মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম, বান্দরবান প্রতিনিধি ::
বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার তুমব্রু সীমান্তে নতুন করে মিয়ানমার সেনাবাহিনী ও বিজিপি রোহিঙ্গাদের বাড়িঘর জ্বালিয়ে দিয়েছে। সীমান্তের জিরো লাইন বরাবর দুই দিন থেকে থেমে থেমে ফাঁকা গুলিবর্ষণ করছে সে দেশের সেনাবাহিনী ও বিজিপির সদস্যরা।
এতে করে তুমব্রু সীমান্তের জিরো লাইনে বসবাসকারী ৬ হাজারেরও বেশি রোহিঙ্গা আবারও আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। এ ঘটনার পর বাংলাদেশ সীমান্তে বিজিবি’র টহল বাড়ানো হয়েছে।
বিজিবির কক্সবাজার সেক্টরের সেক্টর কমান্ডার কর্নেল আবদুল খালেক জানান, ওপার থেকে প্রায় সময়ই গুলির শব্দ শোনা যায়। নতুন করে রোহিঙ্গাদের ঘরবাড়িতে আগুন দিয়েছে কি না, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে খবর নেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। বিজিবি সীমান্তে সতর্ক অবস্থায় রয়েছে বলে জানান সেক্টর কমান্ডার।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, বুধবার বিকেলে তুমব্রু সীমান্তে মিয়ানমারের ঢেকুবনিয়া এলাকায় নতুন করে রোহিঙ্গাদের বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেয়া হয়। রাতেও আগুন দেয়া হয় ঘরবাড়িতে। বৃহস্পতিবার সকালে ওই এলাকায় জ্বালানো ঘরবাড়িগুলো থেকে ধোঁয়া উড়তে দেখা গেছে। সীমান্তের ওপার থেকে আতঙ্কে জিরো লাইনে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় শিবিরে চলে এসেছে বেশ কিছু রোহিঙ্গা।
ঘুনধুম ইউনিয়নের ইউপি চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আজিজ জানিয়েছেন, বুধবার বিকেলে তুমব্রু সীমান্তের ওপারে কিছু ঘরবাড়িতে প্রথম আগুন দেয়া হয়। পরে রাতেও সেখানে আগুন জ্বলতে দেখা গেছে। ইউপি সদস্য আবদুর রহিম জানান, মিয়ানমারে এখনো রোহিঙ্গাদের উপর নির্যাতন-নিপীড়ন চলছে। তবে বেশ কিছুদিন বন্ধ থাকলেও আবারও ওপারে ঘরবাড়িতে নতুন করে আগুন দেয়ার খবর পাওয়া গেছে।
শিবিরের রোহিঙ্গা নেতা আবু ইউসুফ জানিয়েছেন, জিরো লাইনে বসবাসকারীদের চলে যাওয়ার জন্য সেনাবাহিনী ও বিজিপি বারবার হুমকি দিচ্ছে। প্রায় সময় ক্যাম্পগুলো থেকে আচমকা গুলিবর্ষণ করা হয়। বুধবার রাতেও বেশ কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলিবর্ষণ করা হয়েছে সীমান্তের ওপার থেকে। তুমব্রু সীমান্তের জিরো লাইনে বসবাসকারী রোহিঙ্গারা এখন চরম আতঙ্কের মধ্য দিয়ে দিন কাটাচ্ছেন বলে জানান তিনি।
তুমব্রু বাজারের বাসিন্দা মো. সফি জানান, গত কয়েক দিন আগে লাকড়ি কুড়ানোর জন্য শিবির থেকে কিছু রোহিঙ্গা তারকাঁটা বেড়া অতিক্রম করে ওপারে গেলে তাদের ধরে নিয়ে যাওয়া হয়। এখনো তাদের ছেড়ে দেয়নি বিজিপির সদস্যরা। তুমব্রু সীমান্তের ওপারে প্রচুর সংখ্যাক মায়ানমারের সেনাবাহিনী অবস্থান নিয়েছে।
উল্লেখ্য, গত ২৫ আগস্ট মিয়ানমারে সহিংসতার পর বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তে ১৫ হাজারেও বেশি রোহিঙ্গা অবস্থান নেন। এদের মধ্যে সাপমারা ঝিড়ি, বড় ছনখোলা এলাকা থেকে রোহিঙ্গাদের কক্সবাজারের উখিয়ার শরণার্থী শিবিরে সরিয়ে নেয়া হলেও তুমব্রু সীমান্তের জিরো লাইনে এখনো ছয় হাজারেও বেশি রোহিঙ্গা রয়ে গেছেন। এদের কবে নাগাদ সরিয়ে নেয়া হবে তা এখনো জানাতে পারেনি বান্দরবান জেলা ও নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা প্রশাসন।
বান্দরবানের জেলা প্রশাসক দিলিপ কুমার বণিক সাংবাদিককে জানান, ইউএনএইচসিআরের সহযোগিতায় শরণার্থী প্রত্যাবাসন কমিশন ইতোমধ্যে নাইক্ষ্যংছড়ি সদরের প্রায় সাড়ে ৬ হাজার রোহিঙ্গাকে কুতুপালং শরণার্থী শিবিরে সরিয়ে নিয়েছে। খুব শীঘ্রই অন্য রোহিঙ্গাদেরও সরিয়ে নেয়া হবে।
পাঠকের মতামত: