উখিয়া প্রতিনিধি ::
শ্রাবণের ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ী ঢলের তীব্রতায় উখিয়ার অধিকাংশ গ্রামীণ সড়ক উপ-সড়ক ক্ষতবিক্ষত হয়ে পড়েছে। যোগাযোগ ব্যবস্থার নাজুক পরিস্থিতির কারণে জনজীবন নেমে এসেছে নানা সংকট, সমস্যা, দূর্ভোগ। বিশেষ করে পালংখালী থেকে মনখালী ও থাইংখালী থেকে তেলখোলা মোছার খোলা সড়কের বিভিন্ন অংশে ব্যাপক আকারে ভাঙ্গনের সৃষ্টি হওয়ায় এসব এলাকার ছাত্রছাত্রীদের পড়ালেখা ব্যাহত, ব্যবসায়ী ও স্থানীয় জনসাধারণকে আর্থিক দূরবস্থার সম্মুখিন হতে হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এসব এলাকার হতদরিদ্র, নৃতাত্তিক জনগোষ্ঠীর স্বচ্ছলতা ও আর্থসামাজিক উন্নয়নে থাইংখালী থেকে তেলখোলা পর্যন্ত ৭ কিলোমিটার সড়কটি কার্পেটিংয়ের আওতায় আনার জন্য স্থানীয় জনসাধারণ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নিকট আবেদন করেছে বলে জানা গেছে। সূত্র মতে, খাল ছড়া, পাহাড় বেষ্টিত জনপদ উখিয়া উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন গ্রামের উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া দৃশ্যমান খালগুলো দীর্ঘদিন ধরে পুনঃখননের আওতায় না আনার কারণে খালের গভীরতা হ্রাস পেয়ে পানি নিষ্কাশনে বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে। ফলে প্রতি বর্ষা মৌসুমে এ উপজেলার প্রায় লক্ষাধিক মানুষ বন্যা ও জলাবদ্ধতায় আক্রান্ত হয়ে সহায়সম্পত্তির ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির শিকার হচ্ছে বলে ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারদের অভিযোগ।
পালংখালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এম. গফুর উদ্দিন চৌধুরী জানান, কক্সবাজার-টেকনাফ সড়কের থাইংখালী স্টেশন সংলগ্ন ৬০ মিটার দীর্ঘ ব্রীজটি ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ী ঢলের ¯্রােতে অত্যান্ত ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। সড়ক ও জনপদ বিভাগের লোকজন ব্রীজের নি¤œাংশে বালির বস্তা দিয়ে ভাঙ্গন প্রতিরোধের চেষ্টা করলেও তা টেকসই না হওয়ায় যেকোন মুহুর্তে এ ব্রীজটি ধ্বসে পড়ে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতে পারে। তিনি জানান, একই ভাবে থাইংখালী থেকে তেলখোলা পর্যন্ত ৭ কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠির আশ্রয়স্থল তেলখোলা মোচারখোলার মানুষ এখন জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। ভারী বর্ষণ, খাল থেকে অবৈধ বালি উত্তোলন, ভারী যানবাহন চলাচল, প্রভৃতি কারণে এ সড়কটির অবস্থা এখন কাহিল হয়ে পড়েছে। সড়কের ১ কিলোমিটার কার্পেটিং করা হলেও ভারী বর্ষণে তাও খানা খন্দকে একাকার হয়ে পড়েছে।
এ ইউনিয়নের ইউপি সদস্য মোজাফ্ফর আহমদ জানান, রোহিঙ্গা অধ্যুষিত এলাকা হিসেবে থাইংখালীর প্রায় ১৮টি গ্রামীণ সড়কে এখন অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। গত বর্ষা মৌসুমে ফরেষ্ট অফিসের সামনে দিয়ে ব্রীক সলিন নির্মিত সড়কটি খালের ভাঙ্গনে বিলিন হয়ে গেলেও ওই সড়কটি পুন:সংস্কারের আওতায় আনা হয়নি। যে কারণে চলতি বর্ষা মৌসুমে এ সড়কটি সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হওয়ার আশংকা দেখা দিয়েছে। রাজাপালং ইউপি চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরী জানান, মরহুম নুরুল ইসলাম চৌধুরী সড়কের ফলিয়াপাড়াস্থ ২০ মিটার দীর্ঘ ব্রীজটি ধ্বসে পড়ার ফলে মাছকারিয়া, মধুরছড়া, ফলিয়াপাড়া, মোহাম্মদ আলীর ভিটাসহ ৭ গ্রামের প্রায় ১০ হাজার মানুষকে পোহাতে হচ্ছে অবর্ণনীয় দূর্ভোগ। ধ্বসে পড়া ব্রীজটি পুন:নির্মাণে দীর্ঘসূত্রতায় চলতি বর্ষা মৌসুমেও এপার ওপারের জনসাধারণকে পোহাতে হচ্ছে অসহনীয় দূর্ভোগ। উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, গত কয়েকদিনের ভারী বর্ষণে উখিয়ার ৫টি ইউনিয়নে প্রায় অর্ধ শতাধিক গ্রামীণ সড়ক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। স্থানীয় ভুক্তভোগীদের অভিযোগ সড়কের বিভিন্ন স্থানে ভাঙ্গন ও ছোট বড় গর্তের সৃষ্টি হওয়ায় যানবাহন চলাচলতো দূরের কথা। পায়ে হেটেঁও ছাত্রছাত্রীরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে, ব্যবসায়ীরা হাটবাজারে ও সাধারণ মানুষকে নিত্য নৈমিত্তিক কার্যাদি সম্পূর্ণ করতে অপূরণীয় দূর্ভোগের শিকার হতে হচ্ছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ নিকারুজ্জামান চৌধুরী জানান, তিনি বেশ কয়েকটি এলাকা পরিদর্শণ করে গ্রামীণ যোগাযোগ ব্যবস্থা বিপর্যস্তের দৃশ্যমান স্থাপনা দেখেছেন। তিনি সাংবাদিকদের জানান, শুষ্ক মৌসুম ছাড়া এসব ভাঙ্গন কবলিত সড়ক উপসড়ক ও গ্রামীণ সড়ক সংস্কার সম্ভব নয়। তথাপিও তিনি এব্যাপারে উপজেলা প্রকৌশলী ও প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তাকে যতদূর সম্ভব গ্রামীণ সড়ক গুলো সংস্কারের আওতায় আনার নির্দেশ দিয়েছেন বলেন স্থানীয় সাংবাদিকদের জানিয়েছেন। এব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে সড়ক ও জনপদ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী রানা প্রিয় বড়–য়া সাংবাদিকদের জানান, থাইংখালী ব্রীজটি নতুন করে নির্মাণের জন্য একটি প্রাক্কলন তৈরি করে মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করা হয়েছে। বরাদ্ধ আসলে উক্ত ব্রীজটি পুণ:নির্মাণের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে। এছাড়াও কক্সবাজার-টেকনাফ সড়ককে অধিকতর গুরুত্ব দিয়ে সংস্কার করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
পাঠকের মতামত: