ঢাকা,শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪

বদলী আদেশের একবছর পরও যোগ দেয়নি আলীকদমে এক প্রধান শিক্ষক, ছুটি নিয়ে শিক্ষা কর্মকর্তাদের ভিন্নমত

oniyom durnitiআলীকদম (বান্দরবান) প্রতিনিধি :::

বদলী আদেশের একবছর অতিক্রান্ত হলেও যোগদান না করে কর্মস্থলে অনুপস্থিত রয়েছেন প্রধান শিক্ষক। বদলী আদেশপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের কর্মস্থলে অনুপস্থিতির বিষয়ে স্থানীয় শিক্ষা কর্মকর্তাদের ভিন্নমত পাওয়া গেছে। উপজেলা শিক্ষা অফিসার বদলী আদেশপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষককে কর্মস্থলে ‘অনুপস্থিত’ এবং সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার ‘চিকিৎসা ছুটিতে আছেন’ মর্মে পরিদর্শন বইতে উল্লেখ করেছেন। এ ঘটনা ঘটেছে বান্দরবানের আলীকদম উপজেলার আমতলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে।

তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, আমতলী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মীরা দত্তের নানা অনিয়মের বিরুদ্ধে এসএমসি সভাপতি, অভিভাবক ও এলাকার সচেতন লোকজন ক্ষুব্ধ হন। তার একগুয়েমি, রুক্ষ্ম আচরণ, ছাত্র-ছাত্রী ও অভিভাবকের সাথে দুর্ব্যবহার, কর্মস্থলে অনুপস্থিতি, উপবৃত্তির অর্থ আত্মসাত সংক্রান্ত ১০৭ জনের স্বাক্ষরিত একটি অভিযোগ বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বরাবর প্রেরণ করা হয়। এ নিয়ে উপজেলা শিক্ষা অফিসার তদন্ত করে অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে প্রতিবেদন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার বরাবর দাখিল করেন। এ অভিযোগের প্রেক্ষিতে বিভিন্ন পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ হয়।

এসএমসির অভিযোগ, তদন্ত প্রতিবেদন ও পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদের জেরে বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের ১০ মার্চ ২০১৫ তারিখের …২০১৫-৩৭(৯) নং স্মারকের আদেশের প্রেক্ষিতে বদলী আদেশ জারী করেন বান্দরবান জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের স্মারক নং- জেপ্রাশিঅ/বা-বান/শিঃ বদলী/১০১/৩০৪ (৬) তারিখ- ১১/০৩/২০১৫ ইং মূলে আমতলী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মীরা দত্তকে কুরুকপাতা মৈত্রী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলী করা হয়। তাকে সে বছরের ১৫ মার্চ বদলীকৃত কর্মস্থলে যোগদান করতে আদেশ দেওয়া হয়েছিল। অন্যথায় ১৬ মার্চ থেকে স্বীয় কর্মস্থল হতে অবমুক্ত হবেন বলে বদলী আদেশ উল্লেখ করা হয়।

গতবছরের ২০ ডিসেম্বর উপজেলা সহকারী শিক্ষা অফিসার বাসুদেব কুমার সানা একটি পরিদর্শন রিপোর্টে লিখেন “আমতলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি আকস্মিক পরিদর্শন করলাম। পরিদর্শনকালে কর্মরত ৫ জন শিক্ষকের মাঝে ৪ জনকে উপস্থিত পাওয়া গেল। প্রধান শিক্ষক চিকিৎসা ছুটিতে আছেন”।

অপরদিকে, গত ২৮ ফেব্রুয়ারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার মোহাম্মদ ইলিয়াছ পরিদর্শন রিপোর্টে লিখেন, “আমতলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি পরিদর্শন করি। বিদ্যালয়ের অনুমোদিত পদ ৫, কর্মরত ৪, উপস্থিত ৪। প্রধান শিক্ষক মীরা দত্ত ১৫/৩০/২০১৫ খ্রিঃ থেকে চিকিৎসা ছুটির আবেদন দিয়ে অনুপস্থিত রয়েছেন। তিনি কুরুকপাতা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলীর আদেশপ্রাপ্ত হয়েছেন। ওই বিদ্যালয়েও যোগদান করেন নি”।

উপজেলা শিক্ষা অফিসের দু’জন কর্মকর্তার দু’ধরণের পরিদর্শন রিপোর্ট বিষয়টিকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। ওয়াকিবহাল মহল এ নিয়ে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগও তুলেছেন। তাছাড়া গত জানুয়ারী মাসে স্কুলের পাঠ্যপুস্তক চাহিদাপত্রে আমতলী বিদ্যালয়ে কর্মরত হিসেবে বদলী আদেশপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষককে দেখানো হয়। এতে এসএমসি সভাপতির স্বাক্ষর থাকলেও তা জাল বলেছেন বর্তমান সভাপতি নুরুল ইসলাম। তিনি বলেন, একবছরের বেশী সময় ধরে আমাদের বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক না থাকায় নানা সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে। তিনি দ্রুত নতুন একজন প্রধান শিক্ষক নিয়োগের দাবী করেন। বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক শিমু পাল বলেন, আমাকে দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়া হয়নি। অন্য তিনজন সহকারী শিক্ষকের সাহায্য নিয়ে আমি অফিস কার্যক্রম চালাচ্ছি।

সম্প্রতি এ প্রসঙ্গে সংশ্লিষ্ট শিক্ষা কর্মকর্তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়। উপজেলা শিক্ষা অফিসার মোহাম্মদ ইলিয়াছ বলেন, পরিদর্শন রিপোর্টের বিষয়টি কিছু নয়। সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার বাসুদেব কুমার সানা বলেন, মীরা দত্ত একজন ভাল শিক্ষক ছিলেন। সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ে অফিস সহায়ক নিয়োগের পর থেকে তাকে খারাপ শিক্ষক হিসেবে একটি মহল অভিযোগ দায়ের করে।

এদিকে, গত ২১ মার্চ জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার নির্দেশের প্রেক্ষিতে প্রধান শিক্ষক মীরা দত্তের কর্মস্থলে অনুপস্থিতির বিষয়ে উপজেলা শিক্ষা অফিসার স্বাক্ষরিত একটি পত্র গত ২৪ মার্চ পাঠানো হয়েছে। এতে চিকিৎসা ছুটির আবেদনপত্র দিয়ে গত কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকার বিষয়টি উল্লেখ করা হয়।

এ বিষয়ে সম্প্রতি জেলা প্রথামিক শিক্ষা অফিসার মোঃ আব্দুল কাদের এর দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে বলেন, এ বিষয়ে আমি কিছু জানি না। আমাকে উপজেলা শিক্ষা অফিস থেকে একবছরেও কিছু জানানো হয়নি। চিকিৎসা ছুটির বিষয়ে জানতে চাইলে বলেন, কারো চিকিৎসা ছুটির প্রয়োজন হলে যথাযথ মাধ্যমে আমার কাছে আবেদন করবেন। সিভিল সার্জনের নেতৃত্বে গঠিত মেডিকেল বোর্ড রিপোর্ট দিলেই চিকিৎসা ছুটি মঞ্জুর হওয়ার কথা।

পাঠকের মতামত: