ঢাকা,সোমবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৪

৫ বছর পর যে কথা শোনালেন তদন্ত কর্মকর্তারা

52c3addf90a7553b433cd7a5a5655d24-56e29f5e97022বাংলা ট্রিবিউন:

সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডসাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের পাঁচ বছর পার হতে চলেছে। কিন্তু চাঞ্চল্যকর এই হত্যাকাণ্ডের কোনও কূল-কিনারা হয়নি। তদন্তের গন্তব্য কোন পথে সেটাও জানা যায়নি। তদন্ত সংস্থা কয়েক দফা বদল করা হয়েছে। আলামত, স্বজন ও সন্দেহভাজনদের ডিএনএ প্রতিবেদনও তদন্ত সংস্থার হাতে রয়েছে। আদালতের কাছ থেকে ৪৬ বার সময় নিয়েছে তদন্ত সংস্থা র‌্যাব। তারপরও তারা তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে পারেনি।

সর্বশেষ বুধবার (৮ ফেব্রুয়ারি) এ মামলার তদন্তের অগ্রগতি প্রতিবেদন জমা না দেওয়ায় মহানগর হাকিম আদালতের বিচারক আগামী ২১ মার্চ এ মামলার পরবর্তী তারিখ ধার্য করেছেন। হত্যাকাণ্ডের মোটিভ, ডিএনএ পরীক্ষায় কাউকে চিহ্নিত করা গেছে কিনা এবং তদন্তের অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চাইলে তদন্ত সংস্থা র‌্যাবের কর্মকর্তারা বলছেন, সবদিক মাথায় রেখে তারা তদন্ত করছেন। তদন্ত শেষ হলে গণমাধ্যমকে বিস্তারিত জানানো হবে। এর বাইরে আর কোনও তথ্য দিতে রাজি হননি তারা।

২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি ভোর রাতে রাজধানীর পশ্চিম রাজাবাজারের বাসায় খুন হন সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি। ঘটনার একমাত্র প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে বেঁচে আছে তাদের একমাত্র শিশু পুত্র মাহি সরওয়ার মেঘ। ঘটনার সময় মেঘের বয়স ছিল সাড়ে পাঁচ বছর। বর্তমানে সে তার নানী নুরুন নাহার মির্জার সঙ্গে থাকছে। বর্তমানে রাজধানীর একটি ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ছে সে। গত মঙ্গলবার মা-বাবা সম্পর্কে স্মৃতি চারণ করতে বললে কিছুক্ষণ নিশ্চুপ থাকে সে। পরে ‘জানিনা’ বলে চলে যায়।

ঘটনার পরপরই তখনকার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে খুনিদের গ্রেফতারের ঘোষণা দেন। সন্দেহভাজন হিসেবে বাসার দারোয়ানসহ কয়েকজনকে এ মামলায় গ্রেফতার দেখানো হলেও খুনিরা আজও ধরা পড়েনি। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ৪৮ ঘণ্টা সময়-সীমা পার হওয়ার পর ১৩ ফেব্রুয়ারি তখনকার আইজি হাসান মাহমুদ খন্দকার সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, এ জোড়া হত্যাকাণ্ডের তদন্তে ‘প্রণিধানযোগ্য’ অগ্রগতি হয়েছে। কয়েকদিন পর ২৬ ফেব্রুয়ারি তখনকার ডিসি ডিবি ও ডিএমপি’র মুখপাত্র এবং বর্তমানে কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের প্রধান অতিরিক্ত কমিশনার মনিরুল ইসলাম বলেছিলেন, হত্যাকাণ্ডের মোটিভ সম্পর্কে তারা নিশ্চিত হয়েছেন। দ্রুততম সময়ে আসামিদের গ্রেফতার করে সাংবাদিকদের সামনে হাজির করা হবে বলেও জানিয়েছিলেন।

মনিরুল ইসলামের এ বক্তব্যের দু’দিন পর ২৮ ফেব্রুয়ারি খুনিদের আইনের আওতায় আনার নির্দেশ দিয়ে কারণ দর্শানোর নোটিশ জারি করেন হাইকোর্ট। ঘটনার প্রায় দু’মাস পর ২০১২ সালের ১৮ এপ্রিল হাইকোর্টে হাজির হয়ে সাগর-রুনি তদন্তে তারা ব্যর্থ হয়েছেন বলে স্বীকার করেন মনিরুল ইসলাম। ওইদিনই উচ্চ আদালত র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নকে (র‌্যাব) তদন্তের দায়িত্ব দিয়ে র‌্যাবের ডিজি র‌্যাবকে নির্দেশ দেন, একজন সুদক্ষ, অভিজ্ঞ এবং এএসপি পদমর্যাদার নীচে নয় এমন একজন কর্মকর্তাকে দিয়ে এ মামলার তদন্ত করাতে।

হাইকোর্টের নির্দেশনার পর র‌্যাবের আবেদনে ভিসেরা রিপোর্টের জন্য ২৬ এপ্রিল সাগর-রুনির লাশ কবর থেকে তুলে পুনরায় ময়নাতদন্ত করা হয়। একই বছরের ৩০মে এটিএন বাংলার চেয়ারম্যান মাহফুজুর রহমান লন্ডনে সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ড নিয়ে কিছু বক্তব্য দেন। এরপর তার বক্তব্য নিয়ে অনেক আলোচনা-সমালোচনা হয়।

সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের পর মেহেরুন রুনির ভাই নওশের রোমান ও মা নুরুন নাহার মির্জা এবং সাগর সরওয়ারের মা সালেহা মনিরসহ দুই পরিবারের অনেক সদস্যকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। র‌্যাবের হাতে তদন্তের দায়িত্ব যাওয়ার পরও এ পর্যন্ত তিনবার তদন্ত কর্মকর্তা বদলানো হয়েছে। তবে র‌্যাবের তদন্ত ইউনিটের কর্মকর্তারা এ মামলার তদন্ত তদারকি করছেন।

রুনির ভাই নওশের রোমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘শুরুর দিকে জিজ্ঞাসাবাদের নামে তাদের সঙ্গে অনেক অনাকাঙ্ক্ষিত আচরণ করা হয়েছে। তখন তাদের জিজ্ঞাসাবাদে মনে হতো তারা আমাকেই সন্দেহ করছেন। যা ছিল এক ধরনের মানসিক নির্যাতনের মতো।’

মেহেরুন রুনির ভাই নওশের বলেন, ‘র‌্যাব আসলে কোনও তদন্তই করছে না। তাদের কর্মকাণ্ডও প্রশ্নবিদ্ধ। র‌্যাবে যাওয়ার পরও তিনজন তদন্ত কর্মকর্তা বদল হয়েছে। কতো ঘটনা পুলিশ ও র‌্যাব তদন্ত করছে। খুনিদের ধরছে। অথচ সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের কোনও সুরাহা হচ্ছে না। এ নিয়ে তদন্ত সংস্থা কিংবা সরকারের প্রতি সাংবাদিক নেতাদেরও কোনও চাপ নেই।’

তার মতে, ‘অদক্ষতার কারণে মামলাটির তদন্তে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তদন্তের জন্য মামলাটি এখন সিআইডিকে দেওয়া উচিৎ। তারা যদি কিছু করতে পারে। এ পর্যন্ত র‌্যাব আদালতের কাছ থেকে ৪৬ বার সময় নিয়েছে।’

নওশের বলেন, ‘র‌্যাব থেকে মাঝে-মধ্যে খোঁজ নেওয়া হয়। জানতে চাওয়া হয় আমার মা কেমন আছেন। আমার মা কিংবা আমরা কেমন আছি জানার প্রয়োজন নেই। তার চেয়ে বেশি জরুরি সঠিক তদন্ত ও এ হত্যাকাণ্ডের বিচার।’

মেহেরুন রুনির মা নুরুন নাহার মির্জার কাছে মেয়ে ও মেয়ে জামাইয়ের হত্যাকাণ্ডের তদন্ত ও বিচার বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলা ট্রিবিউনকে তিনি বলেন, ‘ঘটনার পাঁচ বছর পার হলো। কিছুইতো হলো না। তাই কিছুই বলার নাই। এখন এসব ভুলে যেতে চাই। মনে হলে অসুস্থ হয়ে পড়ি। আর ভালো লাগে না ।’

তদন্তের অগ্রগতির বিষয়ে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) মহিউদ্দিন আহমেদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ডিএনএ ও আলামতগুলোর ফরেনসিক রিপোর্ট তারা হাতে পেয়েছেন। সবদিক বিবেচনায় রেখেই তারা তদন্তকাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।’ কবে নাগাদ তদন্ত শেষ হতে পারে জানতে চাইলে তিনি বলেন,‘দ্রুত শেষ করার জন্য তারা কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। শেষ হলেই বিষয়টি গণমাধ্যমকে জানানো হবে।’

এদিকে বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেছেন, ‘র‌্যাব এ মামলার তদন্ত করছে। তবে এই মুহূর্তে তদন্তের অগ্রগতি কী, সেটা আমার জানা নেই।’

পাঠকের মতামত: