প্রেস বিজ্ঞপ্তি :: ‘তোমরা কৃতিত্বের সঙ্গে মাধ্যমিক স্তর পেরিয়েছ। পরবর্তী স্তরেও এই সফলতা ধরে রাখতে হবে। স্বপ্ন, সাহস, সময়-এই তিনটি শব্দের তিনটি ‘স’কে আলিঙ্গন করতে পারলে জীবনকে রাঙাতে পারবে। স্বপ্নের কথা ছড়িয়ে দিতে হবে অন্যদের মধ্যেও। সফল হওয়ার জন্য জানার পরিধি বাড়াতে হবে।’
কক্সবাজারে চলতি বছরের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পাওয়া কৃতী শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বিশিষ্টজনেরা এভাবেই পরামর্শ দেন। প্রথম আলো এই উৎসবের আয়োজন করেছে শিক্ষার ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ‘শিখো’র পৃষ্ঠপোষকতায়।
উৎসবের শুরুতে প্রথম আলোর কক্সবাজারের অফিস প্রধান আব্দুল কুদ্দুস রানা মাদক, মিথ্যা ও মুখস্থকে না বলার পাশাপাশি ভালো শিক্ষার্থী হওয়ার অঙ্গীকার করান কৃতী শিক্ষার্থীদের।
শুক্রবার সকাল ১০টায় বন্ধুসভার সদস্যদের জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে কক্সবাজার শহরের ঐতিহ্যবাহী বায়তুশ শরফ জব্বারিয়া একাডেমি প্রাঙ্গণে এই উৎসব শুরু হয়। অনুষ্ঠান চলে দুপুর ১২টা পর্যন্ত।
কক্সবাজার সিটি কলেজ বন্ধুসভার সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলামের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে ছিল আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন প্রথম আলোর কক্সবাজারের নিজস্ব প্রতিবেদক আব্দুল কুদ্দুস ও ফ্রেশ কোম্পানির জেলা বিক্রয় ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ শাহজাহান সিরাজ।
অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের উদ্দ্যেশে দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য দেন প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক কবি ও সাহিত্যিক বিশ্বজিৎ চৌধুরী, কক্সবাজার উত্তরণ মডেল কলেজের অধ্যক্ষ এ কে এম ফজলুল করিম চৌধুরী, কক্সবাজার সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ মো. সোলাইমান, কক্সবাজার জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নাছির উদ্দিন, কক্সবাজার বায়তুশ শরফ জব্বারিয়া স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রধান শিক্ষক মো. ছৈয়দ করিম, কক্সবাজার সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রাম মোহন সেন ও কক্সবাজার সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাসুদা মোর্শেদা আইভি।
বিশ্বজিত চৌধুরী বলেন, ‘যে ভালো, যে আলোকিত সে সবসময় আলোকিত। চারপাশ জানতে হবে। পড়াশোনা করতে হবে। পাঠ্য ও অপাঠ্য সব জানতে হবে। মানুষকে ভালোবাসতে পারলে দেশকেও ভালোবাসতে পারবে।’
একে এম ফজলুল করিম চৌধুরী বলেন, ‘তোমরা ভালো শিক্ষার্থী ছিলে। তবে একমাস আগে পর্যন্ত। এখন ভালো শিক্ষার্থী বলব না। তুমি যে ভালো শিক্ষার্থী সেটি প্রমাণ করতে হবে আগামী দুই বছর। মেধা, প্রজ্ঞা কাজে লাগিয়ে আগামীতেও যদি জিপিএ-৫ পাও, তাহলে বলব তুমি ভালো শিক্ষার্থী। সমাজে ভালো হওয়ার উপাদন খুব একটা নেই। তবে খারাপ হওয়ার উপাদান সর্বত্র বিরাজমান। সুতরাং সাবধান। অনুরোধ থাকবে একটু ভালো মানুষ হও, বিনয়ী হও।’
নাছির উদ্দিন বলেন, ‘তোমরা মূল্যবান স্তর শেষ করেছো। এসএসসি পাস করেছো। জিপিএ ৫ পেয়েছো। সামনের দুটি বছর খুব গুরুত্বপূর্ণ। এই দুই বছর শুধুই পড়বে। নইলে তোমরা জীবন থেকে পড়ে যাবে। স্বপ্ন, সাহস, সময় এই তিনটি শব্দের তিনটি ‘স’কে আলিঙ্গন করতে পারলে জীবনকে রাঙাতে পারবে।’
মো. ছৈয়দ করিম বলেন, ‘মুঠোফোন ইতিবাচক কাজে ব্যবহার করতে হবে। এসএসসিতে জিপিএ ৫ পেয়েছো। এইচএসসিতেও জিপিএ ৫ পেতে হবে। নইলে ১০ বছরের সাধনা বৃথা যাবে।’
এর আগে সকাল আটটা থেকে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি উপেক্ষা করে বায়তুশ শরফ জব্বারিয়া একাডেমি প্রাঙ্গনে সমাবেত হতে থাকে কৃতী শিক্ষার্থীরা। সকালে আকাশে মেঘের ঘনঘটা থাকলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মেঘ ভেদ করে বেরিয়ে আসে শরতের সূর্য। সকাল ১০টার দিকে প্রাঙ্গণজুড়ে ঝলমলে রোদ। এ সময় আনন্দে মেতে উঠতে দেখা যায় শিক্ষার্থীদের। সহপাঠীরা একে অপরকে দেখে জড়িয়ে ধরে কুশল বিনিময় করছিল। কেউ আড্ডায় মশগুল হয়ে পড়ে। আর কেউবা মাঠের দক্ষিণ অংশে সেলফি জোনে ব্যস্ত ছিল ছবি তোলায়। অভিভাবকদেরও উৎসাহ ছিল চোখে পড়ার মতো। এ সময় পুরো মাঠে উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছিল। এ অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের জন্য ছিল নানা আয়োজন। সংবর্ধনার নিবন্ধনের কার্ড নিয়ে সারিবদ্ধভাবে শিক্ষার্থীরা বায়তুশ শরফ জব্বারিয়া একাডেমির মাঠের উত্তর পাশের স্টল থেকে ক্রেস্ট আর নাশতা সংগ্রহ করে।
৭০ কিলোমিটার দূর থেকে উৎসব প্রাঙ্গণে হাজির হয়েছে পেকুয়া সরকারি মডেল জিএমসি ইনস্টিটিউশন থেকে জিপিএ–৫ পাওয়া কৃতী শিক্ষার্থী সৈয়দা সায়মা ফেরদৌসী। সায়মা বলে, ‘দীর্ঘদিন পর বড় পরিসরে কোনো অনুষ্ঠানে এসেছি। দেখা হচ্ছে বন্ধুদের সঙ্গে। লম্বা পথ পাড়ি দিয়ে এলেও অনেক দিন পর বন্ধুদের একত্র পেয়ে সব ক্লান্তি ভুলে গেছি। অনেক ভালো লাগছে। ধন্যবাদ আয়োজকদের।’ কৃতী শিক্ষার্থী সৈয়দা সায়মার সঙ্গে এসেছেন তার বাবা সৈয়দ মোহাম্মদ আবু মুছা ও মা ফাতেমা জান্নাতও। তাঁরা মেয়ের সঙ্গে, মেয়ের বন্ধুদের সঙ্গে সেলফি জোনে সেলফি তুলছেন। সেলফি তুলতে তুলতে সৈয়দ মোহাম্মদ আবু মুছা বলেন, ‘মেয়ে জিপিএ–৫ পেয়েছে। সেই আনন্দ পরিবারের সবার। প্রথম আলো বড় পরিসরে আনন্দ ভাগাভাগির সুযোগ করে দিয়েছে।’
চকরিয়া উপজেলা সহকারী নির্বাচন কর্মকর্তা মোহাম্মদ নুরুল হুদা ও তাঁর স্ত্রী ফারহানা ইয়াসমিন এসেছেন জিপিএ–৫ পাওয়া দুই মেয়েকে নিয়ে। একসঙ্গে দুই মেয়ে জিপিএ–৫ পাওয়ায় তাঁদের মধ্যে খুশির বন্যা বয়ে যাচ্ছে। চকরিয়া সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয় থেকে জিপিএ–৫ পাওয়া তাঁদের দুই মেয়ে ফারিয়া হুদা ও ফৌজিয়া হুদা বলে, ‘দুই বোন একসঙ্গে কৃতী শিক্ষার্থী সংবর্ধনার জন্য অনলাইনে নিবন্ধন করেছি। মা–বাবাকে সঙ্গে নিয়ে দুজনেই একসঙ্গে অনুষ্ঠানে এসেছি। এমন একটি অনুষ্ঠানে আসতে পেরে খুব ভালো লাগছে। আমাদের সঙ্গে মা–বাবাও অনুষ্ঠান উপভোগ করছে।ৃ’
সারা দেশের ৬৪টি জেলায় প্রথম আলোর আয়োজনে ও শিক্ষার ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ‘শিখো’র পৃষ্ঠপোষকতায় জিপিএ-৫ প্রাপ্ত কৃতী শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। কক্সবাজারের উৎসবে অংশ নিতে বিভিন্ন উপজেলার জিপিএ-৫ পাওয়া ৭৮১ শিক্ষার্থী নিবন্ধন করে।
পাঠকের মতামত: