স্টাফ রিপোর্টার, কক্সবাজার :: দীর্ঘ ৬ বছর ১০ মাস পর কাল মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত হবে কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন ও কাউন্সিল। ইতিমধ্যে সম্মেলন ও কাউন্সিলের সব প্রস্তুতি শেষ হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ। জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ফরিদুল ইসলাম চৌধুরী জানান, পূর্বনির্ধারিত ১৩ই ডিসেম্বর জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন ও কাউন্সিলের আয়োজনের সব প্রস্তুতি শেষ হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জনসভার জন্য তৈরি করা শহীদ শেখ কামাল ক্রিকেট স্টেডিয়ামের মঞ্চেই সকাল ১০টায় এ সম্মেলন শুরু হবে। এর উদ্বোধক হিসেবে থাকবেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন। প্রধান অতিথি থাকবেন সাধারণ সম্পাদক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন কেন্দ্রীয় নেতা মাহবুব-উল আলম হানিফ, আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, সিরাজুল মোস্তফা, আমিনুল ইসলাম আমিন, বারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া।
জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, মেয়র মুজিবুর রহমান জানান, এবারের সম্মেলনে মোট ৩৫১ জন কাউন্সিলর থাকবেন। কাউন্সিলররা নতুন নেতৃত্ব নির্ধারণ করবেন। তবে কাউন্সিলের দ্বিতীয় অধিবেশন হবে কি হবে না, নতুন নেতৃত্বে কারা আসবেন তা নির্ভর করছে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের উপর। তিনি বলেন, ৭ই ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রীর যে জনসমাবেশ হয়েছে, তা অতীতের সব রেকর্ড ভেঙেছে।
এ সফলতা তাদের পরিশ্রমের ফসল। বর্তমান জেলা আওয়ামী লীগের নেতৃত্বের প্রতি শেখ হাসিনা সন্তুষ্ট জানিয়ে মেয়র মুজিবুর রহমান বলেন, তার নেতৃত্বকালীন সময়ে জেলা আওয়ামী লীগ অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে এখন সাংগঠনিকভাবে অনেক শক্তিশালী ও সুশৃঙ্খল সংগঠন। তিনি বলেন, জননেত্রী শেখ হাসিনার প্রতি তার পূর্ণ আস্থা রয়েছে। তিনিই তার কাজের যথাযথ মূল্যায়ন করবেন।
এদিকে দীর্ঘ সময় পর অনুষ্ঠিতব্য এ সম্মেলনকে ঘিরে নেতৃত্ব প্রত্যাশীরা নানান কৌশলে লবিং চালাচ্ছেন। নেতৃত্ব প্রত্যাশীদের প্রচার-প্রচারণা আগে থেকে দৃশ্যমান থাকলেও প্রধানমন্ত্রীর ৭ই ডিসেম্বরের কক্সবাজারে সফল জনসভার পর বদলে গেছে সমীকরণ। দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বর্তমান ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ফরিদুল ইসলাম চৌধুরী ভারমুক্ত হয়ে সভাপতি হতে ইচ্ছুক।
জেলা ও কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে তিনি সেভাবেই আগাচ্ছেন। বর্তমান সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক দু’পদের জন্যই উপযুক্ত নেতৃত্ব। তিনি যেকোনো একটি পদে আসবেন এমন প্রচারণা মাঠে আছে। সাংগঠনিক নেত্রী শেখ হাসিনা যে পদের জন্য তাকে মনোনীত করবেন, তিনি সে পদেই থাকবেন বলে জানান তার কর্মী সমর্থকরা।
সভাপতি পদে অপর পদ প্রত্যাশী হলেন সাবেক সাধারণ সম্পাদক সালাহ উদ্দিন আহমদ সিআইপি। সাধারণ সম্পাদক পদ প্রত্যাশীদের মধ্যে সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী হিসেবে বর্তমান যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট রণজিত দাশ জোর প্রচারণা চালাচ্ছেন।
এ ছাড়া জেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান সহ-সভাপতি রেজাউল করিমও জোর লবিং করে যাচ্ছেন। এ তালিকায় আরও আছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক, জেলা আওয়ামী লীগের প্রয়াত সভাপতি একেএম মোজাম্মেল হকের পুত্র মাশেদুল হক রাশেদ, সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুর রহমান, জেলা সদস্য রাশেদুল ইসলাম, ঈদগাহ সাংগঠনিক উপজেলার সভাপতি, সাবেক ছাত্রনেতা আবু তালেব।
জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট রণজিত দাশ জানান, জেলার সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী হিসেবে ২ বছর ধরে কাজ করছেন তিনি। দীর্ঘ তিন যুগ ধরে রাজনীতির মাঠে সময় দিচ্ছেন তিনি। জেলা ছাত্রলীগ ও জেলা যুবলীগের দায়িত্ব পালন করেছেন, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন। তাই সাধারণ সম্পাদক পদের জন্য তিনিই যোগ্য দাবিদার বলে জানান এই নেতা। একই কথা বলেন, রেজাউল করিম। তার মতে, যৌবনের স্বর্ণালী সময়গুলো আওয়ামী লীগের জন্য ব্যয় করেছি। কেন্দ্রীয় কৃষক লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকসহ তিনি সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করে আসছেন। তাই তার ত্যাগ ও পরিশ্রমের মূল্যায়ন নেত্রী এবার করবেন বলে আশাবাদী এ নেতা।
আওয়ামী লীগ নেতা রাশেদুল ইসলাম জানান, তিনি আওয়ামী লীগের দুর্দিনের কর্মী। আওয়ামী লীগের ক্ষমতার ১৪ বছরে তিনি ভোগ-বিলাসে ছিলেন না। আওয়ামী লীগ ও নেত্রীর বদনাম হয় এমন কোনো কাজ তিনি করেননি। জেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান কমিটির বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে যেমন তথ্য আছে, তেমনি আমার ব্যাপারেও তিনি জানেন।
বর্তমান কমিটিতে পরিবর্তন আনবেন বলে তার ধারণা। এই পরিবর্তনে যুক্ত হতে পারে তার নাম, এমন আশা পোষণ করেন তিনি। রাশেদুল ইসলাম বলেন, তিনি সাধারণ সম্পাদক পদ প্রত্যাশী হলেও ১৩ই ডিসেম্বর সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী যাকে দায়িত্ব দেবেন তিনি মাথা পেতে মেনে নেবেন। প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত বলে জানান তিনি।
জানা গেছে, সর্বশেষ বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কক্সবাজার জেলা শাখার ত্রিবার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় ২০১৬ সালের ২৮শে জানুয়ারি। সম্মেলন অনুষ্ঠিত হওয়ার সাড়ে ৮ মাস পর ১৩ই অক্টোবর ৭১ সদস্যবিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ জেলা কমিটি অনুমোদন দেন দলের সভাপতি শেখ হাসিনা ও সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। ওই সম্মেলনের মধ্যদিয়ে মনোনীত সভাপতি সিরাজুল মোস্তফা ও সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বাধীন কমিটি প্রায় ৫ বছর দায়িত্ব পালনের পর দলের সভাপতি শেখ হাসিনার নির্দেশে ওই কমিটিতে আসে নাটকীয় পরিবর্তন। দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা ২০২০ সালের ২৫শে নভেম্বর জেলা কমিটির সভাপতি সিরাজুল মোস্তফাকে কেন্দ্রীয় কমিটির ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক করেন। এরপর থেকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন ফরিদুল ইসলাম চৌধুরী।
পাঠকের মতামত: