বিশেষ প্রতিবেদক :
কক্সবাজারের খুরুশকুল ইউনিয়নে প্রশাসনের নাকের ডগা দিয়ে অবাধে চলছে পাহাড় কাঁটার হিড়িক। এখানকার এক শ্রেণীর ভুমিদস্যু সিন্ডিকেট সরকারী বনভূমির পাহাড় কেটে মাটি বিক্রি করলেও নিরব ভূমিকায় রয়েছে প্রশাসন। চলতি মৌসুমে এসব মাটি খেকোরা পাহাড় কেটে বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মান কাজে সরবরাহ করেছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। উক্ত ভুমিদস্যুরা সরকারী বনভূমির পাহাড় কেঁটে দৈনিক শতশত গাড়ী ভর্তি মাটি সরবরাহের ফলে এলাকার পরিবেশ বিপর্যয়ের আশংখা করছেন পরিবেশবাদীসহ সচেতন মহল।
সরেজমিন পরিদর্শন করে দেখা যায়, খুরুশকুল ইউনিয়নের লমাঝি পাড়ার আদর্শ গ্রামে বন বিভাগের পাহাড় একটু একটু করে গিলে খাচ্ছে। গোপন সূত্রে জানা যায়, লমাঝি পাড়া এলাকার নুরুজ্জামানের ছেলে জালাল উদ্দিন, তার ভাই মোঃ হাশেম, একই এলাকার আবু বক্কর ছিদ্দিকের ছেলে খোরশেদ আলম আদর্শ গ্রামের ছংখোলা রোডস্থ সংরক্ষিত বনভূমির বিশাল পাহাড় কেটে স্থানীয় কয়েকজন প্রভাবশালীদের হাতে মোটা অংকের টাকা দিয়ে একটু একটু করে প্রশাসনের নাকের ডগা দিয়ে পাহাড়ের মাটি বিক্রি করছে।
স্থানীয় বাসিন্দা (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) জানান, বনবিট কর্মকর্তার জানামতে পাহাড় কেটে মাটি বিক্রি করছে উক্ত ব্যক্তিরা। এব্যাপারে বনরেঞ্জ কর্মকর্তা বরাবরে বেশ কয়েকবার অভিযোগ করার পরও থামেনি পাহাড় কাটা। শুধু আদর্শ গ্রাম নয় বরং ছংখোলা রোডের বেশ কয়েকটি সরকারী বনভূমির জায়গা দখল করে ভুমিদস্যুরা নির্বিচারে গাছ ও পাহাড় কর্তন করে বিরান ভুমিতে পরিনত করেছে। একই এলাকার আবুল কাশেমের পুত্র নাছির উদ্দিন, কুলিয়া পাড়ার নায়েফ মিয়া প্রকাশ দালাল নায়েফ, কাউয়ার পাড়ার নুর আলম বহদ্দারসহ আরো কয়েকজন মিলে উক্ত পাহাড়ের প্রতি ডাম্পার মাটি ৮শত টাকা করে বিভিন্ন নির্মান ঠিকাদারের কাছে সরবরাহ করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। প্রতি ডাম্পার থেকে ৫০ টাকা যায় মেম্বারের হাতে, ৫০ টাকা যায় বন বিভাগের হাতে। এইসব ভুমিদস্যু সরকারী বনভূমি দখল করে পাহাড় কেটে মাটি বিক্রি করলেও বন বিভাগ দেখেও না দেখার ভান করে থাকে।
এ ইউনিয়নের এসব পাহাড় কাটা মাটি সরকারী বেসরকারী বিভিন্ন অবকাঠামো ভরাট কাজে সরবরাহ করছে স্থানীয় কিছু অসাধু ব্যবসায়ী। অব্যাহত মাটি কাটার ফলে এলাকার সবুজ প্রকৃতি ধ্বংস হয়ে মরভুমিতে পরিনত হচ্ছে।
উক্ত পাহাড় কাটার ব্যাপারে থানায় ও বনবিভাগে অভিযোগ করার পরও পাহাড় কাটা বন্ধ হয়নি। তবে থানা পুলিশ কয়েকদফা অভিযানে মাটি ভর্তি ডাম্পার আটক করলেও অভিযুক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে কোন প্রকার আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়নি। এছাড়াও সমুদ্র উপকূলে নির্মানাধীণ হোটেল-মোটেল ব্যক্তি মালিকানাধীন বিভিন্ন অবকাঠামো ভরাট কাজে উক্ত পাহাড়ের মাটি ব্যবহৃত হওয়ায় প্রকৃতির সৃষ্টি সু-উচ্চ পাহাড় এখন সম্পূর্ণ অরক্ষিত। যেকোন প্রাকৃতিক দুর্যোগে এখানকার মানুষ ভুমিধ্বসে আশংখা করছেন।
পরিবেশ অধিদপ্তর সহকারী পরিচালক সরদার শরিফুল ইসলামের সাথে কথা বলে জানা যায়, আমরা বেশ কয়েকবার অভিযান পরিচালনা করে মাটি ভর্তি ডাম্পার সহ বেশ কয়েকজনকে আটক করে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা প্রদান করেছিলাম। যারা সরকারী বনভুমির মাটি কাটে তাদের বিরুদ্ধে লিখিত কোন অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এছাড়া পাহাড় কর্তন, গাছকাটা, বনভুমিতে অবৈধ বসতবাড়ী নির্মান না করার জন্য ব্যাপক প্রচারের মাধ্যমে জনগণকে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে।
পাঠকের মতামত: