ঢাকা,বুধবার, ৬ নভেম্বর ২০২৪

সন্তানের সঙ্গে মায়ের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ার আহ্বান প্রধামন্ত্রীর

অনলাইন ডেস্ক ::Pm
সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে তার জিরো টলারেন্স নীতি পুনর্ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সন্তানের সঙ্গে মায়েদের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে। যাতে করে আর কেউ সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ ও মাদকাসক্তির পথে না যায়। সন্তানের জন্য সব থেকে বড়ো বন্ধু হবেন ‘মা’। মা’য়ের কাছে সন্তান যেন নির্দ্বিধায় তার যে কোন সমস্যার কথা বলতে পারে সেই ধরনের সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে। এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ শনিবার রাজধানীর ফার্মগেটস্থ বাংলাদেশ কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে বাংলাদেশ মহিলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত বিশেষ সম্মেলনে প্রধান অতিথির ভাষণে এসব কথা বলেন।

শেখ হাসিনা বলেন, একটা কথা মা-বোনদের বলে রাখি- বাংলাদেশে সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদের কোন স্থান নাই। মাদকাসক্তি থেকে সন্তানদের রক্ষা করতে হবে। এ জন্য সবাইকে সজাগ থাকতে হবে এবং যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে। আর ছেলে-মেয়েরা যেন লেখাপড়া শিখে মানুষের মত মানুষ হয় সেদিকে দৃষ্টি দিতে হবে। ‘

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ মহিলা আওয়ামী লীগ সভানেত্রী আশরাফুননেছা মোশাররফ। এতে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সেতু ও পরিবহন মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।

প্রধানমন্ত্রী নারীদের উদ্দেশ্যে বলেন, নিজেদেরকে কখনও অপাংতেয় ভাবা যাবে না। প্রত্যেকটি মানুষেরই কর্মদক্ষতা আছে, কর্মক্ষমতা আছে। যার যেটুকু আছে সেটা দেশের কাজে লাগাতে হবে।

সম্মেলনের শুরুতেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় পতাকা এবং দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের দলীয় পতাকা উত্তোলন করেন। প্রধানমন্ত্রী শান্তির প্রতীক পায়রা উড়িয়ে সম্মেলনের উদ্বোধন করেন। এরপর সাংস্কৃতিক সমন্বয় পরিষদের শিল্পীদের পরিবেশনায় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। এরপরই শোক প্রস্তাব পাঠ করেন মহিলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক শিরিন রোকসানা।

এরপরই শোক প্রস্তাবে আনা নিহতদের, একাত্তরের শহীদ এবং সকল গণতান্ত্রিক আন্দোলনে আত্মাহুতি দানকারী সকল শহীদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়।

সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহবায়ক ও মহিলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি সাফিয়া খাতুন স্বাগত বক্তৃতা করেন। শুভেচ্ছা বক্তৃতা করেন সংগঠনের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মহিলা ও শিশু বিষয়ক সম্পাদক ফজিলাতুননেছা ইন্দিরা এমপি। সাংগঠনিক রিপোর্ট পেশ করেন বাংলাদেশ মহিলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক পিনু খান এমপি।

শেখ হাসিনা নারীদের উদ্দেশ্যে বলেন, অত্যন্ত দুঃখের বিষয় সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদের ক্ষেত্রে নারীরাও কোন কোন ক্ষেত্রে সম্পৃক্ত হয়ে যাচ্ছে। মেয়েরা মায়ের জাত আর ইসলাম শান্তির ধর্ম। মানুষ হত্যা করে কীভাবে তারা ইসলাম ধর্ম পালন করছে আমি জানি না। যারা এরকম নিরীহ মানুষ হত্যা করবে তাদের স্থান কখনও বেহেশেতে হতে পারে না। মানুষ হত্যা মহাপাপ, মানুষ হত্যাকারীর স্থান হবে দোজখে।

তিনি বলেন, আমাদের প্রত্যেকটি নেতা-কর্মী, ভাই-বোনদের আমি বলব আপনারা বিভিন্ন অঞ্চল থেকে যারা এসেছেন- তারা নিজ নিজ পরিবারে লক্ষ্য রাখবেন। ছেলে-মেয়রা কোথায় যায় এবং কার সঙ্গে মেশে, কী করে, পড়াশোনা ঠিকমতো করছে কিনা, স্কুল, কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়মিত যাচ্ছে কিনা, তার খবর রাখবেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় আসার পর আপনারা দেখেছেন তাদের অত্যাচার-নির্যাতনের মাত্রা কোথায় চলে গিয়েছিল। সারাদেশে ৩ হাজার ৩৩৬ জন অগ্নিদগ্ধ এবং সাড়ে ৩শ’ জনকে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়। স্কুল ছাত্র অনিক আর হৃদয়কে আমি চিকিৎসা করাচ্ছি। যতই চিকিৎসা করাই তাদের দেখলে কষ্ট লাগে- বোমার আঘাতে তাদের সৃষ্ট ক্ষত সারাতে যথেষ্ট বেগ পেতে হচ্ছে। ৬ বছরের শিশু রুপা, অন্তঃস্বত্তা নারী মনোয়ারা বেগম, স্কুল শিক্ষিকা শামসুন্নাহার ঝর্ণাও বিএনপি-জামায়াতের অগ্নিসন্ত্রাস থেকে রেহাই পায়নি।

প্রধানমন্ত্রী ২০০১ সালের পর বিএনপি-জামায়াতের সহিংসতার চিত্র তুলে ধরে বলেন, ভোলার লালমোহন ও আশাপাশের গ্রামে ১০ বছরের শিশু থেকে ৬৫ বছরের বৃদ্ধ কেউ বিএনপি-জামায়াতের অত্যাচার-নির্যাতন থেকে রেহাই পায়নি। পাক হানাদারবাহিনীর মতই তারা বর্বর সন্ত্রাস-নির্যাতন চালিয়েছে।

তিনি বলেন, রাজশাহীর ৭ বছরের শিশু রজুফা ধর্ষিত হয়েছে। নেত্রকোনাতেও নারীদের ওপর নির্যাতন হয়েছে, রাজশাহীতে মহিমা আত্মহত্যা করেছে। খুলনায় রুমাকে তুলে আনতে গেলে সে আত্মহত্যা করে ইজ্জত রক্ষা করেছে।

শেখ হাসিনা বলেন, রংপুরের নিসবেদগঞ্জে, যারা তীর ধনুক নিয়ে এক সময় পাক পানাদারদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিল তারাও ভয়াবহ সন্ত্রাস, নির্যাতন ও পাশবিকতার শিকার হয়েছে। বসতবাড়ি দখল করে রাতারাতি পুকুর কেটে বসতবাড়ি নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছে। পুকুরের পাশে চুলা দেখতে পেয়ে সেটি যে বসতবাড়ি ছিল তা চিহ্নিত করা গেছে।

তিনি আরো বলেন, মাদারিপুরে ২ বছরের শিশু রোকসানাকে মায়ের কোল থেকে কেড়ে নিয়ে চুলায় নিক্ষেপ করে হত্যা করেছে বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাসীরা।

আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ২০১৩, ২০১৪, ২০১৫ বছরগুলোতেও একই কায়দায় জীবন্ত মানুষকে পুড়িয়ে নির্যাতন করেছে জামায়াত-বিএনপি’র সন্ত্রাসীরা। একদিকে জাতীয় সম্পদ ধ্বংস করেছে। অন্যদিকে, মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করেছে।

‘সেই দৃশ্যতো এখনো চোখে ভাসে। সেই যন্ত্রনা নিয়ে এখনো অনেকে বেঁচে আছেন,’ বলেন প্রধানমন্ত্রী।

সম্মেলন উপলক্ষে সবাইকে অভিনন্দন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মার্চ মাস আমাদের স্বাধীনতার মাস। এই মাসেই জাতির পিতা ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণে ঘোষণা দেন ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম। এবারের সংগ্রাম আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম। ‘ আবার এই মাসের ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু জন্মগ্রহণ করেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু প্রত্যেক ঘরে যে দুর্গ গড়ে তোলার নির্দেশ দিয়েছিলেন সেই দুর্গই গড়ে তোলেন বাংলার নারী সমাজ।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকের দিনে আমি গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করি আমার মা বেগম ফজিলাতুননেছা মুুজিবের কথা। তিনি ছিলেন জাতির পিতার ছায়াসঙ্গী। কারাগারে থাকার সময় এক হাতে সংসার সামলে জাতির পিতার মামলা পরিচালনা করা, সংগঠন চালানো আবার আন্দোলন জমিয়ে তোলা- সবই করেছেন একহাতে।

‘বিশ্বে যা কিছু মহান চির কল্যাণকর, অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর। ’ মায়ের সম্পর্কে বলতে গিয়ে কবি কাজী নজরুল ইসলামের রচনা থেকে এই অংশটি উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, একটা সমাজ গড়ে তুলতে হলে সমাজের সকলের জন্যই সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে।

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগই বাংলাদেশের একমাত্র সংগঠন যেখানে গঠনতন্ত্র এবং ঘোষণাপত্রেও নারীর অধিকার নিশ্চিত করা হয়।

স্থানীয় সরকারের সকল পর্যায়ে নারীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার তথ্য তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতীয় সংসদে বর্তমানে ২১ জন সরাসরি নির্বাচিত নারী সদস্য এবং সংরক্ষিত আসনে ৫০ জন প্রতিনিধি রয়েছেন।

প্রধানমন্ত্রী এ সময় দেশের বর্তমান আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে নারী উন্নয়নে তার সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের চিত্র তুলে ধরেন।

প্রধানমন্ত্রী এ সময় তার রাজনৈতিক অঙ্গীকার ২০২১ সাল নাগাদ মধ্যম আয়ের এবং ২০৪১ সাল নাগাদ বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত, উন্নত-সমৃদ্ধ সোনারবাংলা গড়ে তুলতে সকলের সহযোগিতা কামনা করেন।

তিনি উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষায় আওয়ামী লীগ যেন পুনরায় সরকার গঠনে সক্ষম হয় সে জন্য মহিলা আওয়ামী লীগের সংগঠনকে শক্তিশালী করার পাশাপাশি তার সরকারের উন্নয়ন কর্মকান্ড সম্পর্কে দেশবাসীকে বিভিন্ন বাসা-বাড়িতে গিয়ে দলীয় নেতা-কর্মীদের অবহিত করার আহবান জানান।

পাঠকের মতামত: