ঢাকা,মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪

ঢাকায় তৈরি হচ্ছে নকল মোবাইল

1_19420যুগান্তর ::

রাজধানীর অভিজাত শপিংমল থেকে শুরু করে দেশের আনাচে-কানাচে, ফুটপাতে দেদারসে বিক্রি হচ্ছে নকল মোবাইল ফোন সেট। নামিদামি ব্র্যান্ডের লোগো সংবলিত নকল মোবাইল সেট তৈরি হচ্ছে ঢাকাতেই। এসব সেট কিনে প্রতারিত হচ্ছেন সাধারণ মানুষ।

রাজধানীর মার্কেটে সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, নিম্নমানের মোবাইল ফোন সেট বিক্রি হচ্ছে। বিভিন্ন ধরনের লোভনীয় অফার ও নামকরা ব্র্যান্ডের নাম ভাঙিয়ে এবং লেভেল লাগিয়ে বিক্রি করা হচ্ছে এসব মোবাইল ফোন। ১৬শ’ থেকে ২ হাজার টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে এফএম রেডিও, ক্যামেরা, অডিও, ভিডিও, ইন্টারনেট, ডাবল সিম কার্ড, দীর্ঘস্থায়ী ব্যাটারি, ব্লুটুথসহ আরও বিভিন্ন ধরনের প্রোগ্রামযুক্ত মোবাইল।

ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিক্রি হওয়া এসব ফোন সেটের প্রায় সবই চায়না ও দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে নিয়ে আসা হয়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ফ্যাশন, ব্লুটুথ, এমপি ফোর, এলকাটেল, টেকনো, ফর মি, সি ফাইভ, উইয়িং, লি ফোন, ডিস্পিল, গিলভ, এমটিভি, ডিডব্লিউএস, কিংসটেল, কুয়িক শেয়ার, ভিএস এন্ড মি’সহ অর্ধশতাধিক নকল ব্র্যান্ড। এছাড়াও নকিয়া, স্যামসাং, আইফোন, সনি এরিকসন, সনি, সিম্ফনিসহ বেশ কয়েকটি নামকরা ব্র্যান্ডের নকল ও রেপ্লিকা মোবাইলে সয়লাব বাজার। এসব মোবাইল ফোন কিনে ভোগান্তিতে পড়ছেন ব্যবহারকারীরা।

রাজধানীর গুলিস্তান পাতাল মার্কেটে মোবাইল ফোন মেরামত করতে আসা সুজন যুগান্তরকে জানান, দু’মাস আগে ফার্মগেটের একটি দোকান থেকে স্যামসাংয়ের একটি স্মার্টফোন কিনেছিলেন। এরপর থেকেই মোবাইলটিতে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। তিন মাসের মাথায় মোবাইলটি সার্ভিসিং সেন্টারে নিতে হয়। সেখান থেকে জানানো হয়, সেটটি নকল।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজধানীর কেরানীগঞ্জের জিঞ্জিরা আগানগর, বাঁশপট্টি, কাঠপট্টি, থানাঘাট, ফেরিঘাট, বাসস্ট্যান্ড মার্কেট ও গুলিস্তান সিনেমা হলের সামনে হাবীব কমপ্লেক্সসহ এই এলাকার বেশ কিছু বাসাবাড়িতে তৈরি হয় এসব মোবাইল। স্যামসাং, লেনোভো, এইচটিসি, লাভা, মাইক্রোম্যাক্স, পাইলট, সিনিজু, রিগ্যাল, আই ফোন, ম্যাক্সিমাস ও জেডটিইসহ বিভিন্ন ব্র্যান্ডের অ্যান্ড্রয়েড মোবাইলের নকল কারখানা গড়ে উঠেছে এখানে। আর গোপনে এই পণ্যগুলো ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন মার্কেটে। এসব নকল মোবাইল তৈরির যন্ত্রাংশ পাওয়া যায় গুলিস্তান পাতাল মার্কেট ও হাতিরপুল মোতালেব প্লাজায়।

এদিকে ঢাকার পাইকারি মোবাইল মার্কেট বলে পরিচিত গুলিস্তানের পাতাল মার্কেট ও হাতিরপুলের মোতালেব প্লাজার একাধিক দোকান সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, মোবাইলের ক্যাসিং, ব্যাটারি, চার্জারসহ বিভিন্ন যন্ত্রাংশ বিক্রি হচ্ছে। এত পরিমাণ যন্ত্রাংশ কারা ক্রয় করেন জানতে চাইলে গুলিস্তান পাতাল মার্কেটের বিক্রেতা সুজন বলেন, এসব পণ্য আমাদের কাছ থেকে সার্ভিসিংয়ের মেকাররা কিনে নিয়ে যায়। এছাড়া ঢাকার বাইরের কিছু ব্যবসায়ী আমাদের কাছে এই মালামালের অর্ডার দেয়। এখান থেকে এসব পণ্য কিনে নিয়ে তারা কী করে সেটা আমরা জানি না।

কেরানীগঞ্জের জিঞ্জিরা বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন এলাকায় নকল মোবাইল তৈরির কাজ করেন রাকিব (২১)। নকল মোবাইল তৈরি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তার মালিক গুলিস্তানের পাতাল মার্কেট থেকে মোবাইলের ক্যাসিং, ব্যাটারি, চার্জারসহ নানা রকমের পার্টস আনেন। বাজার থেকে অর্ডার দিয়ে তৈরি করে আনা হয় প্যাকেজিং প্যাকেট ও ওয়ারেন্টি-গ্যারান্টি কার্ড। এরপর বাসায় কারিগররা যন্ত্রাংশ ফিটিং করে তৈরি করে মোবাইল ফোন। এছাড়া মোবাইল তৈরির টুকটাক মালামাল নিজেরাই বানিয়ে নেয়ার মতো কারিগরও আছে তাদের।

তিনি আরও বলেন, বিভিন্ন সময় বাজারের দোকানগুলোতে অভিযান চলার কারণে ফোনগুলো লুকিয়ে তৈরি করতে হয়। কেউ যদি এই মোবাইলগুলো পাইকারিভাবে নিতে চায়, তাহলে তাকে কমপক্ষে ২শ’ সেটের অর্ডার দিতে হয়। আর এই মোবাইলগুলো তৈরিতে সাধারণত মার্কেটের দামের চেয়ে অর্ধেক খরচ হয়। আর নামিদামি ব্র্যান্ডের লোগো হলে ব্যবসায়ীরা অনেক লাভ করতে পারে।

পাঠকের মতামত: