ঢাকা,বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪

স্বর্ণের দোকানের আড়ালে স্বর্ণ ও মুদ্রা পাচার উখিয়ায়

রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ১৫ কিলোমিটারে দেড় শতাধিক দোকান, অনুমোদন নেই অনেকের

উখিয়া প্রতিনিধি :::     কুতুপালং থেকে বালুখালী পর্যন্ত প্রায় ১৫ কিলোমিটারের মধ্যে গত এক বছরে গড়ে উঠেছে অন্তত দেড় শতাধিক স্বর্ণের দোকান। এসব এলাকার কোন কোন স্থানে আগে স্বর্ণের দোকান ছিল না। সেখানে বর্তমানে অলি–গলিতে চোখে পড়ার মতো স্বর্ণের দোকান। এসব স্বর্ণের দোকানের আড়ালে মূলত রোহিঙ্গাভিত্তিক ইয়াবা, স্বর্ণ ও মুদ্রা পাচার ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট মিয়ানমারের সাথে স্বর্ণ ও আমেরিকান ডলার পাচার করে চলছে বলে খবর পাওয়া গেছে। স্থানীয় প্রশাসন, জেলা প্রশাসন, বিস্ফোরক বা পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমোদন ছাড়া বেআইনিভাবে এসব স্বর্ণের দোকান পরিচালিত হচ্ছে।

স্থানীয় সচেতন ব্যক্তিরা উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন যে ভাবে রোহিঙ্গা ক্যাম্প সংলগ্ন হাট বাজার গুলোতে ও ক্যাম্প অভ্যন্তরে ছোট বড় দোকান পাট খুলে রোহিঙ্গারা ব্যবসা শুরু করেছে তা কতটুকু আইনানুগ। পালংখালী ইউপি চেয়ারম্যান এম গফুর উদ্দিন চৌধুরী বলেন, স্থানীয় লোকজনের কেউ একটি ছোট ব্যবসা বা দোকান করতে গেলে তাকে দোকানের সালামি, ভাড়া, ট্রেড লাইসেন্স, ভ্যাট, আইকর সহ কত আইনের মধ্যে পড়তে হয়। আর কথিত উদ্বাস্তু রোহিঙ্গারা এসবের কোন কিছু তোয়াক্কা না করে যে ভাবে শত শত দোকান করছে অবাধে তা কতটুকু বৈধ তা দেখার কেউ নেই। বিশেষ করে রোহিঙ্গা শিবির কেন্দ্রিক স্থানীয় কিছু পুরনো কালোবাজারি ও রোহিঙ্গা গডফাদাররা মিলে একাকার হয়ে স্বর্ণের দোকানের আড়ালে মিয়ানমারের সাথে বেআইনি ভাবে গোপনে অবৈধ ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে।

মিয়ানমার থেকে স্বর্ণ, ইয়াবা এনে বাংলাদেশ থেকে আমেরিকান ডলার ও বাংলাদেশি মুদ্রা পাচার করছে তা খুবই উদ্বেগজনক। কোটবাজার বণিক সমিতির সভাপতি আদিল উদ্দিন চৌধুরী বলেন, রোহিঙ্গারা যে ভাবে ছোট বড় সব ধরনের ব্যবসায় নিয়োজিত হয় পড়ছে তাতে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা চরম ভাবে আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। অবিলম্বে এসব কথিত উদ্বাস্তু রোহিঙ্গাদের অবৈধ ও বেআইনি ব্যবসা দ্রুত বন্ধ করা প্রয়োজন। সরেজমিনে উখিয়ার কুতুপালং, লম্বাশিয়ায় অন্তত শ’খানেক স্বর্ণের দোকান, বালুখালী পান বাজার থেকে বালুখালী–১ ক্যাম্পের রাস্তার দু’পাশে প্রায় তিনশ মিটার এলাকার মধ্যে ২৫টির মত স্বর্ণের দোকান দেখা গেছে। এসব দোকানের বেশ কিছু বন্ধ রাখতেও দেখা গেছে।

স্থানীয় গ্রাম পুলিশ গিয়াস উদ্দিন বলেন, কয়েকদিন আগে উখিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার এসে এসব স্বর্ণের দোকান গুলোর জেলা প্রশাসনের লাইসেন্স না হওয়া পর্যন্ত বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছেন । এরপরও অনেকে এসব না মেনে দোকান চালিয়ে যাচ্ছে। বালুুখালীতে মৃদুল কর্মকার, প্রিয়গঙ্গা জুয়েলার্স, এ–এ স্বর্ণকার, বার আউলিয়ার, পিজে স্বর্ণাকার , বাবু স্বর্ণকার, মহা মায়া জুয়েলার্স সহ বেশ কিছু স্বর্ণের দোকানদাররা বলেছেন, তারা অনেকদিন ধরে এখানে ব্যবসা করে যাচ্ছে। তবে উখিয়া ইউএনও বলার পরে কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের অফিস থেকে লাইসেন্সের জন্য আবেদন করার চেষ্টা করা হচ্ছে। কাগজপত্র ছাড়া দোকান খুলতে নিষেধ করলেও কেন খুলেছে তার কোন জবাব কেউ দিতে পারেনি। ২০১৭ সালের পূর্বে উখিয়ার কুতুপালং, থাইংখালী ও পালংখালী বাজারে হাতে গোনা কয়েকটি ছোট খাট স্বর্ণের দোকান ছিল।

২০১৭ সালে ব্যাপক হারে মিয়ানমার থেকে রোহিঙ্গা উদ্বাস্তু আসায় উখিয়ার কুতুপালং, বালুখালী, লম্বাশিয়া, থাইংখালী, ময়ানার ঘোনা, তাজনিমার খোলা , মধুর ছড়া, হাকিম পাড়া, জামতলী সহ বিভিন্ন রোহিঙ্গা শিবির এলাকায় গড়ে উঠেছে দেড় শতাধিক অবৈধ স্বর্ণের দোকান। এসব এলাকায় নয় লক্ষের মত রোহিঙ্গার বসবাস। আশ্রয় শিবিরে প্রথম প্রথম আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের দেখে মনে হয়েছিল তারা শুধুই এক কাপড়ে আসলেও সাথে কিছুই আনতে পারেনি। কিন্তু এক বছরের ব্যবধানে রোহিঙ্গাদের অনেকে নানা ভাবে ঘুরে দাড়িয়েছে। তাদের মধ্যে গত এক বছরে রাখাইনে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর চালানো নারকীয় তান্ডবের তেমন কোন ভাব লেশ এখন আর লক্ষ্য করা যায় না। অনেকে টমটম ও সিএনজি অটোরিক্সা ভাড়া দিয়েছে কেউ নিজেরা চালাচ্ছে।

রোহিঙ্গাদের মাঝে স্বর্ণ বেচাকেনার বেশ ধুম লক্ষ্য করা গেছে। রোহিঙ্গাদের একটি পক্ষ বলেছে মিয়ানমারে যেসব প্রভাবশালী গডফাদাররা ইয়াবা, স্বর্ণ, ডলার ও হুন্ডির টাকা পাচার করত তাদের প্রায় সকলে এখানে এসেও একই কাজে নেমে পড়েছে।

উখিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ নিকারুজ্জামান চৌধুরী বলেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ভিতরে ও আশপাশে প্রচুর সংখ্যক স্বর্ণের দোকানের হদিস পাওয়া গেছে। কয়েকদিন পূর্বে বালুখালী ও কুতুপালংয়ে এ ধরনের বেশ কিছু দোকানে বৈধ কোন কাগজপত্র না পাওয়ায় জেলা প্রশাসনের ব্যবসা শাখা থেকে লাইসেন্স না করা পর্যন্ত এসব দোকান বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

জেলা প্রশাসনের লাইসেন্সের অনুবলে বাংলাদেশী ব্যবসায়ীরা স্বর্ণের দোকান বা যে কোন ধরনের ব্যবসা পরিচালনা করতে পারে। এ ব্যাপারে যেসব দোকান এখনো কোন কাগজপত্র বা লাইসেন্স করতে পারেনি তাদের ব্যাপারে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে তিনি জানান।

পাঠকের মতামত: