ঢাকা,সোমবার, ৩০ ডিসেম্বর ২০২৪

নির্মাণ করা হয়েছে সড়ক, দেওয়া হয়েছে বিদ্যুৎ সংযোগ

পেকুয়ায় বনকর্মীদের যোগসাজশে সংরক্ষিত বনে পাহাড় কেটে বসতি

নিজস্ব প্রতিবেদক, পেকুয়া :: কক্সবাজারের পেকুয়ায় বন বিভাগের সংরক্ষিত বনাঞ্চল জবরদখল করে ও পাহাড় কেটে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় বসতঘর নির্মাণের ঘটনা ঘটছে।

চট্টগ্রাম দক্ষিণ বন বিভাগের বারবাকিয়া বন রেঞ্জের আওতাধীন তিনটি বনবিটে প্রতিনিয়ত বনাঞ্চল দখল ও নতুন নতুন ঘর নির্মাণ করা হচ্ছে। এমনকি প্রবাসে থেকেও অনেকে সংরক্ষিত এ বনাঞ্চলের জমি দখলে নিয়ে ঘর ও মার্কেট নির্মাণ করছেন। পুরো বনাঞ্চল ইতোমধ্যে উজাড় হয়ে গেছে। এসব বনভূমি জবরদখল ও ঘর নির্মাণের ঘটনায় স্থানীয় বন কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যোগসাজশ থাকার অভিযোগ উঠেছে।

সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, পেকুয়া উপজেলার বারবাকিয়া, শিলখালী ও টৈটংয়ের সংরক্ষিত বনাঞ্চলের পাহাড়ে চট্টগ্রাম দক্ষিণ বন বিভাগের বারবাকিয়া রেঞ্জের বারবাকিয়া, টৈটং ও পহরচাঁদা বন বিটের বনভূমিতে যত্রতত্র জবরদখল করে ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। এসব সংরক্ষিত বনাঞ্চলজুড়ে এখন শুধুই জনবসতি। পুরো সংরক্ষিত বনাঞ্চল উজাড় হয়ে গেছে। প্রতিদিন অবৈধভাবে নতুন নতুন ঘর নির্মাণ করা হচ্ছে এখানে।

এলাকার মো. আরাফাত জানান, প্রবাসে থেকেও এখানে অনেকে ভাড়াটিয়া লোকজন দিয়ে সংরক্ষিত বনাঞ্চলের ভেতর পাহাড় কেটে পাকা ঘর নির্মাণ করে নিচ্ছেন। বারবাকিয়া বন বিটের অধীনে শিলখালী ইউনিয়নের পূর্ব ভারুয়াখালী এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, ওই এলাকার সাব্বির আহমদের ছেলে নাছির উদ্দিন দীর্ঘদিন ধরে প্রবাসে থাকেন। কিন্তু তিনি তার স্ত্রীকে দিয়ে স্থানীয় কিছু ভাড়াটিয়া লোকের মাধ্যমে ওই এলাকায় বন বিভাগের মূল্যবান জায়গায় পাহাড় কেটে পাকা ঘর নির্মাণ করে নিচ্ছেন।

পূর্ব ভারুয়াখালীতে এভাবে প্রকাশ্যে সংরক্ষিত বনাঞ্চলে পাহাড় কেটে পাকা ঘর নির্মাণের বিষয়টি বুধবার পেকুয়া উপজেলা মাসিক আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায়ও আলোচনা হয়েছে।

এলাকাবাসীর অভিযোগের ভিত্তিতে পেকুয়া থানা পুলিশ গিয়ে বাধাও দিয়েছিল। কিন্তু পুলিশ চলে যাওয়ার পর আবারও ওই পাকা ঘরটি নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে। পুলিশ জানায়, ওই বনাঞ্চল এলাকায় গত বছরের ২৩ এপ্রিল আধিপত্য বিস্তার করতে গিয়ে দুই গ্রুপের গোলাগুলি ও দায়ের কোপে এক ব্যক্তি নিহতও হয়েছেন। এভাবে বনাঞ্চলে অবৈধভাবে ঘর নির্মাণ অব্যাহত থাকলে ফের এ ধরনের ঘটনা ঘটার আশঙ্কা রয়েছে।

স্থানীয়রা জানান, এভাবে সংরক্ষিত বনাঞ্চল দখল ও ঘর নির্মাণে বন কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যোগসাজশ রয়েছে। জানা যায়, বন বিভাগের জমি যারা দখল করে নিচ্ছেন তাদের বেশিরভাগই ধনাঢ্য ও প্রভাবশালী। এভাবে বারবাকিয়া রেঞ্জের আওতাধীন তিনটি বিটের বেশিরভাগ বনভূমি জবরদখল হয়ে গেছে। বনাঞ্চলের ভেতর বড় বড় পাড়া গড়ে উঠেছে। অবৈধভাবে গড়ে ওঠা এসব জনবসতিতে যাতায়াতের জন্য সড়কও করে দেওয়া হচ্ছে। শুধু তাই নয়, এ বনাঞ্চলের বসতিগুলোতে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়াসহ নানা সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হয়েছে।

পুরো বনাঞ্চল এখন জনবসতিতে পরিণত হয়েছে। কোথাও সংরক্ষিত বনাঞ্চলের চিহ্নটুকুও নেই। বারবাকিয়া বন রেঞ্জ কর্মকর্তা হাবিবুর রহমান ওই বনাঞ্চলে জনবসতি গড়ে ওঠার কথা স্বীকার করে বলেন, এ দখল প্রক্রিয়া নতুন কোনো বিষয় নয়, এগুলো অনেক আগে থেকে হয়ে আসছে। এখনো হচ্ছে, তবে আমরা আইনি ব্যবস্থাও নিচ্ছি।

 

পাঠকের মতামত: