ব পালন করছেন কী না তাদের সঙ্গে কথা বলা হবে। যদি বিক্রি কার্যক্রমে কোন ধরণের অনিয়ম হয়ে থাকলে তদন্তসাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

 

পাঠকের মতামত: