ঢাকা,শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪

ভোট শেষ, নিহত ৬

image_152059_0নিউজ  ডেস্ক :::

ঢাকা: ব্যাপক অনিয়ম আর প্রাণহানির মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে দ্বিতীয় ধাপে ৬৩৯ ইউনিয়ন পরিষদের  ভোট গ্রহণ।

বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা থেকে একটানা বিকাল ৪টা পর্যন্ত এ ভোট গ্রহণ করা হয়।

ভোট শুরুর কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই দেশের বিভিন্ন স্থানে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রার্থীর সমর্থকরা কেন্দ্র দখল করে জাল ভোট দিতে শুরু করে। বিএনপি এবং আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীরা তাদের পাল্টা জবাব দিতে গেলে সংঘর্ষ শুরু হয়।

এ সব সংঘর্ষে বেলা ১১টার মধ্যই রাজধানীর কেরানীগঞ্জে শিশু শুভ, যশোর সদর উপজেলার চাঁচড়ায় ফেরিওয়ালা আবদুস সাত্তার ও জামালপুরের শ্যামপুর ইউনিয়নে রফিকুল ইসলাম নিহত হন। সন্দ্বীপের বাউরিয়া ইউনিয়নে পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছেন তিন জন।

নির্বাচনি সহিংসতায় সারাদেশে আহত হয়েছেন সহস্রাধিক ব্যক্তি।

ভোট কেন্দ্র দখল, ব্যালট ছিনতাই, জাল ভোট আর ব্যাপকহারে নির্বাচনী সহিংসতার কারণে অন্তত ২৫ জন চেয়ারম্যান প্রার্থী নির্বাচন বর্জন করেছেন।

এর আগে প্রথম ধাপের নির্বাচনে ভোটের দিন সহিংসতায় নিহত হয়েছেন ১১ জন।

সন্দীপ: ইউনিয়ন পরিষদ দ্বিতীয় ধাপে নির্বাচনে সহিংসতায় সন্দ্বীপে পুলিশের গুলিতে তিনজন নিহত হয়েছে।
তারা হলেন, সানাউল্লাহ, জামাল ও ইব্রাহিম।

বৃহস্পতিবার বিকেল প্রায় ৪টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।

সন্দ্বীপ উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাইফুল ইসলাম জানান, ভোটগ্রহণ শেষ হওয়ার কিছু পূর্বে দুই সদস্য প্রার্থী শাহেদ ও জামালের সমর্থকরা ভোট কেন্দ্র দখল করার চেষ্টা করছিল। এ সময় পুলিশ গুলিবর্ষণ করে। এতে ঘটনাস্থলে সানাউল্লাহ ও ইব্রাহিম এবং হাসপাতালে নেয়ার পথে জামাল নিহত হন।

যশোর: যশোর সদরের নওয়াপাড়া ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে আড়পাড়া ভোট কেন্দ্রের বাইরে দুই পক্ষের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার সময় হাসান (৩০) নামের এক যুবক গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। তিনি আওয়ামী লীগকর্মী বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে।

বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় ভোটগ্রহণ শুরুর পর দুই ইউপি সদস্যপ্রার্থীর লোকজন সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়লে ওই যুবক গুলিবিদ্ধ হন।

হাসানের পেটে ও বুকে গুলি লাগে। তাকে যশোর সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, তার অবস্থা গুরুতর। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, হাসানের বাড়ি যশোর সদরের শাহাপুর এলাকায়।

এ ব্যাপারে কোতয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইলিয়াস হোসেন জানান, ভোট কেন্দ্রে কোনো সংঘর্ষ হয়নি। তবে কেন্দ্রের বাইর সংঘর্ষ হয়ে থাকতে পারে।

জামালপুর: জামালপুরের মেলান্দহে ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনী সহিংসতায় রফিকুল ইসলাম (৫২) নামের এক ব্যক্তি মারা গেছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন অন্তত চারজন।

বৃহস্পতিবার বেলা সোয়া ১১টার দিকে উপজেলার শ্যামপুর ইউনিয়নের উত্তর বালুরচর কেন্দ্রের বাইরে দুই মেম্বার প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া ও সংঘর্ষের সময় প্রাণ হারান রফিকুল ইসলাম।

জামালপুরের সহকারী পুলিশ সুপার ইউনুস মিয়া জানান, ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার সময় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ওই ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে।

কেরাণীগঞ্জ: দ্বিতীয় ধাপে শুরু হওয়া ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে কেরাণীগঞ্জে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর ক্যাডারদের হামলা ও গুলিতে শাহিদুল ইসলাম সুভ (১০) নামের এক শিশু গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছে। এই ঘটনায় আরো দুইজন গুলিবিদ্ধ হয়ে  আহত হয়েছেন।

বৃহস্পতিবার সকাল পৌনে ১০টার দিকে হযরতপুর ইউনিয়নের মধুরচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে এ ঘটনা ঘটে। নিহত শাহিদুল ইসলাম ওই এলাকার ঢালিকান্দি গ্রামের আলাল মোল্লার ছেলে।

স্থানীয়রা জানান, বৃহস্পতিবার সকাল পৌনে ১০টার দিকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আয়নালের ক্যাডার রানা মোল্লার নেতৃত্বে ২০ থেকে ৩০ জন অস্ত্রধারী কেন্দ্রে হামলা চালায়।

প্রত্যক্ষদর্শী রফিক মৃধা জানান, সকাল থেকে সুষ্ঠুভাবে ভোটগ্রহণ চলছিল। হঠাৎ ১০ টার দিকে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর ক্যাডাররা কেন্দ্রে হামলা চালায়। এ সময় তারা ১০ থেকে ১৫ রাউন্ড গুলি ছোড়ে। এতে স্থানীয় আলাল মোল্লার এক শিশু পুত্রসহ ৩ জন গুলিবিদ্ধ হয়।

গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় শিশু শাহিদুল ইসলামকে স্থানীয় মডার্ণ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। কিছুক্ষণের মধ্যে শিশুটির অবস্থার অবনতি হলে দ্রুত ঢাকা মেডিকেল কলেজে রেফার করা হয়। ঢাকায় নেয়ার পথে শিশুটি মারা যায়।

বাকি আহতরা এলাকার বিভিন্ন জায়গায় চিকিৎসা নিচ্ছেন। গোলাগুলির পর ওই কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ বন্ধ হয়ে যায়। পরে সংবাদ পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে বিজিবি উপস্থিত হয়। এ সময় সন্ত্রাসীরা পালিয়ে যায়।

বর্তমানে সেখানে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। তাৎক্ষণিকভাবে ভোটাররা আতঙ্কে ভোট কেন্দ্র ছেড়ে চলে যায়। এখন ঘটনাস্থলে অর্ধশতাধিক পুলিশ-বিজিবি ও র্যাব সদস্য মোতায়েন রয়েছে।

পাঠকের মতামত: