ঢাকা,শনিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৪

রামুর এসএইচডি মডেল হাই স্কুলে ফি বিহীন পরীক্ষা নিতে বাড়ি বাড়ি যাচ্ছেন শিক্ষকরা

সোয়েব সাঈদ ॥  রামু উপজেলার রশিদনগর ইউনিয়নের অনগ্রসর জনপদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পানির ছড়া এসএইচডি মডেল হাই স্কুল। বিদ্যালয়ে ৪ শতাধিক ছাত্র-ছাত্রী অধ্যয়ন করছে। আশপাশের পাহাড়ি এলাকার এসব শিক্ষার্থীদের অধিকাংশ দরিদ্র ও সুবিধাবঞ্চিত। করোনা পরিস্থিতিতে কয়েকমাস ধরে বন্ধ রয়েছে পাঠদান। সম্প্রতি শিক্ষকরা বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অনলাইন পদ্ধতিতে পাঠদান ও পরীক্ষা নেয়ার চেষ্টা চালালেও অধিকাংশ শিক্ষার্থীদের স্মার্ট ফোন না থাকায় তা সম্ভব হয়নি। এহেন পরিস্থিতিতে ফি ছাড়াই শিক্ষার্থীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে অর্ধ বার্ষিক পরীক্ষা নেয়ার কার্যক্রম শুরু করেছেন শিক্ষকরা। শিক্ষকদের এ ব্যতিক্রমী উদ্যোগ এলাকায় সাড়া জাগিয়েছে।

বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা জানান, বিদ্যালয়টি এখনো এমপি ভুক্ত হয়নি। ফলে করোনা পরিস্থিতিতে এ বিদ্যালয়ের শিক্ষকরাও অনেক অসহায় সময় পার করছে। এরপরও তারা বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মেধার চর্চা অব্যাহত রাখার প্রয়াসে নিজেরা ত্যাগ স্বীকার করে বিনা ফি তে পরীক্ষা নেয়ার কাজ শুরু করেছেন। গত ২১ জুলাই শুরু হয়েছে বিদ্যালয়ের সকল শিক্ষার্থীদের অর্ধ সাময়িক সাময়িক পরীক্ষা। সকাল ১০ টা থেকে বেলা ১ টা পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা বাড়িতে বসেই পরীক্ষায় অংশ নেয়। তবে প্রথম দিন অভিভাবকদের সহায়তায় বাড়ি বাড়ি গিয়ে পরীক্ষা তত্ত্বাবধান করেন শিক্ষকরা।

পানির ছড়া এসএইচডি মডেল হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক এম ওমর শওকত বলেন- সারা দেশে অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হলেও এখানে সম্ভব হচ্ছে না। এ বিদ্যালয়ে শতকরা ১৫ ভাগ শিক্ষার্থীর অনলাইন/স্মার্ট ফোন সুবিধা রয়েছে। বাকি ৮৫ শিক্ষার্থীর কথা চিন্তা করে অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করা যায়নি। বর্তমানে একজন শিক্ষকের তত্ত্বাবধানে ৫০ জন শিক্ষার্থী মোবাইল ফোনে ও সরাসরি যোগাযোগের মাধ্যমে পাঠদান ও পরীক্ষা নেয়া হচ্ছে।

তিনি আরও জানান, জুলাই মাসেও পরিস্থিতি অস্বাভাবিক থাকার কারণে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ শিক্ষকদের সাথে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয় ২১ জুলাই থেকে অর্ধ বার্ষিক পরীক্ষা আয়োজনের। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কোন প্রকার পরীক্ষা ফি ছাড়াই প্রশ্নপত্র তৈরি করে ৪ শতাধিক শিক্ষার্থীদের বাড়ি বাড়ি অভিভাবকদের হাতে পৌছিয়ে দেয়া হবে। রুটিন ও প্রশ্ন পত্রে উল্লেখিত তারিখ অনুসারে সকাল ১০টায় পরিক্ষা শুরু করে ১টায় উত্তর পত্র নিয়ে অভিভাবক নিজের কাছে জমা রাখবেন। সব পরীক্ষা শেষে শিক্ষকরা আবার বাড়ি বাড়ি গিয়ে উত্তরপত্র সংগ্রহ করবেন।

বিদ্যালয় পরিচালনা পরিষদের সদস্য এনামুল হক বলেন- রুটিন অনুসারে পরীক্ষা নেয়া হচ্ছে। পরবর্তী পরীক্ষা চলাকালেও শিক্ষকরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে পরীক্ষার কার্যক্রম তদারক করবেন। শিক্ষার্থীদের বাড়ি বাড়ি পরিদর্শন করা অনেক কষ্ট সাধ্য কাজ। এরপরও নিষ্ঠা, দক্ষতার সাথে পরীক্ষা সম্পন্ন করার উদ্যোগ নেয়ায় বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা ও আন্তরিক ধন্যবাদ জানান তিনি।

রশিদনগর মুরাপাড়ার পরিবহণ চালক জাফর আলম জানান, তার ছেলে তৌহিদুল ইসলাম মিজবাহ এ বিদ্যালয়ে ৭ম শ্রেণিতে অধ্যয়নরত। গত ২১ জুলাই সকালে বাড়িতে বসেই পরীক্ষায় অংশ নেয় সে। পরীক্ষা চলাকালে বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক মোবারক হোসেন ও সাহাব উদ্দিন বাড়িতে এসে ছেলের পরীক্ষা তদারক করেন। পরীক্ষার জন্য কোন প্রকার ফি বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নেয়নি। বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও শিক্ষকদের এহেন আন্তরিকতায় মুগ্ধ এ অভিভাবক।

জানা গেছে, ২০১৯ সালে শিক্ষা মন্ত্রনালয় কর্তৃক পাঠদান অনুমোদন পাওয়া পানিরছড়া এসএইচডি মডেল হাই স্কুল ২০১৪ সাথে প্রতিষ্ঠিত হয়ে সফলতার সাথে এগিয়ে যাচ্ছে। বিদ্যালয় থেকে ৫ বার জেএসসি ও ৩ এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে পাশের হার শতকরা ৯৫ ভাগের উপরে। স্বাভাবিক পাঠদান ছাড়াও শিক্ষার্থীদের সহপাঠ কার্যক্রম ও নৈতিক শিক্ষার প্রতি এখানে সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়া হয় এ বিদ্যালয়ে।

পাঠকের মতামত: