ঢাকা,সোমবার, ৩০ ডিসেম্বর ২০২৪

প্রতারক ছেলের বিরুদ্ধে বয়োবৃদ্ধা মায়ের মামলা : মা’কে ঘায়েল করতে প্রতিবন্ধীসহ ভাইদের বিরুদ্ধে থানায় উল্টো মিথ্যা মামলা

mamla-300x160বিশেষ প্রতিবেদক, কক্সবাজার  ॥

জন্মদাতা বয়োবৃদ্ধা মাকে শারীরিক নির্যাতন ও সন্তানদের সহায় সম্পত্তি আত্মসাতের অভিযোগে প্রতারক ছেলের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা দায়ের করেছে হতভাগ্য মা। গত ৪ মার্চ কক্সবাজার চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে মামলাটি দায়ের করা হলে আদালত ওই সন্তানের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারী পরোয়ানা জারি করেছে।

মা‘কে ঘায়েল করতে প্রতিবন্ধীসহ ৩ ভাইয়ের বিরুদ্ধে থানায় মিথ্যা মামলা দায়ের করার ঘটনা নিয়ে পুরো এলাকাবাসি ক্ষুদ্ধ হয়ে পড়েছে। গত ২৬ মার্চ কক্সবাজার থানায় এ মিথ্যা মামলাটি দায়ের করা হয়।

অভিযোগে জানা যায়, সদরের পিএখালী ইউনিয়নের ছয় ভাইয়েরপাড়া ডেইরী ঘোনা তোতকখালী এলাকার মৃত নাজির হোছনের ৪ ছেলে শফি আলম, আবদুল করিম, আবদু ছালাম ও রহমত ছালাম বিদেশে থাকা কালে প্রবাসে আয়কৃত টাকা তাদের বিথবা মা দিলারা বেগমের নামে পাঠাতেন। তিনি পরবারের কর্তা হিসেবে সবকিছু দেখাশুনা করতেন এবং পরিবারের বিভিন্ন কাজ কর্মে তার ছেলে আবদু শুক্কুরকে যেতেন। সরল বিশ্বাসে জমিজমা ক্রয়ের জন্য ৪ ছেলের পাঠানো বিপুল পরিমাণ টাকা তার মা দেন ছেলে আবদু শুক্কুরকে। বিশ্বাস ভঙ্গ করে সম্পত্তি ৫ সন্তানের নামে সমান ভাগে ক্রয় করার কথা থাকলেও ৫ ভাইয়ের নামে না কিনে ওই প্রতারক আবদু শুক্কুর নিজ নামে খরিদ করেন।

বিধবা দিলারা বেগম বলেন, বিদেশ থেকে ৪ ছেলের পাঠানো টাকায় ৫ জনের নামে বাংলাবাজার স্টেশনে জমি কেনার জন্য টাকা দেয়া হলেও প্রতারক ছেলে আবদু শুক্কুর একার নামেই ক্রয় করেন। এমন কি একটি ডাম্পারও প্রবাসী ছেলের টাকা ক্রয় করে পরে নিজেই বিক্রি করে সমুদয় টাকা আত্মসাত করেন।

তিনি আরো বলেন, তৃতীয় ছেলে আবদু করিম, ৫ম ছেলে রহমত ছালাম প্রবাস জীবন থেকে দেশে আসলে তাদের টাকায় জমি কেনার নামে নিজের নামে একাই জমি কেনার বিষয়টি প্রকাশ পায়। ঘটনাগুলো জানাজানি হলে দেখা যায়, প্রতারক ছেলে আবদু শুক্কুর ৪ ভাইয়ের পাঠানো টাকায় ক্রয়কৃত সম্পত্তি সকলের নামে ক্রয় না করে আইনগত ও আমার সাথে প্রতারণা করে নিজের নামে ক্রয় করে ভাইয়ের ফাঠানো সমস্ত টাকা কৌশলে আত্মসাত করেন।

তিনি বলেন, এ ঘটনার ব্যাপারে স্থানীয় ভাবে শালিসও হয়েছে। গত বছরের ১১ ডিসেম্বর শালিসী রোয়েদাদও দেয়া হয়। শালিসী বৈঠকে ছেলে আবদু শুক্কুরের বিশ্বাস ভঙ্গ ও প্রতারণার প্রমাণ হওয়ায় আবদু শুক্কুরকে ভাইদের পাওনা ফিরিয়ে দেয়ার জন্য সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত দেয়।

শালিসী বৈঠকে আমি মা হিসেবে সাক্ষ্য দেয়ায় আবদু শুক্কুর আমাকে বিভিন্ন ভাবে হুমকি দেয়ায় আমি গত বছরের ১৮ নভেম্বর কক্সবাজার থানায় একটি সাধারণ ডায়েরী করেছি।

এরই ধারাবাহিকতায় আমার প্রতারক ছেলে আবদু শুক্কুর ক্ষিপ্ত হয়ে গত ৩০ জানুয়ারী সন্ধ্যা ৭টার দিকে আমাকে বেদন মারধর করে গুরুতর আহত করা হয়। আমাকে স্থানীয় লোকজন উদ্ধার করে কক্সবাজার জেলা সদর হাসপতালে ভর্তি করে। সেখানে চিকিৎসাধীন ছিলেন।

এঘটনায় বিধবা মা দিলারা বেগম বাদ হয়ে ৪ ফেব্রুয়ারী ছেলে আবদু শুক্কুরের বিরুদ্ধে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন।

তিনি বলেন, আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে আসামী আবদু শুক্কুরের বিরুদ্ধে সমন জারি করেন। ২৭ মার্চ তাকে আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশন দেন। কিন্তু ২৭ মার্চ আবদু শুক্কুর আদালতে হাজির না হওয়ায় আদালত তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন।

এদিকে, প্রতারক আবদু শুক্কুরের বিরুদ্ধে বিধবা মা বাদি হয়ে মামলা দায়ের করায় ক্ষিপ্ত হয়ে

১৮ মার্চ বিকাল সাড়ে ৫টায় তোতকখালী তাহের মোহাম্মদ ঘোনা এলাকায় ঘটনাস্থল ও আবদু শুক্কুরসহ তার মেয়েকে হামলার ঘটনা দেখিয়ে ওই আবদু শুক্কুরের স্ত্রী আয়েশা বেগম বাদী হয়ে গত ২৫ মার্চ কক্সবাজার সদর মডেল থানায় ( কক্সবাজার থানার মামলা নং-৬১, জিআর-২৩২, তাং-২৬/৩/২০১৬ইং) দায়ের করেন।

এ মামলায় আবদু শুক্কুরের প্রতিবন্ধি ভাই আবদুল করিমকে ২নং আসামী, আরেক ভাই আবদু ছালামকে ৩নং আসামী করা হয়। একই মামলায় প্রতিবন্ধী ভাইয়ের শ্বশুরসহ আরো ২জন নিকটাত্মীয়কে আসামী করা হয়। এঘটনা নিয়ে পুরো এলাকায় বিরাজ করছে ক্ষোভ ও উত্তেজনা।

একাবাসি জানান, আবদু শুক্কুরের সাথে স্থানীয় ভাবে বিভিন্ন লোকজনের সাথে জমির বিরোধ রয়েছে। এই ঘটনার জের ধরে হামলার ঘটনা ঘটেছে বলে ১৮ মার্চ স্থানীয় একটি দৈনিকে হামলাকারীদের নাম সহ উল্লেখ করে একটি সংবাদ প্রকাশ করেন কথিত আহত আবদু শুক্কুর। কিন্তু ঘটনার ৭দিন পর সম্পূর্ণ ঘটনা সাজিয়ে প্রতিবন্ধী ভাই সহ নিরীহ ৫জনকে মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে হয়রানী করা হচ্ছে।

এলাকাবাসি ও পারিবারিক সুত্র আরো জানান, প্রতারক আবদু শুক্কুর মা ও ভাইদের প্রতারণা করে সম্পত্তি আত্মসাৎ করার জন্য এধরনের ঘটনা সাজিয়ে থানায় মিথ্যা মামলা দায়ের করেছে। ঘটনাটি নিরপেক্ষ তদন্ত দাবী করেছেন এলাকাবাসি।

পাঠকের মতামত: