ঢাকা,সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪

শাবিপ্রবিতে দুই সাংবাদিককে পিটুনি, ছাত্রলীগ নেতার হুংকার ‘মাইর হবে, মাইর’

030658Sabi_kalerkantho_picঅনলাইন ডেস্ক :::

ছাত্রী লাঞ্ছনার খবর সংগ্রহ করতে গেলে সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) দুই সাংবাদিককে পিটিয়েছে ছাত্রলীগের কর্মীরা। গত শনিবার সন্ধ্যায় ক্যাম্পাসের ফুড কোর্ট চত্বরে এ ঘটনা ঘটে।

আহতরা হলেন শাবি প্রেস ক্লাবের সহসভাপতি (দৈনিক সকালের খবরের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি) সৈয়দ নবিউল আলম দিপু ও সাধারণ সম্পাদক (ডেইলি অবজারভারের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি) সরদার আব্বাস আলী। তাঁদের সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

এদিকে এ ঘটনার পর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মৃণ্ময় দাশ ঝুটন তাঁর ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন, ‘কোনো প্রতিবাদ সমাবেশ নয়। এখন থেকে শুধু মাইর হবে, মাইর। ’

ক্যাম্পাস সূত্রে জানা গেছে, শনিবার বিকেল ৫টার দিকে সিলেট নগরের পাঠানটুলা দ্বিপাক্ষিক উচ্চ বিদ্যালয়ের এক ছাত্রী ক্যাম্পাসে বেড়াতে আসে। ছাত্রলীগের কয়েকজন কর্মী তাকে লাঞ্ছিত করে। তারা সবাই শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি সঞ্জীবন চক্রবর্তী পার্থের অনুসারী।

লাঞ্ছনার শিকার ওই ছাত্রী বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছে। অভিযোগপত্র থেকে জানা গেছে, ক্যাম্পাসে বেড়াতে এলে কয়েকজন বখাটে তার পিছু নেয়। তারা শহীদ মিনার পর্যন্ত এসে আজেবাজে প্রশ্ন করে মেয়েটির মুখে সিগারেটের ধোঁয়া ছাড়ে। পরে একজন তাকে চড় দেয়। ক্যাম্পাসে আবার এলে প্রাণনাশের হুমকিও দেয়। তার সঙ্গে থাকা তার ফুফাতো ভাইকেও তারা মারধর করে। তাকে লাঞ্ছনা ও মারধরকারীরা হলো সমাজকর্ম বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষ প্রথম সেমিস্টারের মাহমুদুল হাসান রুদ্র এবং পরিসংখ্যান বিভাগের একই বর্ষের এস এন সাজ্জাদ রিয়াদ।

এটি জানতে পেরে বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন সংবাদকর্মী খবর সংগ্রহ করতে যান। ছাত্রলীগের কর্মীদের সঙ্গে তাঁদের উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হয়। এ ঘটনা সাংবাদিকরা ছাত্রলীগের শাখা সভাপতিকে জানালে তাঁর কিছুই করার নেই বলে জানান। পরে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রেস ক্লাবের সহসভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ফুড কোর্টে চা খেতে যান। দেশীয় অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে তাঁদের ওপর উপর্যুপরি আঘাত হানে ছাত্রলীগকর্মীরা। এ সময় এই দুই সাংবাদিককে বেধড়ক পিটুনি দেয় অনিরুদ্ধ দেব অমিয়, নজরুল ইসলাম রাকিব, রাহাত সিদ্দিকী, সুমন সরকার জনি, মো. জাকির খান, মেহেদী হাসান স্বাধীনসহ কয়েকজন। এতে ঘটনাস্থলে চেতনা হারান সরদার আব্বাস এবং গুরুতর আহত হন সৈয়দ নবীউল আলম দিপু।

নিন্দা, দোষীদের শাস্তি দাবি

এ ঘটনায় চিহ্নিত অপরাধীদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আজীবন বহিষ্কারের দাবি জানিয়েছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও সিলেটের গণমাধ্যমকর্মীরা। গতকাল রবিবার দুপুর ১২টায় কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার ভবনের সামনে বিশ্ববিদ্যালয় প্রেস ক্লাবের আয়োজনে অনুষ্ঠিত এক মানববন্ধন-পরবর্তী সমাবেশ থেকে এ দাবি জানান তাঁরা। মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, সিলেট জেলা প্রেস ক্লাব, সিলেট প্রেস ক্লাবের নেতা ও সাংবাদিকরা।

এ ছাড়া ঢাকা, জাহাঙ্গীরনগর, জগন্নাথ, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, কুষ্টিয়ার ইসলামী, ময়মনসিংহের বাংলাদেশ কৃষি, কুমিল্লা, বরিশাল ও নোয়াখালী বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত সাংবাদিকরা নিন্দা জানিয়েছেন।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসাইন বলেন, ‘আমি বিষয়টি জেনেছি। তদন্তের মাধ্যমে শিগগিরই ব্যবস্থা নেব। ’ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ বলেন, ‘যারা হামলা করছে, তাদের চিহ্নিত করে স্থায়ী বহিষ্কার করা হবে। ’

তদন্ত কমিটি

এদিকে ঘটনা তদন্ত করতে পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। ড. জহির বিন আলমকে প্রধান করে চারজন সহকারী প্রক্টরকে রাখা হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর মুনশী নাসের ইবনে আফজাল বলেন, ‘এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করা হবে। ’

বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য ইলিয়াস উদ্দিন বিশ্বাস বলেন, ‘তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ’

 

পাঠকের মতামত: