ঢাকা,শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪

পেকুয়ায় কমিটি আছে, কার্যক্রম নেই, দলের নাম স্বেচ্ছাসেবকলীগ

pekua,,নাজিম উদ্দিন, পেকুয়া :::
পেকুয়ায় থমকে গেছে আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবকলীগের সাংগঠনিক কার্যাক্রম। কমিটি আছে, নেই কোন কার্যক্রম। পেকুয়ায় ঝিমিয়ে পড়েছে স্বেচ্ছাসেবকলীগের রাজনৈতিক কর্মকান্ড। নেই কোন গতিশীলতা। স্বেচ্ছাসেবকলীগ পেকুয়ায় কাগজে কলমের সংগঠনে পরিনত হয়েছে। মাত্র কয়েকজন নেতাকে মূলদলের সাথে সম্পৃক্ত হতে দেখা যায়। এরা ২-৩জনের মধ্যে পুরো উপজেলায় সীমাবদ্ধ। দলটির উপজেলা কমিটিতে সভাপতি-সাধারন সম্পাদক ছাড়া অন্যরা সবাই নিস্ক্রীয়। দলের অন্যান্য পদবিতে কাউকে অলংকিত করা হয়েছে এদের নেই মূল সংগঠনের সাথে কোন সম্পর্ক।

স্বেচ্ছাসেবকলীগ পেকুয়া উপজেলা শাখায় দুর্বল ও নিস্ক্রীয় সংগঠন। নিজ সকিয়তায় আওয়ামীলীগের এ সহযোগি সংগঠনটির কোন সাংগঠনিক কার্যক্রম পেকুয়ায় করার মত শক্তি সামর্থ নেই। তবে মূলদল ও অন্যান্য মূলদলভুক্ত সংগঠনের সাথে তাদের সাংগঠনিক কার্যক্রম চলে। ইউনিয়ন কমিটি ও ওয়ার্ড় কমিটিগুলো পেকুয়ায় নেই বললেও চলে। সাত ইউনিয়নের মধ্যে সবক’টি ইউনিয়ন কমিটি অস্তমিত। এখানে মাসিক কিংবা বছরেও কোন ইউনিয়ন কমিটি এ যাবৎ স্বেচ্ছাসেবকলীগের সাংগঠনিক কার্যক্রম সম্পন্ন করেছে এমন কোন নজির নেই। ওয়ার্ড় কমিটির অস্থিত্ব নেই পেকুয়ায় স্বেচ্ছাসেবকলীগের।

সভাপতি ওসমান গনি অত্যন্ত তৎপর। তিনি মূল সংগঠন আ’লীগের যেকোন রাজনৈতিক কর্মকান্ডে নিজেকে সক্রিয় রেখেছেন। সরব উপস্থিতি ও বিভিন্ন মিছিল মিটিং ও রাজনৈতিক কর্মসুচিতে তাকে প্রতিনিয়ত দেখা যায়। সাবেক এ ছাত্রনেতা পেকুয়ার রাজপথের নির্বীক সৈনিক। অপরদিকে সাধারন সম্পাদক নেজাম উদ্দিনও মাঝে মধ্যে আ’লীগের কর্মসুচিতে অংশ নেয়। তবে তিনি মুলত সংগঠক নন। দলকে বিরাজমান ও গতিশীল করতে পেকুয়ায় বর্তমান নেতৃত্ব স্বেচ্ছাসেবকলীগের জন্য ব্যর্থ হয়েছেন।
আ’লীগের সহযোগি সংগঠন হিসেবে আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবকলীগ বাংলাদেশে অত্যন্ত গুরুত্বপুর্ন একটি সংগঠন। সারা দেশে স্বেচ্ছাসেবকলীগ সুসংঘটিত। স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন ও যেকোন রাজনৈতিক কর্মসুচির মধ্যে অতীতের সব ইতিহাসে স্বেচ্ছাসেবকলীগের অবদান অত্যন্ত প্রশংসনীয়। সংগ্রাম ও অধিকার আদায়ের জন্য মুজিবার্দশের লড়াকু সৈনিকরা স্বেচ্ছাসেবকলীগের মাধ্যমে রাজপথ সরব রাখতে কখনো পিছপা হননি। অথচ এ সংগঠনটি পেকুয়ায় নিষ্প্রভ। বিগত কয়েক বছরের মধ্যে স্বেচ্ছাসেবকলীগ পেকুয়ায় অস্থিত্বহীন হয়েছে। কমিটি গঠিত হওয়ার পর স্বেচ্ছাসেবকলীগ পেকুয়ায় ছিল উজ্জীবিত। নব উদ্যমে দলকে সক্রিয় ও পুর্নজাগরনের জন্য বিভিন্ন ইউনিয়নে ব্যপক তৎপর ছিল। কয়েক বছরের ব্যবধানে ঝিমে গেছে এর সাংগঠনিক তৎপরতা।

জানা গেছে ২০০৮ পেকুয়া উপজেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগ গঠিত হয়। সফল সম্মেলনের মাধ্যমে স্বেচ্ছাসেবকলীগের বর্তমান কমিটি অনুমোদন দেয়া হয়। ২০০৮সালে উপজেলার মগনামা ইউনিয়নের সোনালী বাজার গনপাঠশালা স্কুল মাঠে ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্টিত হয়। ওইদিন সম্মেলনকে ঘিরে হাজার হাজার নেতাকর্মীরা উপস্থিত হয়েছিলেন। জানা গেছে কক্সবাজার জেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগের আহবায়ক রহিম উদ্দিনের সভাপতিত্বে ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন ও কাউন্সিলে প্রধান অতিথি ছিলেন স্বেচ্ছাসেবকলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি মুফিজুর রহমান। এ সময় উপস্থিত ছিলেন স্বেচ্ছাসেবকলীগ আর্ন্তজাতিক বিষয়ক সম্পাদক বর্তমান কক্সবাজার সদরের সরকার দলীয় এমপি সাইমুম ছরওয়ার কমল, জেলা যুগ্ন আহবায়ক মহেশখালী-কুতুবদিয়ার বর্তমান সাংসদ আশেক উল্লাহ রফিক, কক্সবাজার জেলা আ’লীগের সাবেক সাধারন সম্পাদক সালাহ উদ্দিন আহমদ সিআইপি, বর্তমান জেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগের সাধারন সম্পাদক কায়সারুল হক জুয়েলসহ কেন্দ্রীয় ও জেলা নেতারা।

ওই সম্মেলনে ওসমান গনি সভাপতি ও নেজাম উদ্দিনকে সাধারন সম্পাদক ঘোষনা করে। ওই সময় থেকে স্বেচ্ছাসেবকলীগ বর্তমান কমিটি পেকুয়ায় বহাল তবিয়তে আছে। ৫১সদস্য বিশিষ্ট ওই কমিটি পেকুয়ায় স্বেচ্ছাসেবকলীগের রাজনীতির কর্নধার। কিন্তু বিগত ৮বছরের ব্যবধানে পেকুয়ায় সভাপতি ও সম্পাদক দু’জনের কমিটিতে সীমাবদ্ধ হয়েছে স্বেচ্ছাসেবকলীগ। বর্তমান সভাপতি ওসমান গনি ও সাধারন সম্পাদক এখন শুধু স্বেচ্ছাসেবকলীগের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখেননি। তারা মূলদল আ’লীগের পেকুয়া উপজেলা শাখার রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হয়েছেন।

ওসমান গনিকে উপজেলা আ’লীগের বর্তমান কমিটিতে সাংগঠনিক সম্পাদক ও নেজাম উদ্দিনকে সহ প্রচার সম্পাদক পদে আসীন করেছে। আবার তারা দু’জন স্বেচ্ছাসেবকলীগ কক্সবাজার জেলারও সদস্য। এদিকে পেকুয়ায় নিস্ক্রীয় স্বেচ্ছাসেবকলীগকে উজ্জীবিত করার মত কোন নেতৃত্বে নেই। কমিটি আছে, নেই সাংগঠনিক ভিত্তি এর নাম পেকুয়ায় স্বেচ্ছাসেবকলীগ। নিজস্ব স্বকিয়তা ও রাজনৈতিক পরিধি হারিয়েছে স্বেচ্ছাসেবকলীগ। দলটি শুধু নামের মধ্যে সীমাবদ্ধ। আলাদা কোন কর্মসুচি পালনের মত সক্ষমতা অনেক আগে থেকে হারিয়েছে। তবু নেতাদের অস্থিত্বের জন্য এর দুর্বল ধারা কোথাও প্রকাশ পাচ্ছেনা। পেকুয়ায় মূলদল আ’লীগ ও সহযোগি সংগঠনের দায়িত্বশীল নেতৃবৃন্দরা স্বেচ্ছাসেবকলীগের এ অচলাবস্থাকে পেকুয়ার জন্য অশনি সংকেত মনে করেছেন। তারা এর উত্তোরন ঘটিয়ে নব উদ্যেমে আ’লীগের অন্যতম প্রান শক্তি স্বেচ্ছাসেবকলীগকে উজ্জীবিত করা ও সাংগঠনিক ভীত সৃষ্টির জন্য মত দিয়েছেন।

এ ব্যাপারে আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবকলীগ পেকুয়ার সভাপতি ওসমান গনি জানায় ২০০৮সালে সফল সম্মেলন ও কাউন্সিলের মাধ্যমে বর্তমান নেতৃত্ব গঠিত হয়েছে। স্বেচ্ছাসেবকলীগ পেকুয়ায় অত্যন্ত সুসংঘটিত। আমরা যেকোন কর্মসুচিতে স্বেচ্ছাসেবকলীগ অংশ গ্রহন করছি। স্বেচ্ছাসেবকলীগ দুর্বল নয়। ইউনিয়ন কমিটিগুলিও সক্রিয়। তবে কিছু কমিটি রিসাবল করতে হবে।

উপজেলা আ’লীগের সাধারন সম্পাদক আবুল কাসেম বলেন স্বেচ্ছাসেবকলীগ অত্যন্ত গুরুত্বপুর্ন সংগঠন। অতীতের পেকুয়ায় যেকোন কর্মসুচিতে মূলদলের সাথে স্বেচ্ছাসেবকলীগের নেতাকর্মীদের সক্রিয় অংশগ্রহন রয়েছে। স্থিমিত ভাব দুরীভুত করতে আমি জেলা সভাপতি-সাধারন সম্পাদককে দ্রুত সম্মেলনের মাধ্যমে স্বেচ্ছাসেবকলীগ পেকুয়াকে উজ্জীবিত করতে বলেছি। এমনও বলেছি যাতে কমিটি চাপিয়ে না দেয়া হয়। আ’লীগের গঠনতন্ত্রে ষ্পষ্ট উল্লেখ আছে একজনকে একাধিক পদ দেয়া যাবেনা। এরপরেও মুলদলে আসতে হলে পুর্বের পদ থেকে অব্যহতি দিতে হবে।

পাঠকের মতামত: