ঢাকা,মঙ্গলবার, ১৯ নভেম্বর ২০২৪

দারুল ইহসানের সনদধারী শিক্ষক-কর্মচারীদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত শিগগিরই

ডেস্ক নিউজ ::উচ্চ আদালতের নির্দেশে বন্ধ হয়ে যাওয়া বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় দারুল ইহসানের সনদ নিয়ে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শিক্ষক-কর্মচারীদের বিষয়ে শিগগিরই সিদ্ধান্ত জানাবে সরকার। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ এসব শিক্ষক-কর্মচারীদের নিয়ে সৃষ্ট জটিলতা নিষ্পত্তির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

২০১৬ সালের ১৩ এপ্রিল উচ্চ আদালতের রায় ঘোষণার পর দারুল ইহসানের সনদ নিয়ে কর্মরত শিক্ষক-কর্মচারীদের এমপিওভুক্তিতে (মানথলি পে অর্ডার) জটিলতা তৈরি হয়। নতুন এমপিভুক্তির জন্য আবেদনকারীদের এমপিওভুক্তি বন্ধ হয়ে যায়। ইনডেক্সধারী শিক্ষক-কর্মচারীরা নতুন প্রতিষ্ঠানে উচ্চতর পদে এমপিওভুক্ত হতে পারছেন না। ফলে বিপাকে পড়েন বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শিক্ষক-কর্মচারীরা।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০০৬ সাল থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত ১৩টি রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৬ সালের ১৩ এপ্রিল হাইকোর্ট রায় ঘোষণা করেন। রায়ে দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ক্যাম্পাস বন্ধ ঘোষণা করা হয় এবং এই নামে কোনও বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের অনুমতি না দিতে সরকারকে নির্দেশ দেওয়া হয়। তবে ওই রায়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের দেওয়া সনদ অবৈধ ঘোষণা করেননি আদালত। রায়ে সনদের বৈধতার প্রশ্নটি সনদ অর্জনকারী ব্যক্তির নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষের এখতিয়ারাধীন বিষয় হিসেবে গণ্য করেন আদালত।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (বেসরকারি মাধ্যমিক) জাবেদ আহমেদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আদালতের নির্দেশের আলোকে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের (মাউশি) প্রস্তাব ও বিশ্ববিদ্যালয়ের মঞ্জুরি কমিশনের মতামতের ভিত্তিতে শিগগিরই বিষয়টি নিষ্পত্তি করা হবে। রায় অনুযায়ী তাদের সনদের গ্রহণযোগ্যতার প্রশ্নটি নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষের (শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা কমিটি) এখতিয়ার। নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ গ্রহণযোগ্যতা দিলে কর্মরত শিক্ষক-কর্মচারীরা এমপিওভুক্তি ও উচ্চপদে পদোন্নতির সুযোগ পাবেন।’

উচ্চ আদালতের রায়ের পর বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শিক্ষক-কর্মচারীদের এমপিওভুক্তি নিয়ে জটিলতা নিরসনে শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব দেয় মাউশি। ২০১৭ সালের ১২ অক্টোবরের প্রস্তাবে বলা হয়, দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্জিত সনদের গ্রহণযোগ্যতার বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের এখতিয়ার ঘোষিত হওয়ায় বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শিক্ষক-কর্মচারী রায়ের আগে (২০১৬ সালের ১৩ এপ্রিলের আগে) এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের কর্মস্থল পরিবর্তন ও উচ্চপদে এমপিওভুক্ত হতে পারবেন। প্রস্তাবে বিষয়টি নিষ্পত্তির জন্য জরুরিভাবে মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত চাওয়া হয়।

২৪ জুন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়ের সনদের গ্রহণযোগ্যতা নিরূপণে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) মতামত চাওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। গত ১০ জুলাই ইউজিসির মতামত চেয়ে চিঠি দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ। গত ২৫ জুলাই ইউজিসির পাঠানো মতামতে হাইকোর্টের রায়ের আলোকে ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হয়। মতামতে ইউজিসি জানায়, ইউজিসি আইন অনুযায়ী কোনও বিশ্ববিদ্যালয়ের দেওয়া সনদ যাচাইয়ের এখতিয়ার কমিশনের নেই। আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়ের দেওয়া সনদের গ্রহণযোগ্যতার বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারে বলে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন মনে করে।

এদিকে মাউশির প্রস্তাবে ব্যারিস্টার এস এম আতিকুর রহমানের মতামত উদ্ধৃত করে বলা হয়, দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্জিত সনদধারীকে নতুন করে কোনও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ দেওয়ার সুযোগ নেই। তবে যারা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত আছেন, তাদের সনদের গ্রহণযোগ্যতা নির্ণয়ে আদালত সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে এখতিয়ার দিয়েছেন।

ধারণা করা হচ্ছে, সে কারণেই দীর্ঘদিন মানবেতর জীবনযাপন করা শিক্ষক-কর্মচারীদের কর্মস্থল পরিবর্তন ও উচ্চপদে পদোন্নতি এবং বিধি মোতাবেক নিয়োগ পাওয়া শিক্ষক-কর্মচারীদের সুযোগ দেবে সরকার, আর তা দেওয়া হবে উচ্চ আদালতের রায়ের আলোকেই।

পাঠকের মতামত: