ঢাকা,বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪

বিশ্বে মানবপাচারের শীর্ষে মিয়ানমার: যুক্তরাষ্ট্র

At-least-50-shanties-gutted-in-major-fire-in-Rohingya-shelter-in-Delhi-rtv-rtv-online দিল্লিতে রোহিঙ্গা শিবিরে আগুনে পুড়েছে ৫০ ঘর

অনলাইন ডেস্ক : বিশ্বে সবচেয়ে ভয়াবহ মানবপাচারের শিকার দেশের মধ্যে মিয়ানমার অন্যতম বলে জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বার্ষিক প্রতিবেদন ‘ট্র্যাফিকিং ইন পারসনস’ এ তারা দাবি করে সিরিয়া, চীন ও দক্ষিণ সুদানের মতো মিয়ানমারেও প্রচুর মানবপাচার হয়। তবে এই প্রতিবেদনে প্রশংসা করা হয়েছে বাংলাদেশের। তালিকায় উন্নতি না হলেও রোহিঙ্গা ঢল মোকাবিলায় উল্লেখযোগ্য ভূমিকার রাখছে বলে জানায় মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।


প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশেষত রোহিঙ্গা সংকটের কারণেই মিয়ানমারে এই পরিস্থিতির তৈরি হয়েছে। এই প্রতিবেদনে দেশগুলোকে তিনটি ধাপে ভাগ করেছে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। সবচেয়ে ভালো অবস্থানে থাকা দেশগুলোকে রাখা হয় টায়ার-১ এ। আর সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় থাকা দেশগুলোর তালিকাকে বলা হয় টায়ার-৩। এই তালিকাতেই রয়েছে মিয়ানমার। এর আগে সেখানে ছিল চীন, সিরিয়া ও দক্ষিণ সুদান।

যুক্তরাষ্ট্রের ‘ভিক্টিমস অব ট্র্যাফিকিং অ্যান্ড ভায়োলেন্স প্রোটেকশন অ্যাক্ট’ অনুযায়ী দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়  মানবপাচার বিষয়ে সচেতনা বৃদ্ধির জন্য প্রতি বছর পাঁচটি ধাপে টিআইপি প্রতিবেদন প্রকাশ করে থাকে। প্রতিবেদনটি মানবপাচার বিষয় মোকাবেলায় বিভিন্ন দেশের উদ্যোগ ও সক্ষমতার ওপর ভিত্তি করে যুক্তরাষ্ট্রসহ পৃথিবীর ১৮৮টি দেশকে র‌্যাংকিং করে থাকে।

পাচারের শিকারদের রক্ষার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সমস্ত উদ্যোগ গ্রহণকারী দেশগুলো স্থান পায় প্রথম ধাপে (টায়ার ওয়ান)। পাচার রোধে সমস্ত উদ্যোগ না নিতে পারলেও উল্লেখযোগ্য পরিমাণে উদ্যোগ গ্রহণকারীদের স্থান হয় দ্বিতীয় ধাপে। তৃতীয় ধাপকে বলা হয় টায়ার-২ পর্যবেক্ষণ তালিকা। এখানে সরকার উদ্যোগ করলেও অনেক নেতিবাচক অব্স্থানও থাকে। আর শেষ ধাপ হচ্ছে টায়ার-৩। যেসব দেশ মানবপাচার রোধে যথাযথ ভূমিকা রাখে না তাদের এই ধাপে রাখা হয়।

গত বছরের আগস্টে রাখাইনে নিরাপত্তা বাহিনীর তল্লাশি চৌকিতে হামলার পর রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে পূর্বপরিকল্পিত ও কাঠামোবদ্ধ সহিংসতা জোরালো করে মিয়ানমার সেনাবাহিনী। খুন, ধর্ষণ ও অগ্নিসংযোগের মুখে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে প্রায় সাত লাখ রোহিঙ্গা। জাতিসংঘ এই ঘটনাকে জাতিগত নিধনযজ্ঞের পাঠ্যপুস্তকীয় উদাহরণ বলে উল্লেখ করেছে। আন্তর্জাতিক চাপ জোরালো হওয়ার একপর্যায়ে প্রত্যাবাসন চুক্তিতে বাধ্য হয় মিয়ানমার। তবে এখনও কার্যকরী কোনও পদক্ষেপ দৃশ্যমান নয়।

মিয়ানমার থেকে পাচার হওয়ার বেশিরভাগই নিপীড়নের শিকার। অনেককে যৌনকর্মী হিসেবেই পাচার করা হচ্ছে। মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর জানায়, শরণার্থীদের জোরপূর্বক কাজ করানো ও মাইন নিয়ে কাজ করতেও বাধ্য করা হচ্ছে।

প্রতিবেদনে বাংলাদেশের প্রশংসা করে যুক্তরাষ্ট্র জানায়, রোহিঙ্গাঢল ঠেকাতে ও চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখছে বাংলাদেশ। বেশিরভাগ শরণার্থীদের ক্যাম্পে আশ্রয় দিয়েছে তারা। গত বছরের মতো এবারও বাংলাদেশ রয়েছে টায়ার-২ পর্যবেক্ষণ তালিকায়।

তবে ক্যাম্পে থাকা নারীরা বেশি ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। বাংলাদেশ ও ভারতে তাদের জোরকরে যৌনকর্মী হিসেবে ব্যবহার করা হতে পারে। ইন্টারনেটেই তাদের বিক্রি করে দেওয়া হয় অনেকসময়। ভারত টায়ার-২ তালিকায় আছে।

মার্কিন পররাষ্ট্র মন্তণালয়ের মতে, টিআইপি প্রতিবেদনই মানবপাচারবিরোধী সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য প্রতিবেদন। টায়ার-২ পর্যবেক্ষণ তালিকায় ২ বছর থাকলে এমনিতেই দেশটি টায়ার-৩ তে নেমে যায়। টায়ার-৩ তে থাকা দেশগুলোর ওপর অবাণিজ্যিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করার এখতিয়ার রাখে যুক্তরাষ্ট্র। বিদেশি সহায়তাও বন্ধ করতে পারে তারা। তবে এই সিদ্ধান্ত বাতিল করে দিতে পারেন প্রেসিডেন্ট।

পাঠকের মতামত: