ঢাকা,শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪

সিভিল সার্জনের অনিয়মের তদন্ত শুরু

dr-posnoকক্সবাজার সংবাদদাতা :::
ককসবাজার সিভিল সার্জন অফিসে গোপনে গ্যাভি এবং এমএসআর টেন্ডার বানিজ্য,গোপনে নিয়োগ কেলেঙ্কারি সহ নানা অনিয়মের অভিযোগে সদ্য যোগদান করা সিভিল সার্জন ডাঃ পুচানোর বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত শুরু করেছে তদন্ত টিম,গত ৭ই জুন এ টিমের সদস্য চট্রগ্রাম সিভিল সার্জন ডাঃ মোহাম্মদ আজিজুর রহমান সিদ্দিকী, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের উপ পরিচালক ও চট্রগ্রাম হিসাব রক্ষক, ককসবাজার সিভিল সার্জন কার্যালয়ে এসে তদন্ত কার্যক্রম তদারকি করে যান।

গত ২৩ মে ককসবাজারের সর্বাধিক পঠিত নিউজ পোর্টাল ককসবাজার নিউজে এক অনুসন্ধানী রির্পোটে সিভিল সার্জনের টেন্ডার বানিজ্য নিয়ে নানা অনিয়মের খবর প্রকাশিত হলে, অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে বিভাগীয় তদন্ত টিম সিভিল সার্জনের ডাঃ পুচানোর বিরুদ্ধে তদন্তে নামেন।

তদন্ত সংশ্লিষ্ট স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এক উপপরিচালক নাম প্রকাশ না করার স্বার্থে বলেন,আমরা প্রথম দিন অভিযুক্ত ককসবাজার সিভিল সার্জন ডাঃ পুচানোর বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের সন্ধান পেয়েছি।তবে তদন্তের স্বার্থে গনমাধ্যমকে কিছু প্রকাশ করতে পারছেনা বলে দুঃখ প্রকাশ করেন তিনি।

এ বিষয়ে জানতে জেলা সদর হাসপাতাল ছাড়াও আটটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসকদের মৌখিকভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করলেও সিভিল সার্জন অফিসের হিসাব রক্ষক ও অন্যান্য কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য যুক্তিযুক্ত হলেও তা এড়িয়ে যান কর্মকর্তারা আর এ এড়িয়ে যেতে কাজ করেছে ককসবাজার সিভিল সার্জনের অদৃশ্য হাত।

জেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসক আরএমও ডা. সোলতান সিরাজির সাথে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান,স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তদন্ত দল সিভিল সার্জনের টেন্ডার বানিজ্য ও নানা অনিয়ম দুর্নীতির বিষয়ে তদন্তে এসেছিলো ৭ই জুন শুনেছেন। তবে তার কাছে কোন তথ্য চাওয়া হয়নি তবে নানা পত্র-পত্রিকা ও অনলাইন মিডিয়ার মাধ্যমে এ বিষয়ে যতদূর জানতে পেরেছে ততটুক বলে জানেন তিনি।

এক সময়ের দায়িত্বরত ভারপ্রাপ্ত সিভিল সার্জন ডা. মহি উদ্দিন মোহাম্মদ আলমগীরের সাথে এ বিষয়ে জানতে চাইলে আমাদের ক্রাইম রিপোর্টারকে বলেন, ১৫ই মে এমএসআর ও ১৮ই মে গ্যাভি টেন্ডার বানিজ্য মর্মে নিউজে পড়েছেন তিনি। তবে তিনিও স্বীকার করেন ককসবাজার সিভিল সার্জন অফিস একটা সিন্ডিকেটে বন্দি,নানা অনিয়ম ও ঘুষ বাণিজ্যে সহ নানা অনিয়মে এ সিন্ডিকেট জড়িত থাকার বিষয়টি তিনি দায়িত্বকালে টের পেয়েছেন বলে জানান।

এদিকে কিছুদিন আগে অনেকটা গোপনে টেন্ডার হওয়া দুটি প্রকল্পের একটি ঢাকার মায়ের দোআ গ্রুপ সহ অন্যান্য কোম্পানির কাছ থেকে প্রায় ৩০লক্ষ টাকা গোপন বানিজ্য হয়েছে বলে খবর প্রকাশিত হলে সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয় ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের টনক নড়ে এবং সিভিল সার্জনের বিরুদ্ধে ঘটিত বিভাগীয় তদন্ত টিম তার দুর্নীতির প্রমাণ পায় বলে জানান অফিসের এক কর্মকর্তা।

স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা মন্ত্রনালয় সহ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সদস্যদের তদন্ত কমিটির তদন্তে দুর্নীতির প্রমাণ পাওয়ায়,তড়িগড়ি করে সরকারের উচ্চমহলে তা ধামাচাপা দিতে ককসবাজারের সিভিল সার্জন ডাঃ পুচানো বড় অংকের টাকার মিশনে মাঠে নেমেছেন বলে ও জানা যায়।

পর্যটননগরী ককসবাজারে যোগদানে পর থেকেই সিভিল সার্জন ডাঃ পুচানোর ও সিনিয়র স্বাস্থ্য শিক্ষা কর্মকর্তা উচাফ্রু মারমা ঘটিত সিন্ডিকেটে লাখ লাখ টাকার টেন্ডার বানিজ্য ও নানা অনিয়ম-দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েছেন বলে জানান অফিসের এক কর্মচারী। তিনি আরো জানান,যেকোন মুহুর্তে কক্সবাজার সিভিল সার্জন অফিসে বড় ধরনের দুর্ঘটনা বা অনাকাংকিত ঘটনা ঘটার সম্ভবনা রয়েছে,যেহেতু দীর্ঘদিনের চাপা ক্ষোভ, ক্রোধে পরিনত হচ্ছে বলে ধারনা করেন তিনি।

গোপনসুত্রে জানা যায়,ককসবাজার সিভিল সার্জন ডাঃ পুচানো ও সিনিয়র স্বাস্থ্য শিক্ষা কর্মকর্তা উচাফ্রু মারমা নানা প্রভাব খাটিয়ে নিয়োগ, গোপনে টেন্ডার বানিজ্য, বদলি বাণিজ্য, বিনা টেন্ডারে অবৈধভাবে সরকারি ওষুধ বিক্রি ও অর্থ লুটপাটসহ বিভিন্ন কেলেংকারির বিষয়ে একাধিকবার স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে তদন্ত কমিটি গঠন করা হলেও অদৃশ্য কারণে এসব তদন্তে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি সিনিয়র স্বাস্থ্য শিক্ষা কর্মকর্তা উচাফ্রুর উপর।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদফতরকে ম্যানেজ করে বিনা টেন্ডারে কোটি টাকার গ্যাভি ও এমএসআর টেন্ডারে ওষুধ, যন্ত্রপাতি, আসবাবপত্রসহ বিভিন্ন উপকরণ ক্রয় করার সুযোগ দেয় উক্ত সিন্ডিকেট । এদুটি টেন্ডার নিয়ে নানা আপত্তি উঠলেও উক্ত সিন্ডিকেট গ্রুপ কোন তোয়াক্কা করেননি। এছাড়া নিয়মিত অফিস না করারও অভিযোগ দীর্ঘদিনের সিনিয়র স্বাস্থ্য শিক্ষা কর্মকর্তার।

অভিযোগ রয়েছে, এখতিয়ার বহির্ভূত হলেও প্রতি বৃহস্পতিবার সরকারি গাড়ি নিয়ে বান্দরবন রাঙ্গামাটি ঘুরতে যান। রোববার দুপুরে দফতরে আসেন।অনেকবার বিনা টেন্ডারে ওষুধ ও অন্যান্য মালামাল ক্রয়ের ঘটনা জানাজানি হলে সংশ্লিষ্ট মহলে তোলপাড় শুরু হয়েও ধামাচাপা দেয়। ওই সূত্র জানায়, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের কতিপয় অসাধু কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে প্রায় সময় ক্রয় করেছেন।

এ কেনাকাটার ক্ষেত্রে পাবলিক প্রকিউরমেন্ট রুলের (পিপিআর) বিধানাবলী অনুসরণ করা হয়না। সরকারের ক্রয় নীতিমালা অর্থাৎ পিপিআর অনুসারে সরকারি কেনাকাটার ক্ষেত্রে উন্মুক্ত দরপত্র কিংবা লোকাল টেন্ডার মেথড (এলটিএম) ছাড়াই হিসাব শাখার অজান্তে সব হচ্ছে বলে জানা যায়।তাহলে সরকার সাংবিধানিক নিয়মে অফিসে হিসাবরক্ষক শাখা কেন রাখলেন তা প্রশ্নবিদ্ধ। সিভিল সার্জন ডাঃ পুচানো ২০১৬সালে বিনা টেন্ডারে ১কোটি ১২লক্ষ টাকার গ্যাভি,৬২লক্ষ টাকার এমএসআর প্রকল্পের মায়ের দোআ নামের একটি প্রতিষ্ঠানের প্যাড দেখিয়ে উল্লেখিত টেন্ডার সম্পন্ন হয়েছে বলে নথিপত্রে দেখায়।

এছাড়া ও ককসবাজার সিভিল সার্জন অফিসে বিগত অর্থবছরে বিনা টেন্ডারে যন্ত্রপাতি, লিলেন আসবাবপত্র, গজ-ব্যান্ডেজ, বিএজেন্ট (ক্যামিকেল) ইত্যাদি ক্রয় করা হয়। এ খাতে মন্ত্রণালয় থেকে ২৭ লাখ ৭৯ হাজার টাকা এবং স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে ৮৯ লাখ ৩১ হাজার ৯২৮ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হলেও গড়মিল।বিনা টেন্ডারে সিভিল সার্জন অফিসে মালামাল ক্রয়ের বিষয়ে জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদফতরের চট্টগ্রাম বিভাগীয় পরিচালক ডা. আলাউদ্দিন মজুমদার বলেন, এ ব্যাপারে পুর্বের সিভিল সার্জন কিছুই অবহিত করেননি।

অন্যদিকে এসব গোপন বানিজ্যে জড়িত রয়েছে বলে অভিযোগ ওঠে, স্বয়ং সিভিল সার্জন সহ সংশ্লিষ্ট অফিসের একটি সিন্ডিকেট গ্রুপের।যেখানে অনিয়মের মূল হোতা হিসেবে রয়েছেন ডাঃ পুচানো, সিনিয়র স্বাস্থ্য শিক্ষা কর্মকর্তা উচাপ্রু মারমা,তাপস কুমার বড়ুয়া,অংচাপ্রু, ইমং প্রু (বিশ্ব স্বাস্থ্যের কর্মকর্তা)।উল্লেখ্য উচাপ্রু মারমা সিনিয়র স্বাস্থ্য ও শিক্ষা কর্মকর্তা হিসাবে জেলার সমস্ত মাঠ পর্যায়ে কাজ করার কথা থাকলেও অনেকটা নিষ্ক্রিয় মাঠে, অনেকটা সক্রিয় টেন্ডার বানিজ্যে।

এছাড়া ও দীর্ঘদিন যাবৎ সরকারের যুক্তি ভিক্তিক who সঃস্থার বেসরকারী কর্মচারীরা, সরকারী এ জনহিতকর সিভিল সার্জন অফিসকে এক প্রকার জিম্মি করে রেখেছে উচাফ্রু মারমা সিন্ডিকেট গ্রুপ।যার ধারাবাহিকতায় পুর্বের সিভিল সাজর্ন কমর উদ্দিন,ভারপ্রাপ্ত ডাঃ মহি উদ্দিনকে নাজেহাল করে ফাসিয়ে দেয় উক্ত সিন্ডিকেট। সরকারী টেন্ডারে বিধি বিধান থাকলেও কুল টেইন টেকনিশিয়ান পদস্থ সামান্য কর্মচারী তাপস কুমার বড়ুয়ার মাধ্যমে গ্যাভি টেন্ডার প্রক্রিয়াদি সম্পন্ন করে গোপনে।

যা বাংলাদেশের কোন সিভিল সার্জন অফিসে হয়নি এবারের টেন্ডারে।বিধি মোতাবেক হিসাব শাখায় সব কাজ সম্পন্ন করে হিসাব রাখে,কিন্তু ককসবাজার সিভিল সার্জন ভিন্ন পথে। নিয়ম অনুযায়ী সিভিল সার্জনের হিসাব শাখা সকল হিসাব,তথ্য উপাত্ত,সিডিউল দেওয়া নেওয়া টেন্ডার বিষয়ে সকল কোডের হিসাব রাখার বিধান থাকলেও সিভিল সার্জন অফিসের হিসাব শাখা কিছুই জানেনা।এমনকি রহস্যজনক কারনে হিসাব শাখায় কোন তথ্য নেই গত দুমাসে বিভিন্ন ট্রেনিং এর ভাতা ও খরচে বাবদে বিবিধ ৮লক্ষ টাকার।কারন হিসাবে জানা যায়,সিনিয়র স্বাস্থ্য শিক্ষা কর্মকর্তা উচাফ্রু মং সরাসরি হিসাব শাখার বিনা হিসাবে সিভিল সার্জনের কাছ থেকে চেক পাশ করে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে দীর্ঘ ১৩ বছর।

কোন সিভিল সার্জন তার লাইনে না আসলে তাকে নানা কৌশলে ফাসিয়ে দেয় এই সিন্টিকেট।অফিসের সমস্ত কাজ ৯৯% দখলে রেখেছে সিভিল সার্জন অফিস তারা সকলে মিলে। অনেক সংবাদ কর্মী এ বিষয়ে তথ্য চাইলে কোন সঠিক তথ্য দিতে ব্যর্থ হন স্বাস্থ্য কর্মকর্তা।

এ বিষয়ে চট্রগ্রাম বিভাগীয় সিভিল সার্জন ডাঃ আজিজুর রহমান ছিদ্দিকী অনিয়ম তদন্তের কথা স্বীকার করে জানান,তদন্ত রিপোর্ট তিনি সংশ্লিষ্ট উচ্চ পর্যায়ে পাঠিয়েছেন তারাই ব্যবস্থা নেবে।তবে অনিয়মের বিস্তারিত বলতে তিনি রাজি হন নি।

অপরদিকে পুরা বিষয় সম্পর্কে জানতে চাইলে ককসবাজার সিভিল সার্জন ডাঃ পুচানো অস্বীকার করে জানান,গত ৭ই জুন বিভাগীয় তদন্ত টিম অফিসের কিছু নিয়ম মাফিক কাজ তদারকি করার জন্য এসেছেন কোন অনিয়ম তদন্ত নয় বলে ফোনের লাইন কেটে দেন।

সবশেষে সিভিল সার্জনের টেন্ডার বানিজ্য বিষয়ে ককসবাজার সদর আসনের সংসদ সদস্য সাইমুম সরোয়ার কমলের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে তিনি জানান,২টি টেন্ডার নিয়মতান্ত্রিক ভাবে হয়নি বিধায় তা বাতিল করার নির্দেশ দিয়েছেন সিভিল সার্জনকে,এবং উক্ত বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অবহিত করেছেন। তবে এখনো বাতিলের বিষয়ে কার্যকর কোন ভূমিকা দেখা যাচ্ছেনা বলে জানান টেন্ডার বন্জিত মালিকেরা।

জেলার সিভিল সার্জন অফিসটি ১৯৮৪ সাল থেকে ঐতিহ্যগত ভাবে জেলাবাসীর স্বাস্থ্য সেবায় ভুমিকা পালন করার লক্ষ্যে, সিভিল সার্জন এর আওতাধীন স্বাস্থ্য সেবা , ২৫০, শয্যা , ৫০শয্যা, ৩১ শয্যা, ও ১০ শয্যা বিশিষ্টহাসপাতাল , ইউনিয়ন উপ স্বাস্থ্য,কেন্দ্র ও কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে বহিঃ বিভাগ ও অন্তঃ বিভাগ এবং জরুরী বিভাগ থেকে সেবাপ্রদান করার নিমিত্তে ।

আদৌও কি সত্যিই জেলাবাসী তাদের নাগরিক সুযোগ সুবিধা পাচ্ছে নাকি বারবার লুন্ঠিত হচ্ছে তাদের এই মৌলিক অধিকার কিছু অসাধু কর্মকর্তাদের অনিয়মে।

পাঠকের মতামত: