ঢাকা,রোববার, ১৭ নভেম্বর ২০২৪

বান্দরবান বিএনপিতে ফের উত্তেজনা: মাম্যাচিং না জেরী, কর্মী সমাবেশ করবেন কারা ?

নিজস্ব সংবাদদাতা, বান্দরবান ::

কর্মী সমাবেশকে ঘিরে বান্দরবান বিএনপিতে আবারো উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। বিএনপির দুটি পক্ষই সমাবেশের অনুমতি চেয়ে প্রশাসনের কাছে অবেদন করেছে। আগামী ২৮ এপ্রিল কর্মী সমাবেশ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও দুটি পক্ষ আবেদন করায় প্রশাসন এখনো পর্যন্ত কাউকে সমাবেশের অনুমতি দেয়নি। এদিকে কর্মী সমাবেশ কাদের উদ্যোগে হবে তা নিয়েও দুটি পক্ষে মতবিরোধ দেখা দিয়েছে। যেকোনো সময় উভয় পক্ষের নেতাকর্মীদের মধ্যে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটতে পারে বলে আশংকা করা হচ্ছে। জেলা পুলিশের বিশেষ শাখার কর্মকর্তারা জানিয়েছেন ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে কর্মী সমাবেশের অনুমতি চেয়ে সোমবার আবেদন করেন জেলা বিএনপির সভানেত্রী মাম্যাচিং। অন্যদিকে শহরের চৌধুরী মার্কেট এলাকায় সমাবেশের জন্য গতকাল মঙ্গলবার আবেদন করেন বিএনপির সাচিং প্রু জেরীপন্থী নেতা সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আবদুল কুদ্দুস। বিএনপির পরস্পরবিরোধী দুই পক্ষ থেকে দুটি আবেদন পড়ায় প্রশাসনও সমাবেশের অনুমতি দিতে গিয়ে বিপাকে পড়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে– আগামী সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দলের সাংগঠনিক অবস্থা গতিশীল করতে দেশের অন্যান্য জায়গার মত বান্দরবানেও কর্মী সমাবেশের আয়োজন করেছে জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি। এর অংশ হিসেবে

আগামী ২৮ এপ্রিল শনিবার বান্দরবানে কর্মী সমাবেশের তারিখ নির্ধারণ করা হয়। এতে জাতীয় নির্বাহী কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দীন প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে। এছাড়া সমাবেশে কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহাবুবের রহমান শামীম, কেন্দ্রীয়সহ সাংগঠনিক সম্পাদক জালাল উদ্দীন মজুমদার, হারুনুর রশিদ হারুন, কেন্দ্রীয় সদস্য সাচিং প্রু জেরী, জেলা সভানেত্রী মাম্যাচিং ও সম্পাদক জাবেদ রেজা উপস্থিত থাকবেন। এর আগে গত ১৭ এপ্রিল বিএনপির মাম্যাচিং গ্রুপ ও ১৮ এপ্রিল সাচিং প্রু জেরী গ্রুপের নেতাকর্মীরা নির্বাহী কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দীনের সাথে দেখা করে তাদের দাবি দাওয়ার কথা তুলে ধরেন। কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ কর্মীসমাবেশ সফল করতে নেতাকর্মীদের নির্দেশ দিলেও বান্দরবানে বিএনপিতে দুটি গ্রুপ থাকায় কর্মীসমাবেশ কারা আয়োজন করবে তা নিয়ে মতবিরোধ দেখা দিয়েছে। বিএনপির জেরীপন্থীরা দাবি করছেন কর্মী সমাবেশ করার জন্য বিএনপিপন্থী সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আবদুল কুদ্দুস, আলীকদম উপজেলা চেয়ারম্যান আবুল কালাম, লামা উপজেলা চেয়ারম্যান থোয়াইনু মার্মা ও নাইক্ষ্যংছড়ির উপজেলা চেয়ারম্যান কামাল উদ্দীনকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।
অন্যদিকে বিএনপির মাম্যাচিং পন্থি নেতারা বলছেন নিয়ম অনুযায়ী জেলা বিএনপিই কর্মী সমাবেশের আয়োজন করবে। বিএনপির জেরী গ্রুপের নেতা মুজিবুর রশিদ জানান ২১ সদস্যের আংশিক জেলা কমিটি গঠন করার পর ১৪ মাস অতিক্রান্ত হলেও এখনো পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন হয়নি। এ কমিটি থেকে ১৭ নেতা পদত্যাগ করেছেন। ফলে আংশিক কমিটি মেয়াদ হারিয়েছে। এ কমিটি কিভাবে কর্মী সমাবেশের আয়োজন করবে? মুজিবুর রশিদ আরো জানান, জেলা কমিটির মেয়াদ না থাকায় আমরা কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দীনের কাছে কর্মী সমাবেশ করার জন্যে বিএনপিপন্থী জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে নতুন একটি কমিটি করার দাবি জানিয়েছি। সে অনুযায়ী উপজেলা চেয়ারম্যান আবদুল কুদ্দুসকে আহবায়ক করে ৪ উপজেলা চেয়ারম্যান ও ৬ ভাইস চেয়ারম্যানের তত্ত্বাবধানে কর্মী সমাবেশ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। তবে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জাবেদ রেজা জানান আংশিক জেলা কমিটি বাতিল করার যে তথ্য দেয়া হচ্ছে তা ভুল। কেন্দ্র এরকম কোন সিদ্ধান্তই নেয়নি। তাছাড়া সংগঠনের নিয়ম অনুযায়ী কর্মী সমাবেশ জেলা কমিটিই আয়োজন করবে। এ জন্যই জেলা কমিটির সভানেত্রী মাম্যাচিং সমাবেশের অনুমতি চেয়ে প্রশাসনের কাছে আবেদন করেছেন।
এ বিষয়ে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দীনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি সাংবাদিকদের জানান, কর্মী সমাবেশ বান্দরবান জেলা বিএনপির নেতারাই আয়োজন করবেন। তবে মাম্যাচিং নাকি সাচিং প্রু জেরী পক্ষের আয়োজনে হবে, এ বিষয়ে তিনি কোন কথা বলতে চাননি। উল্লেখ্য নেতৃত্ব নিয়ে দীর্ঘ দুই যুগেরও বেশি সময় ধরে বান্দরবান বিএনপিতে রাজপরিবারের দুই সদস্য সাচিং প্রু জেরী ও মাম্যাচিং এর মধ্যে দ্বন্দ্ব চলে আসছে।

পাঠকের মতামত: