ঢাকা,বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪

‘পুরুষকে ভালোবােসি চানাচুর খেতে নয়’

বিশ্ব ভালোবাসা দিবস। এ দিনে অনেকেই এর পক্ষে-বিপক্ষে নানা ধরনের অনুভূতি প্রকাশ করেছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। এ থেকে বাদ যাননি নির্বাসিত লেখিকা তসলিমা নাসরিনও। তিনিও তার ফেসবুকে অনুভূতি জানিয়েছেন খোলামেলা ভাষায়।image_176531_0

মঙ্গলবার বিশ্ব ভালোবাসা দিবসে ফেসবুক স্ট্যাটাসে তসলিমা জানিয়েছেন, তিনি পুরুষকে চানাচুর খাওয়া বা বসে তার সঙ্গে গল্প করার জন্য শুধু ভালোবাসেন না। তার সঙ্গে সঙ্গমের জন্যই এ ভালোবাসা।

নিচে তার ফেসবুক স্ট্যাটাসটি হুবহু তুলে ধরা হলো-
“আমি কোনও পুরুষকে ভালোবােসি বা তার সঙ্গে প্রেম করতে চাই — তার সঙ্গে বসে বসে শুধু চানাচুর খাওয়ার জন্য আর সুখ দুঃখের গল্প করার জন্য নয় কিন্তু, তার সঙ্গে শোয়ার জন্য। যতদিন আমার শরীরকে হরমোন কামড়াবে, আমি কাউকে খুঁজবো সঙ্গমের জন্য।”

“পুরুষের বেলাতেও ঠিক একই ঘটনা ঘটে। অন্য প্রাণীরা প্রকাশ্যে সেক্স করে, সেক্স নিয়ে তাদের ছুৎমার্গ নেই। কেবল মানুষেরই যত রাখ ঢাক। মানুষই করে এক, বলে আরেক। ‘শুতে চাই’ না ব’লে বলে ‘প্রেম চাই’। আমি তোমাকে চাই, তোমাকে ভালোবাসি, তোমাকে ছাড়া বাঁচবো না — এসব আসলে একধরণের ফোরপ্লে। মানুষের সারা বছরই মেটিং সিজন। আর দুর্ভাগা মানুষই কিনা সেক্সকে রীতিমত ট্যাবু বানিয়ে ছেড়েছে।”

“মেয়েরা হরমোন ফুরিয়ে যাওয়ার পর, আর পুরুষেরা উত্থানরহিত হওয়ার পর যে একত্রবাস করে, সেটা পরষ্পরের প্রতি ‘আমি অসুস্থ হলে তুমি ডাক্তার ডেকে আনবে, তোমার ক্ষিধে পেলে আমি খাবার দেবো’ জাতীয় নির্ভরতার কারণে।”

একই দিনে তসলিমা আরো লিখেছেন, “ভালোবাসা আসলে স্রেফ দেওয়া নেওয়ার ব্যাপার। তুমি আমাকে এই এই দেবে, আমি তোমাকে সেই সেই দেবো। দুটো প্রাণীর মধ্যে দেওয়া নেওয়াটা মোটামুটি একটা সন্তোষজনক অবস্থায় পৌঁছুলে আমরা তাকে ‘প্রেম’ বা ‘ভালোবাসা’ বলি।”

তসলিমা বলেন, “দেওয়া নেওয়ায় গরমিল হলে আমরা সম্পর্ক ভেঙ্গে দিয়ে অন্য কারুর সঙ্গে সম্পর্ক গড়ি যার সঙ্গে দেওয়া নেওয়াটা জুৎসই হয়, — কোনও বিক্রেতার সঙ্গে দরদামে বনিবনা হলে আমরা বেশ খুশি আর না হলে অখুশি, না হলে অন্য বিক্রেতা খুঁজে নিই — এ অনেকটা সেরকম।”

তিনি আরো লিখেছেন, “দেওয়া নেওয়াটাই তো একরকম কেনা বেচা। শুনতে খারাপ লাগে বলে আমরা একে কেনা বেচা বলি না, ভালোবাসা বলি। কারো জন্য মন কেমন করে, কেউ পাশে না থাকলে কষ্ট হয়, — এসব অভ্যেসের কারণে। পোষা ভেড়াটা মরে গেলে বা অনেকদিনের ভালো জুতোটা ছিঁড়ে গেলেও এমন হয়। মানুষ মূলত স্বার্থপর। মানুষের স্বার্থান্বেষী চরিত্রকে আড়াল করার জন্য আমরা হৃদয় হৃদয় বলে চেচামেচি করি। এতে আমাদের, আমরা মনে করি, সুন্দর দেখাচ্ছে বা নিঃস্বার্থ দেখাচ্ছে।”

পাঠকের মতামত: