ঢাকা,শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪

লামা পাহাড়ে অবাধে চলছে পাথর উত্তোলন, সরকার কোটি টাকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত

index-11লামা প্রতিনিধি :::

লামা উপজেলায় জলবায়ু পরিবর্তনের বিরাজমান পরিস্থিতিতে সরকারি নিয়ম উপেক্ষা করে পাথর উত্তোলন ও পাচার হলেও রহস্যজনক কারণে নীরব ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে সংশ্লিষ্ঠ প্রশাসন। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার্থে পাহাড় খুড়ে অবৈধভাবে পাথর উত্তোলন ও আহরণ বন্ধের দাবী জানিয়েছেন স্থানীয় সচেতন মহলসহ পরিবেশবিদরা।
সরকারি নিয়মনীতি অমান্য করে অবাধে পাহাড়ের বুকচিড়ে, পাহাড় খুড়ে, বোল্ডার দিয়ে পাথর উত্তোলন ও পাচারে নীরব প্রতিযোগিতা চলছে। পানির উৎস পাহাড়ের ঝিরি ও তীরে অবস্থিত পাহাড় ধ্বংস করেই দিনরাত অবৈভাবে পাথর উত্তোলন করছে একটি পাহাড় ধ্বংশকারী চক্র। প্রতিদিন উপজেলার বিভিন্ন স্থান থেকে উত্তোলিত এসব পাথর ট্রাক যোগে দেদারচে পাচার করা হচ্ছে দেশের বিভিন্ন স্থানে। সরকারের খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধিনে নামেমাত্র কোয়ারী ইজারার নামে যত্রতত্র পাহাড় ও ঝিরি খুড়ে পাথর উত্তোলনের ফলে প্রকৃতিক পানির উৎস নষ্টসহ পরিবেশের বিপর্যয় ঘটছে প্রতিনিয়ত। পাহাড় খুঁড়ে পাথর উত্তোলনে বিষ্ফোরক ব্যবহার করতে গিয়ে বিগত দিনে অনেকের মৃত্যুসহ অর্ধশত পাথর শ্রমিক অন্ধ ও পঙ্গুত্ব জীবন বরণ করছেন বলে জানা গেছে।
উপজেলার লামা সদর ইউনিয়নের হরিণঝিরি, বগাঝিরি, ফাঁসিয়াখালীর ত্রিডেবা, কাঁঠাল ছড়া, ছমুখাল, ইয়াংছা, সাংগু, আজিজনগর, ফাইতং, সরই এলাকার লেমুপালং, ডলুছড়িসহ বিভিন্ন স্থানে পাথর আহরণের নামে পাহাড় কেটে ধ্বংস করছে পরিবেশ । খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা উপেক্ষা করে পাহাড় ও মাটি খুঁড়ে পাথর উত্তোলন ও আহরণ করা হলেও আইনকে অমান্যকরে পাথর উত্তোলন চলছে। এছাড়া উত্তোলিত পাথর পরিবহনের জন্য অপরিকল্পিত ভাবে বুল ড্রোজার দিয়ে পাহাড় কেটে, পাহাড়ের প্রাকৃতিক কাঠামো ধ্বংশ হয়ে প্রকৃতি হারাচ্ছে ভারসাম্য। অভিযোগ রয়েছে অবৈধ ভাবে পাথর উত্তোলন ও পাচার কাজে বিনিময়ে রয়েছে প্রশাসনের সহায়তা।
পাথর উত্তোলনের জন্য চলমান জলধারা, ছড়া, ঝিরি-খাল কোয়ারী ইজারার নামে দখল করে পাথর পাথর উত্তোলনের ফলে এলাকায় ঝিরি-ঝর্ণাগুলো পানির উৎস বিনষ্ট হচ্ছে, অপর দিকে জীব বৈচিত্র ধ্বংশ হচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও বনকর্মকর্তারা জানান, এ এলাকা থেকে বার্ষিক কমপক্ষে ১০ লাখ ঘনফুট পাথর উত্তোলন এবং পাচার হয়ে থাকে। এ থেকে সরকার নামমাত্র রাজস্ব পেয়ে থাকলেও বিগত এক বছর পাথরের পারমিট বন্ধ তাই সরকার এই সামপ্রতিক বছরে কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে। পরিবেশ বিদ্বেষী এ আগ্রসনের ফলে উপজেলার দুর্গম পল্লীর মানুষের মাঝে পানিয় জলের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। অভিযোগ রয়েছে এসব অনিয়মের প্রতিবাদকারীদের ওপর নানামুখী নির্যাতন ছাড়াও মামলা-হামলাসহ মিথ্যা অভিযোগের বোঝা চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন নিরিহ এলাকাবাসী ।
সরকারের সংশ্লিষ্ট অসাধু কর্মকর্তাদের নানাভাবে ম্যানেজ করেই সংঘবদ্ধ পাথর পাচারকারী চক্র প্রকাশ্যে অবাধে মাটি খুঁড়ে পাথর উত্তোলন ও আহরণ করছে। এমনটি চলতে থাকলে পার্বত্য এই জনপদ ভয়াবহ ভুমিকম্পের চরম বিপর্যয়ের শিকার হওয়ার শংকা প্রকাশ করছেন পরিবেশবিদরা।
এ ব্যাপারে বান্দরবান জেলা প্রশাসক দীলিপ কুমার বণিক বলেন, বিদ্যুৎ, জ্বালানী, খনিজ মন্ত্রণালয় আওতাধীন জারীকৃত খনি ও খনিজ সম্পদ বিধিমালা ২০১২ এর ৯৫ বিধিতে জেলা প্রশাসক ১৩টি শর্তাবলী সাফেক্ষে পাথর কোয়ারির অনুমোদন দেয়। এইসব বিধিবিধান অমান্য করে পাথর উত্তোলন কিংবা অন্য জায়গা পাথর নেওয়া সম্পূর্ণ অবৈধ।
লামা বিভাগিয় বন কর্মকর্তা মোঃ রফিকুল ইসলাম চেীধুরী বলেন, এক দশক আগে বন বিভাগ কোয়ারি লিজের মাধ্যমে শর্তস্বাপেক্ষে পাথর উত্তোলনের অনুমোদন দিতেন। কিন্তু বিগত বছরে এ পাথর খনিজ মন্ত্রণালয় আওতাধীন জেলা প্রশাসক মাধ্যমে অনুমোদন দেয়।

 

পাঠকের মতামত: