মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম, লামা (বান্দরবান) প্রতিনিধি ঃ
আই…..ও, চলছে মেলা চলবে মেলা, উঠাও বাচ্ছা, হৈ হৈ কান্ড রৈ রৈ ব্যাপার- চলছে হরিণ ঝিরি ডিজিটাল মেলা, আজকের বাম্পার হাউজি বাম্পার, আজকের রজনীতে আছে ঝুমুর ঝুমুর নাচ আর গান, লটারী-লটারী-লটারী সহ অসংখ্যা যৌন উত্তেজক স্লোগান আর লোভনীয় অফার নিয়ে প্রচার মাইকের শব্দে ঘুম ভাঙ্গে বান্দরবানের লামা পৌর শহরের মানুষের। কাক ডাকা ভোর থেকে শুরু করে গভীর রাত পর্যন্ত ১০/১৫টি প্রচার মাইক দিয়ে উচ্চস্বরে চলে মেলার প্রচারণা। এই যেন মগের মুল্লুক। অপরদিকে মেলা প্রাঙ্গনে ৩-৪ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে মেলার মাইকে অতিষ্ট হয়ে উঠেছে ছাগলখাইয়া, হরিণঝিরি, বগাঝিড়ি ও শিলেরতুয়া এলাকার লোকজন।
বান্দরবানের লামা পৌরসভার হরিণঝিরি এলাকার স্বাধীনতা মেলার নামে চলছে নগ্ন নৃত্য, জুয়া, মাদক গ্রহন ও সার্কাসের হাতি নিয়ে পাড়া মহল্লায় চাঁদাবাজি। লামা মুক্তি অনাথ আশ্রমের আর্থিক সুবিধা প্রাপ্তির নামে বান্দরবান জেলা প্রশাসন থেকে ১৩ শর্তে ১০-২৯ মার্চ পর্যন্ত ২০দিন ব্যাপী অনুমতি দিলেও মানা হচ্ছেনা কোন শর্ত। বিশেষ করে যে সব ইভেন্ট পরিচালনা করতে নিশেষ করা হয়েছে তা হচ্ছে বেশী। আয়োজকরা সবাই স্থানীয় ও প্রভাবশালী লোকজন হওয়ায় প্রভাব খাটিয়ে এই উলঙ্গ নৃত্য ও অবৈধ জুয়ার আসর চালানোর সাহস দেখাচ্ছে বলে অভিযোগ সচেতন এলাকাবাসীর।
স্থানীয়রা জানায়, মেলার নামে এ সকল অশ্লীল কর্মকান্ডের কারণে এলাকার যুব সমাজ ও স্কুল কলেজ পড়–য়া ছাত্ররা নৈতিক অবক্ষয় সহ মাদক দ্রব্য গ্রহনের দিকে ধাবিত হচ্ছে। উক্ত মেলাকে কেন্দ্র করে শিশু কিশোররা টাকার লোভে জুয়ার দিকে আসক্ত হচ্ছে। অভিভাবক হতে বিভিন্ন পন্থায় টাকা আদায় করতে না পেরে চুরির মত অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। আরো অনেকে অভিযোগ করেন, মেলাকে কেন্দ্র করে হরিণঝিরি এলাকা এখন মাদকের অঞ্চলে পরিণত হয়েছে। মেলাতে ও মেলার আশেপাশে মদ, গাঁজা ও ইয়াবা সহ বিভিন্ন মাদক দ্রব্য বিক্রি করা হয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েক জন স্থানীয় অভিভাবক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আগামী ৩ এপ্রিল হতে এইচ.এস.সি পরীক্ষা শুরু। আমাদের ছেলে মেয়েরা মেলার মাইকের উচ্চ স্বরের কারনে সন্ধ্যার পর লেখাপড়া করতে পারচ্ছেনা।
জানা গেছে, অনাথ আশ্রমের উন্নয়নের জন্য মেলা অনুমতি প্রাপ্ত হলেও এর অবৈধ সুবিধা নিচ্ছে ক্ষমতাসীন দলের নেতা কর্মী সহ স্থানীয় একটি মহল। অনুমতি পত্র মতে মেলার সকল কার্যক্রম রাত ১২টা মধ্যে সমাপ্ত করার কথা থাকলেও চলছে সারারাত। মেলায় অশ্লীল নৃত্যে ও জুয়ায় অধিকাংশ দর্শক হচ্ছে স্কুল কলেজের উঠতি বয়সের ছেলে মেয়েরা। তবে স্থানীয়রা বলছেন দ্রুত এ মেলা বন্ধ না করলে অচিরেই এলাকার সামাজিক পরিবেশ নষ্ট হয়ে অপরাধ প্রবণতা বৃদ্ধি পাবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে লামা উপজেলা নির্বার্হী অফিসার খালেদ মাহমুদ জানান, পুলিশের রির্পোটের ভিত্তিতে মেলা অনুমতি প্রাপ্ত হয়। তবে মেলার নামে অশ্লীল কর্মকান্ড হলে ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
উল্লেখ্য, বর্তমান এই মেলা পরিচালনা কমিটির অসামাজিক কাজে অতিষ্ট হয়ে ২০১৪সালে লামা পৌর শহরের ৭নং ওয়ার্ডে একটি মেলা আগুন লাগিয়ে পুড়িয়ে দেয এলাকার মুসলিম উম্মাহ। এই ধরনের কোন অপ্রীতিকর পরিবেশ সৃষ্টি না হতেই মেলাটি বন্ধ করে দিতে অনুরোধ করেছে এলাকার সচেতন মহল ও অভিভাবক বৃন্দ।
পাঠকের মতামত: