ঢাকা,শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪

লামায় ইউপি মেম্বারদের ঘুষ না দিলে মিলেনা মাতৃত্বকালীন ভাতা

Photo 07.06.17 (1)মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম, লামা (বান্দরবান) প্রতিনিধি ঃ

পরিবারের ভরন পোষণের জন্য দরিদ্র মহিলাদের অর্থ উপার্যনে কাজ করতে হয়। কিন্তু গর্ভাবস্থার শেষ দিকে বা মাতৃত্বকালীন অবস্থায় কাজ করা সম্ভব হয় না। পুষ্টিকর খাবার বা ভরণ পোষণের অভাবে মা অসহায় অবস্থায় পড়েন। এই অবস্থা থেকে মুক্ত করতে সরকার দরিদ্র মাকে মাতৃত্বকালীন ভাতা দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। সুবিধাবঞ্চিত মায়েদের মাতৃত্বকালীন সময়ে স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে ২০০৮ সাল থেকে সরকার এ ভাতা চালু করেছে। কমপক্ষে ২০ বছর বা তার বেশি বয়সের মাতৃত্বকালীন অবস্থায় যে কোন মহিলা এ সেবা পেতে পারেন। মাসিক ৩৫০ টাকা হারে প্রতি ৬ মাস অন্তর অন্তর ২৪ মাসে ৪বার ভাতা প্রদান করা হয়।

মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনে মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার কার্যালয়ের মাধ্যমে লামা উপজেলায় ৭৮৪ জন নারীকে দেয়া হচ্ছে মাতৃত্বকালীন ভাতা। প্রতি ৬ মাস পর পর উপকারভোগীর নির্দিষ্ট ব্যাংক হিসাব নাম্বারে ৩ হাজার টাকা জমা হয়। উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা সুষ্মিতা খীসা জানান, মাতৃমৃত্যু এবং শিশু মৃত্যু রোধ করার লক্ষ্যে গর্ভকালীন সময়ে কিংবা গর্ভের পরে মা ও শিশু পুষ্টির চাহিদা মিটানোর জন্যই এই ভাতা চালু করা হয়েছে। সাধারণত প্রথম অথবা দ্বিতীয় গর্ভকালীন সময়ে ২ বছর মাসিক এই ভাতার টাকা দেওয়া হয়।

লামা উপজেলায় ভাতা ভোগী মায়েরা জানায়, সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের মহিলা মেম্বার ও মেম্বারকে টাকা না দিলে তালিকায় নাম উঠেনা এবং ভাতা গ্রহণকালে টাকা না দিলে ভাতা পাওয়া যায়না।

লামা ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের ইয়াংছা ছোট মার্মার পাড়ার মাতৃত্বকালীন ভাতা ভোগী মা হ্লাসাচিং মার্মা (২৫), সুচিমে মার্মা (২১), হ্লা হ্লা মার্মা (২৩), ক্য নু চিং মার্মা (১৯) সহ অনেকে বলেন, আমরা বুধবার ৩ হাজার টাকা ভাতা পেয়েছি। প্রতিজন থেকে ৭,৮ ও ৯নং ওয়ার্ডের মহিলা মেম্বার আনাই মার্মা ও ৪,৫ ও ৬নং ওয়ার্ডের মহিলা মেম্বার পারভিন আক্তার ৫শত টাকা করে নিয়ে নিয়েছে। তাছাড়া তালিকা ভুক্তির সময় ৩শত টাকা নিয়েছে।

একই ইউনিয়নের ইয়াংছা কাঠাঁলছড়া এলাকার শাহজাহান বেগম (২৪), ইসমত আরা (৩১) ও রেনু বেগম (২৯) বলেন, আমরা মহিলা মেম্বার আনাই মার্মাকে ৫শত টাকা করে দিতে অস্বীকার করায় আমাদের নাম তালিকায় থাকা সত্ত্বেও ভাতা দেয়নি। লামা উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে বিচার দিয়েও প্রতিকার পায়নি। বরং তিনি আমাদের বকাবকি করেছেন। ইউএনওকে বিচার দেয়ার অপরাধে লামা সোনালী ব্যাংক ম্যানাজার শামীমুর রহমান আমাদের থেকে মুচলেখা নিয়েছে।

ইউনিয়নের বগাইছড়ি এলাকার মনোয়ারা বেগম (২২) সহ অনেকে বলেন, ৩নং ওয়ার্ডের ইউপি মেম্বার মোঃ হোসেন মামুন তালিকা করার সময় সবার কাছ থেকে ৪শত ও ভাতা গ্রহণকালে ৫শত টাকা করে জোর করে নিয়েছে। টাকা নেয়ার বিষয়ে মেম্বারদ্বয় বলেন, আমরা অল্প কিছু খরচ নিয়েছি। তারা খুশি হয়ে দিয়েছে। একই চিত্র সমগ্র লামা উপজেলায়।

এই বিষয়ে লামা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা সুষ্মিতা খীসা বলেন, এইটা গুরুতর অপরাধ। ভাতা গ্রহণকারী মা’দের কাছ থেকে টাকা নেয়ার নিয়ম নেই।

লামা উপজেলা নির্বাহী অফিসার খিন ওয়ান নু বলেন, আমাকে কয়েকজন ‘মা’ মোখিক বিচার দিয়েছে। লিখিত বিচার না দিলে কিছু করতে পারব না।

পাঠকের মতামত: