ঢাকা,বৃহস্পতিবার, ৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

মাঠের লড়াইয়ে ৮ মেয়র প্রার্থী

অনলা42273_b1ইন ডেস্ক ::::

নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী ও বিএনপির মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খানসহ ৮ জনের মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করা হয়েছে। বাতিল হয়েছে স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট সুলতান মাহমুদের মনোনয়নপত্র। রোববার নারায়ণগঞ্জ ক্লাব লিমিটেডে মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের শেষ দিনে নাসিক নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার মো. নুরুজ্জামান তালুকদার এ তথ্য জানান। বাছাইয়ের সময় বিএনপির মেয়র প্রার্থীসহ একাধিক মেয়র প্রার্থী নির্বাচনে সেনা মোতায়েনের দাবি জানিয়েছেন। তবে রিটার্নিং অফিসার তাদেরকে তার উপর আস্থা রাখতে বলেছেন।
রিটার্নিং অফিসার মো. নুরুজ্জামান তালুকদার জানান, মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের শেষ দিনে একজন মেয়র ও একজন কাউন্সিলরের (সাধারণ) মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ৩০০ জনের স্বাক্ষর প্রয়োজন। কিন্তু সেখানে ৩ জনের স্বাক্ষর কম থাকায় মেয়র প্রার্থী সুলতান মাহমুদের মনোনয়ন বাতিল ঘোষণা করা হয়েছে। তবে তিনি ২৯শে নভেম্বর পর্যন্ত ঢাকা বিভাগীয় কার্যালয়ে আপিল করতে পারবেন। আর সকল কাগজপত্র ঠিক থাকায় অপর ৮জন মেয়র প্রার্থীর মনোনয়ন বৈধ ঘোষণা করা হয়েছে। তারা হলেন, আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী, বিএনপি মনোনীত প্রার্থী অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির অ্যাডভোকেট মাহবুবুর রহমান ইসমাইল, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মুফতি মাসুম বিল্লাহ, জাসদের মোসলেম উদ্দিন, এলডিপির কামাল প্রধান, কল্যাণ পার্টির রাশেদ ফেরদৌস ও ইসলামী ঐক্যজোটের এজহারুল ইসলাম। মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের সময়ে সেলিনা হায়াত আইভী ছাড়া বাকি সকল মেয়র প্রার্থী ও তাদের প্রস্তাবকারী সমর্থনকারী উপস্থিত ছিলেন।
নির্বাচন সুষ্ঠু করতে মেয়র প্রার্থীদের প্রতিক্রিয়া নিলেন রিটার্নিং অফিসার
এদিকে মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের সময় মেয়র প্রার্থীদের প্রতিক্রিয়া নেন রিটার্নিং অফিসার নুরুজ্জামান তালুকদার। এ সময় মেয়র প্রার্থী ডা. সেলিনা হায়াত আইভীর প্রস্তাবকারী আব্দুর মো. রাশেদ রাশু বলেন, আমি মনে করি নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সেনাবাহিনীর কোনো প্রয়োজন নেই। গতবারের নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে এবারের নির্বাচনও সুষ্ঠু হবে।
বিএনপির মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান বলেন, নির্বাচন সুষ্ঠু করার জন্য লেভেল  প্লেয়িং ফিল্ড চাই। নারায়ণগঞ্জে অনেক অবৈধ অস্ত্র রয়েছে যেগুলো এখনো উদ্ধার করা হয়নি। নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার করার জন্য এই অস্ত্রগুলোর ব্যবহার হতে পারে। অনেক ক্ষেত্রে জনগণের আস্থা কমে গেছে। সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে সেনাবাহিনী মোতায়েন করার জন্য আমি নির্বাচন কমিশনের প্রতি আহ্বান জানাই।
ইসলামী আন্দোলনের মনোনীত প্রার্থী মাসুম বিল্লাহ বলেন, অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেনের বক্তব্যের সঙ্গে আমিও একমত। এ ছাড়াও প্রশাসনের মধ্যে দলীয়করণ বন্ধ করতে হবে।
কমিউনিস্ট পার্টির মনোনীত প্রার্থী রাশেদ ফেরদৌস বলেন, ভোটাররা সকলেই সুষ্ঠু ও সুন্দর পরিবেশ চাই। তাই সুষ্ঠু ও সুন্দর পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে।
জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদের মনোনীত প্রার্থী মুসলেম উদ্দিন বলেন, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের নির্বাচনকে সুষ্ঠু করার লক্ষ্যে যে সময় যে পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন নির্বাচন কমিশন তাই নিবে। আর সেনাবাহিনী মোতায়েন করার বিষয়টি সময়েই বলে দিবে।
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির মনোনীত প্রার্থী অ্যাডভোকেট মাহবুবুর রহমান ইসমাঈল বলেন, যে কোনো কারণেই হোক না কেন নারায়ণগঞ্জকে সবাই সন্ত্রাসের জনপদ হিসেবেই চিনে। অনেক ভোটারেরই প্রশ্ন সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন হবে কিনা।
ইসলামী ঐক্যজোটের মনোনীত প্রার্থী মুফতি এজহারুল হক বলেন, সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হোক আমরা সবাই চাই।
এলডিপির কামাল প্রধান বলেন, সেনাবাহিনী এই মুহূর্তে আপাতত নামানো প্রয়োজন নেই। আমি আশা করছি সুষ্ঠু ও অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এবং ভোটাররা শান্তিপূর্ণভাবে তাদের ভোট প্রয়োগ করতে পারবেন।
আমার উপর আস্থা রাখুন-রিটার্নিং অফিসার
মেয়র প্রার্থীদের প্রতিক্রিয়া শোনার পর রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. নুরুজ্জামান তালুকদার বলেন, এখন পর্যন্ত নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের পরিবেশ ভালো আছে। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, এই মুহূর্তে কী সেনাবাহিনীর প্রয়োজন আছে? প্রয়োজন নেই। কারণ পরিস্থিতি খারাপ হয়নি। সেনাবাহিনীর প্রয়োজন হলে তখন পরিস্থিতি বুঝে ব্যবস্থা নেয়া হবে। আপনারা আমার প্রতি আস্থা রাখুন। নজিরবিহীন নির্বাচন সৃষ্টি করতে আপনারা আমাকে সহযোগিতা করেন। আমি আপনাদের সহযোগিতা চাই। তিনি আরো বলেন, আমার কাছে কোনো কেন্দ্রই ঝুঁকিমুক্ত নয়, আমি সব কেন্দ্রকেই সমানভাবে গুরুত্ব দেবো।
আরো ২ জনের মনোনয়নপত্র বাতিল
এদিকে মনোনয়নপত্র যাচাই বাছাইয়ের দ্বিতীয় দিন রোববার সকাল সাড়ে ৯টা থেকে নারায়ণগঞ্জ ক্লাব লি. মিলনায়তনে প্রার্থীদের উপস্থিতিতে যাচাই-বাছাই শুরু হয়। বিকাল ৫টা পর্যন্ত একজন মেয়র প্রার্থী ও ৪ কাউন্সিলর প্রার্থীর মনোনয়ন বাতিল করা হয়েছে। ৩০০ জনের স্বাক্ষরের স্থলে ৩ জনের স্বাক্ষর না থাকায় স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট সুলতান মাহমুদের প্রার্থিতা বাতিল হয়। এছাড়া ২২নং ওয়ার্ডে কাউন্সিলর প্রার্থী মো. শাহ আলমের প্রার্থিতা বাতিল হয়েছে। এর আগে প্রথমদিনে শনিবার নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ঋণখেলাপি, কর পরিশোধ না করা, বয়স কম হওয়ায় ১০ প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল করেন রিটার্নিং অফিসার।
জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা শেখ মো. আদিল জানান, বাছাইয়ে একজন মেয়র প্রার্থী, একজন সংরক্ষিত কাউন্সিলর প্রার্থী ও ১০ জন সাধারণ কাউন্সিলর প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল ঘোষণা করা হয়। ৮জন মেয়র প্রার্থী, ৩৭ জন সংরক্ষিত কাউন্সিলর প্রার্থী ও ১৬৬ জন সাধারণ কাউন্সিলর প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করা হয়েছে।
মনোনয়নপত্র জমার শেষ দিন ২৪ নভেম্বর পর্যন্ত মেয়র পদে ৯জন, ২৭টি ওয়ার্ডে কাউন্সিলর (সাধারণ) পদে ১৭৫ জন এবং সংরক্ষিত ৯টি মহিলা ওয়ার্ডে ৩৮ জন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন।
১৪ ডিসেম্বর আইনশৃঙ্খলা বৈঠক
এদিকে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচন সামনে রেখে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পর্যালোচনা করতে ১৪ ডিসেম্বর শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে বসবে নির্বাচন কমিশন। রোববার কমিশনের মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান ইসি সচিব মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ।
তিনি বলেন, ‘নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচন উপলক্ষে এলাকায় উৎসবমুখর পরিস্থিতি বিরাজ করছে। আশা করছি, নারায়ণগঞ্জবাসী ও জাতি একটি ভালো নির্বাচন দেখবে। ভালো নির্বাচন করার জন্যে সব ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হবে।”
ইসি সচিব বলছেন, ১৪ই ডিসেম্বর শেরেবাংলা নগরে এনইসি মিলনায়তনে আইনশৃঙ্খলা বৈঠকে সব দিক পর্যালোচনা করেই সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
তিনি জানান, নির্বাচনী এলাকায় বৈধ অস্ত্র জমা দেওয়া, অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার ও ‘ধর্মীয় সংখ্যালঘু’ সমপ্রদায়ের নিরাপত্তা নিশ্চিতে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়ার জন্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং কর্মকর্তা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী ‘যথাসময়ে’ কার্যক্রম নেবেন।

পাঠকের মতামত: