যুগান্তর : এবারের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে পাঁচ ধাপের প্রতিটিতেই বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হতে যাওয়া প্রার্থীর সংখ্যা বাড়ছে।
গত ১০ মার্চ শেষ হলো নির্বাচনের প্রথম ধাপ। সেখানে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন ১৫ জন।
প্রথম ধাপসহ দ্বিতীয় ধাপেও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে বিএনপির স্থানীয় নেতাদের অংশগ্রহণ কমছে। অধিকাংশ জেলায় আওয়ামী লীগ ছাড়া অন্য দলগুলোর অংশগ্রহণ অনুপস্থিত।
দেখা গেছে, প্রথম চার ধাপ মিলে নৌকা প্রতীকের অন্তত ১১০ প্রার্থী চেয়ারম্যান হচ্ছেন বিনাভোটে!
গতকাল বুধবার (১৩ মার্চ) ছিল চতুর্থ ধাপের ১২২ উপজেলায় মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন।
সেখানে দেখা গেছে, বেশ কয়েকটি উপজেলায় সরে গেছেন নৌকার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা।
সে হিসাবে ৪০ উপজেলায় চেয়ারম্যান হতে ভোট করতে হচ্ছে না নৌকার প্রার্থীদের।
দ্বিতীয় ধাপে ২৫ ও তৃতীয় ধাপে ৩০ উপজেলার চেয়ারম্যানও ভোট ছাড়াই জিতেতে যাচ্ছেন।
দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে পাওয়া তথ্যানুযায়ী, বাগেরহাটে ৯ উপজেলার মধ্যে ৬টিতে চেয়ারম্যান হতে ভোট লাগবে না নৌকা প্রার্থীর।
বাকি তিন উপজেলায় নৌকার প্রার্থীরা দলের বিদ্রোহী প্রার্থীদের সঙ্গে লড়বেন।
ফেনীর ছয় উপজেলার মধ্যে চেয়ারম্যান পদে এককভাবে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন পরশুরামের কামাল উদ্দিন মজুমদার, দাগনভূঞায় দিদারুল কবীর, সোনাগাজীতে জহির উদ্দিন মাহমুদ ও ছাগলনাইয়ায় মেজবাউল হায়দার চৌধুরী।
প্রতিদ্বন্দ্বিতা প্রত্যাহারের পর ফুলগাজীর আবদুল আলিমও একক প্রার্থী।
ফলে শুধু সদর উপজেলা চেয়াম্যান পদে ভোট হবে এবার। এ ছাড়া চারটি ভাইস চেয়ারম্যান পদেও ভোট ছাড়া জয়ী হচ্ছেন আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীরা।
এর মধ্যে পরশুরাম উপজেলায় কোনো পদেই প্রতিদ্বন্দ্বী নেই। তাই সেখানে নির্বাচনের প্রয়োজন হচ্ছে না।
নির্বাচন করার প্রয়োজন নেই কুমিল্লার ১৩ উপজেলার পাঁচটিতেও। এ পাঁচ উপজেলার চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যানের ১৫টি পদেই ভোট ছাড়া জয়ী হতে যাচ্ছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা।
চেয়ারম্যান হতে কোনো ভোট লাগবে না ময়মনসিংহের তিন আওয়ামী লীগ প্রার্থীর। সদর উপজেলায় আশরাফ হোসেইন, গফরগাঁওয়ে আশরাফউদ্দিন ও ফুলবাড়িয়ায় আবদুল মালেক সরকার বিনাভোটেই জয়ী হতে যাচ্ছেন।
যশোরের সদর উপজেলায় একক প্রার্থী হিসেবে দাঁড়িয়েছেন আওয়ামী লীগ প্রার্থী শাহিন চাকলাদার। সেখানেও প্রয়োজন নেই ভোটের।
ভোলায় একক প্রার্থী হিসেবে রয়েছেন তিনজন। সদরে মোশাররফ হোসেন, মনপুরায় সেলিনা আকতার, দৌলতখানে মনজুরুল আলমের কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী নেই।
তারা সবাই বর্তমান চেয়ারম্যান। এ ছাড়া ছয় ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হচ্ছেন বিনাভোটে।
ভোলা সদরের তিন পদেই একক প্রার্থী থাকায় ভোটের প্রয়োজন নেই।
পিরোজপুরের ভাণ্ডারিয়ায় মিরাজুল ইসলাম, ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়ার কসবায় মো. রাশেদুল কাওসার ও আখাউড়ায় আবুল কাশেম, ঢাকার সাভারে মঞ্জুরুল আলম, দোহারে মো. আলমগীর হোসেন ও কেরানীগঞ্জে বর্তমান চেয়ারম্যান মো. আশরাফুল আলম খান ও ফুলতলীতে হারুন অর রশীদ, মধুপুরে সরোয়ার আলম ও গোপালপুরে ইউনুস ইসলাম তালুকদার বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হচ্ছেন।
দলীয় ভিত্তিতে অনুষ্ঠেয় এ নির্বাচনে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট, বাম গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশসহ বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দল ও জোট অংশগ্রহণ থেকে বিরত রয়েছে।
দলীয় নির্দেশ না মেনে উপজেলা নির্বাচেন অংশ নেয়ায় কয়েক ধাপে ১২১ জনকে বহিষ্কার করেছে বিএনপি।
স্থানীয়ভাবে আওয়ামী লীগও সমঝোতা করছে দলের বিদ্রোহীদের সঙ্গে। তাই প্রতিটি ধাপে মনোনয়ন জমা দেয়া প্রার্থীর সংখ্যা কমে যাচ্ছে।
এখন পর্যন্ত তাই অধিকাংশ উপজেলায় ভোটের লড়াই ধরে রেখেছেন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীরা।
নির্বাচন কমিশন সূত্রে, এবার ৪৮১ উপজেলায় মোট পাঁচ ধাপে নির্বাচন হচ্ছে। প্রথম ধাপের ভোটগ্রহণ হয় ১০ মার্চ।
দ্বিতীয় ধাপে ভোট ১৮ মার্চ, তৃতীয় ধাপে ২৪ মার্চ এবং চতুর্থ ধাপে ৩১ মার্চ। পবিত্র রমজানের পর পঞ্চম ধাপের ভোটগ্রহণ করা হতে পারে।
পাঠকের মতামত: