ঢাকা,রোববার, ১৭ নভেম্বর ২০২৪

লামায় বন্যায় প্লাবিত, মোবাইল নেটওয়ার্ক ও বিদ্যুৎ নেই

মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম, লামা ::

তিন দিনের টানা মাঝারি ও ভারী বর্ষণে সৃষ্ট বন্যায় বান্দরবানের লামা উপজেলার ১টি পৌরসভা, ৭টি ইউনিয়নের অধিকাংশ জায়গা পানির নিচে। প্রমত্তা মাতামুহুরী নদী, ফাঁসিয়াখালী খাল, লামাখাল, বমুখাল, ইয়াংছা খাল, বগাইছড়ি খাল ও পোপা খালসহ বিভিন্ন স্থানের পাহাড়ি ঝিরিগুলোতে অস্বাভাবিকভাবে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় গৃহবন্দি হয়ে পড়েছে বিভিন্ন পেশাজীবির প্রায় ৫০ হাজার মানুষ। ঈদের পূর্বমুহুর্তে রমজানের এইসময়ে হঠাৎ বন্যায় চরম ভোগান্তিতে পড়েছে জনসাধারণ। পাশাপাশি মোবাইল নেটওয়ার্ক (গ্রামীণফোন, রবি ও টেলিটক) ও বিদ্যুৎ না থাকায় ভোগান্তির সীমা সর্বোচ্চ পর্যায়ে ঠেকেছে।

অনবরত বৃষ্টির কারণে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে পাহাড় ধসের আশংকা দেখা দিয়েছে। মঙ্গলবার বেলা ১২টার দিকে লামা পৌর এলাকার মাতামুহুরী কলেজ সংলগ্ন জনৈক খাদিজা বেগমের বাড়িতে পাহাড় ধসে পড়লে তার বসতবাড়ি ভেঙ্গে যায়। উপজেলার সকল নদী-খাল-ছড়া-ঝিরির পানি বিপদসীমা অতিক্রম করেছে।

অপ্রীতিকর পরিস্থিতি মোকাবেলায় ও পাহাড় ধস হতে রক্ষা পেতে লামা উপজেলা প্রশাসন, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদগুলোর পক্ষ থেকে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসকারীদেরকে নিরাপদে আশ্রয় যাওয়ার জন্য দফায় দফায় তাগিদ দিয়া মাইকিং করা হয়েছে। উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে লামা বাজারে বন্যা কবলিতদেরকে আশ্রয় নেওয়ার জন্য ৫টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। ইতিমধ্যে অনেক বানভাসি মানুষ সেখানে আশ্রয় নিয়েছে। আশ্রয় কেন্দ্রগুলো হল, লামা সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়, লামা ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসা, লামা আদর্শ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, লামা হাসপাতালের কোয়ার্টার ও নুনারবিল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়। বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকলে ভয়াবহ বন্যাসহ পাহাড় ধসে মানবিক বিপর্যয়ের আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।

লামা পৌরসভা মেয়র জহিরুল ইসলাম বলেন, লামা পৌর এলাকার নয়াপাড়া, বাসস্টেশন, টিএন্ডটি পাড়া, বাজারপাড়া, গজালিয়া জিপ স্টেশন, লামা বাজার, চেয়ারম্যান পাড়ার একাংশ, ছোট নুনারবিল, বড় নুনার বিল, উপজেলা পরিষদের আবাসিক কোয়ার্টার সমূহ, থানা এলাকা সহ অধিকাংশ পৌর এলাকা পানির নিচে। সদরে খোলা ৫টি আশ্রয় কেন্দ্রে ৫ শতাধিক মানুষ আশ্রয় নিয়েছে। যেখানে নিরাপদ পানি ও খাবারের সংকট রয়েছে।

রুপসীপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান ছাচিং প্রু মার্মা জানান, ইউনিয়নের শিলের তুয়া, মাষ্টাপাড়া, হাফেজপাড়া, দরদরী, অংহ্লা পাড়া, গগণমাষ্টার পাড়া, ইব্রাহিম লিডার পাড়া, রুপসীপাড়া পাড়া বাজার আশপাশ সহ অনেক এলাকা পানির নিচে এবং পুরো ইউনিয়নের মানুষ পানিবন্ধী। বিশেষ করে পাহাড় ধসের আশংকা রয়েছে।

সদর ইউপি চেয়ারম্যান মিন্টু কুমার সেন বলেন, গত শনিবার দিবাগত রাত থেকে মুসলধারে বর্ষণ শুরু হয়। ইতিমধ্যে মেরাখোলা, আশ্রয়প্রকল্প এলাকা, বেগুণঝিরি, মেওলারচর সহ অনেক এলাকা পানির নিচে।

ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান জাকের হোসেন মজুমদার জানান, পাহাড়ি ঢলের পানিতে ইয়াংছা বাজার প্লাবিত হয়েছে। এদিকে খাল ও ঝিরির পানি বৃদ্ধি পেয়ে গজালিয়া, ফাইতং, আজিজনগর ও সরই ইউনিয়নের গৃহবন্দি হয়ে দুর্ভোগে রয়েছে জানান ইউপি চেয়ারম্যানরা।

লামা বাজারের ব্যবসায়ী মো. সেলিম, জাকির হোসেন, পিকলু, জাপান বড়–য়া বলেন, প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে ৪-৫ বার পাহাড়ি ঢলের পানিতে ঘরবাড়ী ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান প্লাবিত হয়। ঢলের পানি ওঠার সময় ঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালামাল নিয়ে বেকায়দায় পড়তে হয়। এমনকি বড় ধরনের আর্থিক ভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হতে হচ্ছে।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার নুর-এ জান্নাত রুমি বলেন, যেখানে দূর্ঘটনার খবর পাচ্ছি আমরা ত্রান ও সহায়তা নিয়ে ছুঁটে যাচ্ছি। আশ্রয়কেন্দ্র গুলো খাবারের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। তবে ভুক্তভোগী মানুষের সংখ্যা অধিক হওয়ায় আরো সহায়তার প্রয়োজন। উপজেলা পরিষদের কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে।

লামা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান থোয়াইনু অং চৌধুরী জানান, আমরা অসহায় মানুষের পাশে আছি। সকল পরিস্থিতি মোকাবেলায় ফায়ার সার্ভিস, লামা হাসপাতাল ও আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

পাঠকের মতামত: