ঢাকা,শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪

মগনামা আলিম মাদ্রাসায় তিন দফায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি নিয়ে জনমনে বিভ্রান্তি!

মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন, পেকুয়া ::  কক্সবাজার জেলার পেকুয়া উপজেলার মগনামা মাঝির পাড়া শাহ রশিদিয়া আলিম মাদ্রাসায় শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি নিয়ে চাকুরী প্রার্থী ও জনমনে চরম বিভ্রান্তি এবং ধোঁয়াশার সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয় ও জাতীয় পত্রিকায় একেক সময় একেক ধরনের গলাকাটা ফি নির্ধারণ করে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেওয়ার কারণে এ বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, তাঁরা নিজেদের পছন্দের প্রার্থীদের নিয়োগ পাইয়ে দিতেই বিভ্রান্তিকর নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে। অপরদিকে মগনামা শাহ রশিদিয়া আলিম মাদ্রাসার শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি নিয়ে জনমনে বিভ্রান্তির, কঠোর সমালোচনার পাশাপাশি এলাকায় ব্যাপক হাস্যরসেরও সৃষ্টি হয়েছে!

 জানা যায়, উক্ত মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ ২০১৯ ইংরেজী থেকে ২০২২সালের ফেব্রæয়ারী পর্যন্ত পৃথক তিন দফায় একেক ধরণের ফি নির্ধারণ করে তিনটি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে জাতীয় ও স্থানীয় পত্রিকায়! তিনটি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতেই চাকুরী প্রার্থীদের কাছ থেকে একই পদে তিন ধরনের ফি চাওয়া হয়েছে। একটি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেওয়ার পর গলাকাটা ফি নির্ধারণ করে পুনরায় বিজ্ঞপ্তি দিয়ে চাকুরী প্রার্থী ও জনমনে বিভ্রান্তি ছড়িয়ে মূলত তাদের পছন্দের প্রার্থীদের নিয়োগ দিতে মরিয়া হয়ে উঠেছে সংশ্লিষ্টরা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিগত ২০১৯ ইংরেজীতে ওই মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ ১ম দফায় জাতীয় দৈনিক সমকালে একটি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। ওই নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর পদে একজনকে নিয়োগের জন্য দরখাস্ত আহবান করা হয়েছিল। সেখানে নিয়োগ ফি চাওয়া হয়েছিল দেড় হাজার টাকা! সেবার প্রায় ১০ জনেরও অধিক প্রার্থী দেড় হাজার টাকা ফি দিয়ে ওই পদে আবেদন করেছিল। তবে সে পদে অদ্যবধি পর্যন্ত কোন লোক নিয়োগ দেওয়া হয়নি। এরপর ২০২১ ইংরেজী ১৭ আগষ্ট জাতীয় দৈনিক প্রথম আলো ও স্থানীয় দৈনিক বাঁকখালী পত্রিকায় ওই মাদ্রাসার উপাধ্যক্ষসহ ৬পদে শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগের জন্য একটি বিজ্ঞপ্তি দেয়।  ওই বিজ্ঞপ্তিতে উপাধ্যক্ষ পদে ১জন, অফিস সহকারী কাম হিসাব সহকারী ১জন, অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপরাটের পদে ২জন, নিরাপত্তাকর্মী পদে ১জন ও আয়া পদে ১ জন নিয়োগের জন্য আগ্রহী প্রার্থীদের কাছ থেকে দরখাস্ত আহবান করা হয়। ২য় দফায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে উপাধ্যক্ষ পদের নিয়োগ পরীক্ষার জন্য চাকুরী প্রার্থীদের কাছ থেকে ৫ হাজার টাকা, অফিস সহকারী কাম হিসাব সহকারী ও অফিস সহকারী কম্পিউটার অপারেটর পদে ৩হাজার টাকা, আয়া ও নিরাপত্তা কর্মী পদে ২০০০টাকা ফি চাওয়া হয়েছিল।

 এদিকে উক্ত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি পত্রিকায় প্রকাশিত হলে মাদ্রাসা অধ্যক্ষ কর্তৃক গলাকাটা ফি চাওয়া নিয়ে স্থানীয় ও জাতায় গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হলে পুরো জেলাজুড়ে সমালোচনার সৃষ্টি হলে আর জনবল নিয়োগ দিতে পারেনি।

গলাকটা ফি নির্ধারণ করে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেওয়ায় মগনামা মাঝির পাড়া শাহ রশিদিয়া আলিম মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মোহাম্মদ নুরের বিরুদ্ধে মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের ডিজি, কক্সবাজার জেলা প্রশাসক, ও কক্সাবজার  জেলা শিক্ষা অফিসারের দফতরে স্থানীয় সচেতন মহল লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে বিগত ০৮/০৯/২০২১ইংরেজী তারিখে উক্ত মাদ্রাসার অধ্যক্ষ কক্সবাজার জেলা শিক্ষা অফিসারের কার্যালয়ে হাজির হয়ে একটি মুচলেকা প্রদান করে। অধ্যক্ষ কর্তৃক স্বাক্ষরিত ওই মুচলেকায় উল্লেখ করেন, ‘‘এই মর্মে আমি নিম্ন স্বাক্ষরকারী ঘোষনা করছি যে, মগনামা মাঝির পাড়া শাহ রশিদিয়া আলিম মাদ্রাসা কর্তৃক বিগত ১৭ আগস্ট ২০২১ খ্রি: শিক্ষক কর্মচারী নিয়োগ করার জন্য নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রচার করা হয়েছিল। যাতে ফি এর হার বেশি হয়েছিল। যাতে আমার মত ছিলনা। এ বিষয়ে আমি দু:খ প্রকাশ করছি। ভবিষ্যতে এ নিয়োগ বিষয়ে যাবতীয় সিদ্ধান্ত আমরা সম্মাণিত জেলা শিক্ষা অফিসার মহোদয়ের অনুমোদন নিয়ে করব’’

জানা যায়, কক্সবাজার জেলা শিক্ষা অফিসারের কাছে মুচলেকা দিয়ে গলাকাটা ফি নির্ধারণ নিয়ে নিজের সম্পৃক্ততার কথা অস্বীকার করলেও নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেওয়ার পূর্বে মাদ্রাসার পরিচালনা কমিটির মিটিংয়ে নিয়োগ সংক্রান্ত বিষয়ে প্রণীত রেজুলেশনে অধ্যক্ষ মোহাম্মদ নুরের স্বাক্ষর এবং সম্মতি ছিল। ২য় দফায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে গলাকাটা ফি চাওয়ায় নিয়োগ কার্যক্রম শুরু করতে পারেনি মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ এবং বিতর্কিত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিটি বাতিল করা হয়নি। এছাড়াও যে সব প্রার্থী গলাকাটা ফি দিয়ে বিভিন্ন পদে নিয়োগ পাওয়ার আশায় আবেদন করেছিল তাদের ফিও ফেরৎ দেয়নি।

এদিকে ২য় দফা গলাকাটা নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির সমালোচনা-বিতর্ক শেষ না হতেই আজ ১৮ ফেব্রæয়ারী জাতীয় দৈনিক নয়া দিগন্ত ও স্থানীয় দৈনিক আজকের দেশ বিদেশ পত্রিকায় ৮টি পদে শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগের জন্য ফের বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে মাদ্রাসার অধ্যক্ষ! ওই বিজ্ঞপ্তিতে নব সৃষ্ট পদে ১জন উপাধ্যক্ষ, ১ জন ইবতেদায়ী প্রধান, ১ জন অফিস সহকারী কাম হিসাব সহকারী, শুণ্য পদে অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপাারেট পদে ২ জন, ল্যাব সহকারী পদে ১ জন, নিরাপত্তা কর্মী পদে ১ জন, নৈশ প্রহরী পদে ১ জন  ও আয়া পদে ১জন করে নিয়োগ করা হবে মর্মে বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। এবার উপাধ্যক্ষ পদে নিয়োগ পরীক্ষার ফি চাওয়া হয়েছে ১ হাজার টাকা। ইবতেদায়ী প্রধান পদে ৮’শ টাকা, হিসাব সহকারী, অফিস সহকারী ও ল্যাব সহকারী পদে ফি চাওয়া হয় ৭০০টাকা, নিরাপত্তা কর্মী, নৈশ প্রহরী ও আয়া পদে ফি চাওয়া হয়েছে ৫’শ টাকা।

কয়েকজন চাকুরী প্রার্থী অভিযোগ করে জানান, ২য় দফায় বিজ্ঞপ্তিতে উপাধ্যক্ষ পদে ৫হাজার টাকা ফি চাওয়া হয়েছিল। আর এবার ২য় দফার নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে উপাধ্যক্ষ পদে ফি চাওয়া হয়েছে ১হাজার টাকা। একেক সময় একেক ধরনের নিয়োগ ফি চাওয়া নিয়োগের নামে এক ধরনের প্রতারণার ছাড়া আর কিছুই নয়। তিন দফায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে তিন ধরনের ফি চাওয়া অগ্রহণযোগ্য এবং বিভ্রান্তিকর। চাকুরী প্রার্থীরা তিন দফায় দেওয়া মাদ্রাসার শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগের বিজ্ঞপ্তিটি বাতিল করে এক ধরনের ফি নির্ধারণ করে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগদানের জন্য মাদ্রাসার শিক্ষা অধিদপ্তরের ডিজি, কক্সবাজার জেলা শিক্ষা অফিসারসহ উর্দ্ধতন প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

তিন দফায় তিন ধরনের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে একই পদে তিন ধরনের ফি চাওয়া নিয়ে জানতে চাইলে মগনামা মাঝির পাড়া শাহ রশিদিয়া আলিম মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মোহাম্মদ নুর জানান, সব নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির পূর্বে মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির রেজুলেশন রয়েছে। এখানে অধ্যক্ষ’র একক সিদ্ধান্তে কিছুই হয়না। মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির রেজুলেশনের মাধ্যমেই নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে দৃস্টি আকর্ষ করা হলে কক্সবাজার জেলা শিক্ষা অফিসার মো: নাছির উদ্দিন জানান, নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির আলোকে চাকুরী প্রার্থীদের কাছ থেকে নিয়োগ পরীক্ষার ফি চাওয়ার একটা নিয়ম রয়েছে। এর বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই। মগনামা মাদ্রাসা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তিন ধরনের বিজ্ঞপ্তিতে তিন ধরনের ফি চাওয়া বিভ্রান্তিকর। লিখিত অভিযোগ পেলে তিনি অবশ্যই মগমানা মাঝির পাড়া আলিম মাদ্রাসার নিয়োগের বিষয়ে খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।

পাঠকের মতামত: