মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম, লামা (বান্দরবান) প্রতিনিধি ঃ
বান্দরবানের লামায় প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের সহকারী শিক্ষা অফিসার আশীষ কুমার মহাজন এর লাগামহীন অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থা মুখ থুবড়ে পড়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে বেশ কয়েকবার বিভাগীয় মামলায় শাস্তি পেয়েও সে সংযত না হয়ে বরং হয়ে উঠেছে আরো দুর্নীতি পরায়ণ।
অভিযোগের মধ্যে রয়েছে- সরকারী কর্মচারী বিধিমালা ১৯৮৫ এর ৩ (বি) ও ৩ (ডি) লঙ্গন, স্লিপ বরাদ্দ হতে প্রতি বিদ্যালয় থেকে অর্থ আদায়, বদলি বাণিজ্য, স্কুলের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা বরাদ্দকৃত অর্থ হতে শিক্ষকদের কাছ থেকে টাকা আদায়, বিষয় ভিত্তিক প্রশিক্ষণে উৎকোচ গ্রহণ, বিভিন্ন শিক্ষকদের বিরুদ্ধে এলাকাবাসি কর্তৃক আনীত নানান অভিযোগ ব্যাক্তিগত সুবিধা নিয়ে ধামাচাপা, মাসের পর মাস স্কুলে না যাওয়া শিক্ষকদের মাসিক বেতন তুলতে সহায়তা, দূর্গম ও দূর্বল স্কুলে মাসিক পরিদর্শন না করে ভুয়া রিপোর্ট প্রদান।
উপজেলার সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারের ঘুষ, দুর্নীতি, অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতার বিষয়টি এখন সবার মুখে মুখে। কেউ প্রতিবাদ করলেই বিভাগীয় মামলার হুমকি দেয়া হয়। লামা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের বিষয়ে খোদ বান্দরবান জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার রিটন কুমার বড়–য়া মন্তব্য করেন, ‘লামা শিক্ষা অফিস আল্লাহ চালায়’।
জানা গেছে, আশীষ কুমার মহাজন চট্টগ্রামের চন্দনাইশ এর ভারপ্রাপ্ত শিক্ষা অফিসার থাকা কালীন অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে সরকারী কর্মচারী বিধিমালা ১৯৮৫ এর ৪ (২)(বি) মোতাবেক প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর এর মহাপরিচালক কর্তৃক স্মারক নং- প্রাশিঅ/৬সি/২১-প্রাই(ত:শৃ:)/পিটিআই/০৭/২০৮ তারিখ ২০/০৫/২০১২ পত্রে লঘুদন্ড প্রদান করা হয়। বর্তমান কর্মস্থলে বিভাগীয় মামলা ১৪/১৬ এর এর দায়ে সরকারী কর্মচারী বিধিমালা ১৯৮৫ এর ৪ (২)(এ) উপবিধি মোতাবেক ‘তিরস্কার’ দন্ড প্রদান করা হয়। যা স্মারক নং- ৩৮.১০৫.০২৭.০৪.১১.১৫২.২০১৬-১২, তারিখ- ১০/০১/২০১৭ইং।
এছাড়াও নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শিক্ষক বলেন, উপজেলা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার স্লিপ প্রকল্পের ফাইল অনুমোদনের জন্য বিদ্যালয় প্রতি ৪ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকা করে ঘুষ আদায় করছেন। যে কোন ধরনের অফিস কাজের জন্য তাকে উৎকোচ দেয়া না হলে কাজের অগ্রগতি হয়না।
কোন শিক্ষক ছুটির জন্য এলে ছুটি অনুমোদনের পূর্বে তাকে মোটা অংকের টাকা দিতে হয়। কোন বদলী বা কোন বিল ভাউচার করতে হলেও তাকে টাকা দিতে হয়। টাকা ছাড়া শিক্ষকদের কোন কাজই করেন না তিনি। এমনিভাবে বেপরোয়া আশীষ কুমার মহাজন দুই হাতে ঘুষ আদায় করছেন। অথচ তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহন করা হচ্ছে না। রহস্যজনক কারণে একটি মহল দুর্নীতি ধামাচাপা দেয়ার অপচেষ্টা চালাচ্ছে।
আনীত অভিযোগের বিষয়ে সহকারী শিক্ষা অফিসার আশীষ কুমার মহাজন কে মুঠোফোনে জিজ্ঞাসা করলে তিনি উত্তেজিত হয়ে পড়েন। কোন প্রকার অনিয়ম করেননি বলে উল্টা মানহানী মামলার করার হুমকি প্রদান করেন।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার যতীন্দ্র কুমার মন্ডল বলেন, স্কুলে পরিদর্শনে না গিয়ে কাগজে কলমে দেখানো অন্যায়। নানান অভিযোগের তদন্ত রিপোর্ট প্রদানে অনেক সময় নেন তিনি। তবে তার দুর্নীতির বিষয়ে আমি কোনো অভিযোগ পায়নি। তবে শিক্ষকরা অভিযোগ করলে তদন্ত করে দেখা হবে।
বান্দরবান জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার রিটন কুমার বড়–য়া বলেন, আশীষ কুমার মহাজন যে স্টেশনে চাকরী করেছে সেখানেই বিভাগীয় মামলা খেয়েছে। তার বিরুদ্ধে অসংখ্য অভিযোগ। তাকে হাজারও বলে ঠিক করা যায়নি।
পাঠকের মতামত: