নিজস্ব সংবাদদাতা, বান্দরবান ::
ভূমি দখল আর ক্রমাগত পরিবেশ বিপর্যয়ের মুখে পাহাড়ের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী চাক ও ম্রো সম্প্রদায় এখন সংকটের মুখে পড়েছে। বান্দরবানের লামা আলীকদম নাইক্ষ্যংছড়ি এসব এলাকায় ভূমি দখলদারদের আধিপত্য, সেইসাথে জুমের জায়গা সংকুচিত হয়ে পড়ায় এসব ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী নারী-পুরুষ অসহায় হয়ে পড়েছে। অন্যদিকে, চিম্বুক পাহাড়েও ম্রোদের ভূমি দখলের অভিযোগ উঠেছে।
সবচেয়ে কষ্টের মধ্যে পড়েছে বান্দরবানের বাইশারী এলাকার চাক সম্প্রদায়। ইতিমধ্যে ভূমি দখলের কারণে চাক ও ম্রো সম্প্রদায়ের অনেক পাড়া উচ্ছেদ হয়ে গেছে। তবে প্রশাসনের পক্ষ থেকে এসব দখলদারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছেন কর্মকর্তারা। বান্দরবানের লামা উপজেলার ফাসিয়াখালী এলাকায় ট্রি প্লান্টেশন প্রকল্পের আওতায় ভূমি বেদখলের কারণে ৩টি পাহাড়ি পাড়া থেকে ৬৩ পরিবার উচ্ছেদের শিকার হয়েছে।
এগুলোর মধ্যে মংবিচর বাচিং মারমা পাড়া থেকে ২৯ পরিবার, চারিগ্যা ত্রিপুরা পাড়া থেকে ১৭ পরিবার ও আমতলি ম্রো পাড়া থেকে ১৭ পরিবার রয়েছে। এছাড়া আরো বেশ কটি ম্রো পাড়া উচ্ছেদের আতঙ্কে রয়েছে। এসব গ্রামে একসময় মানুষের কর্মচাঞ্চল্য ছিল, ছিল সামাজিক ও ধর্মীয় উৎসবের আমেজ। নববর্ষে উদযাপন হত সাংগ্রাইং উৎসব আর ওয়াগ্যোয়াই পোয়ে বা প্রবারণা পূর্ণিমায় রঙ-বেরঙের ফানুসে ঢেকে যেত রাতের আকাশ। সবুজ পাহাড় জুড়ে বাতাসে ছিল জুম ফসলের গন্ধ। আর এখন জনমানবহীন এক জনপথ।
অন্যদিকে ভূমি বেদখল আর পাহাড়ে পরিবেশ বিপর্যয়ের কারণে চাক জনগোষ্ঠীর জীবনধারণেও নেমে এসেছে অনিশ্চয়তা। নির্বিচারে বনাঞ্চল উজাড়, রাবার ও হর্টিকালচার বাগান সৃজনের নামে পাহাড়ি ভূমি দখলের কারণে হুমকির মুখে চাক জনগোষ্ঠীর অস্তিত্বের পাশাপাশি পাহাড়ের জীব বৈচিত্র্য হুমকির মুখে রয়েছে। বাইশারী ইউনিয়ন ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক উক্যচাইন চাক (জীবন) বলেন, চাক ছেলে-মেয়েদের যোগ্যতা ও মেধা থাকার পরও উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করতে পারছে না। মূলত আর্থিক সঙ্কটের কারণেই তারা এ সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন। পার্বত্য অঞ্চলে আদিবাসীদের উন্নয়নের কথা বলে অনেক সংস্থা সহযোগিতার কথা বলে তাদের সঙ্গে প্রতারণা করছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
জুম চাকদের প্রধান পেশা হলেও বহিরাগতদের দখল থাকার কারণে অনেক চাক পরিবার নিজেদের জমি হারিয়েছে। যেমনটি হয়েছে ২০১৩ সালের এপ্রিল মাসে বাইশারী ইউনিয়নের আলীক্ষ্যং বাদুরঝিরি চাকপাড়ায়। ভূমিদস্যুদের তৎপরতার কারণে তৎসময়ে ২১টি চাক পরিবার পাড়া ত্যাগ করতে বাধ্য হয়। নাইক্ষ্যংছড়ি সদর ইউনিয়নের চাকহেডম্যান পাড়ার প্রধান (কারবারি) অংথোয়াইচিং চাক চকরিয়া নিউজকে জানান, বর্তমানে চাক সম্প্রদায় আর্থিক অনটনের পাশাপাশি ভূমি সংক্রান্ত জটিলতায় ভুগছে। তারপরও তারা শিক্ষাক্ষেত্রকে গুরুত্ব দিয়ে আগামী প্রজন্মকে শিক্ষিত করে তোলার প্রাণপণ চেষ্টা করছেন। সরকারের পাশাপাশি উন্নয়ন সংস্থাগুলোর সার্বিক সহযোগিতা না পেলে ক্ষুদ্র এ জাতিগোষ্ঠীর সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য টিকিয়ে রাখা কঠিন হয়ে পড়বে।
পাঠকের মতামত: