সদ্য অনুষ্ঠিত জেলা পরিষদ নির্বাচনে দল সমর্থিত প্রার্থীর পরাজয় ও বিদ্রোহীদের জয়ের পেছনের রহস্য খুঁজছে আওয়ামী লীগ। দলীয় প্রার্থীর পরাজয়ে দলের এমপি-মন্ত্রীদের ইন্ধন থাকলে তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে বলে দলের একাধিক সূত্র জানিয়েছে। গতকাল বিকালে ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর কার্যালয়ে এক অনানুষ্ঠানিক বৈঠকে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বিদ্রোহীদের জয় এবং দলীয় প্রার্থীর পরাজয়ের রহস্য জানতে জেলায় জেলায় খোঁজখবর নিতে নির্দেশ দেন বিভাগীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদকদের। এ ছাড়া ১০ জানুয়ারির পর বর্ধিত সভা করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে দলে অনুপ্রবেশকারীদের ব্যাপারে সতর্ক থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
বৈঠকে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, বি এম মোজাম্মেল হক, এ কে এম এনামুল হক শামীম, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, দফতর সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ, সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য ফরিদুন্নাহার লাইলী, সুজিত রায় নন্দী, ফজিলাতুন্নেসা ইন্দিরা, ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, হারুনুর রশিদ প্রমুখ। দলীয় সূত্রমতে, জেলা পরিষদ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে তৃণমূলে আওয়ামী লীগের দলীয় কোন্দলের বিষয়টি আবারও সামনে এসেছে। বুধবার অনুষ্ঠিত এ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে ৫৯ জেলার মধ্যে ২১টিতে একক প্রার্থী ছিল আওয়ামী লীগের। ফলে মূলত বাকি ৩৮ জেলায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়। আর এসব জেলায়ই প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছিল আওয়ামী লীগের সঙ্গে আওয়ামী লীগের। কোথাও দল সমর্থিত প্রার্থী স্থানীয় এমপি বা মন্ত্রীর পছন্দ না হওয়ায় তারা বিদ্রোহী প্রার্থীকে সমর্থন দেন। কোথাও আবার এমপি বা মন্ত্রীর পছন্দের প্রার্থীকে আওয়ামী লীগ সমর্থন দিলেও তা স্থানীয় নেতাদের পছন্দ না হওয়ায় তারা এর বিরোধিতা করেন। এ বিষয়টি নিয়ে দলের হাইকমান্ডকে ভাবিয়ে তুলেছে। নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিলেও এখন দলীয় প্রার্থীর বিপক্ষে অবস্থানকারী নেতাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার কথা ভাবছে আওয়ামী লীগ। ৪ জানুয়ারি সন্ধ্যায় অনুষ্ঠেয় দলের কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে বিষয়টি উপস্থাপন করা হবে। তার আগেই যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদকদের কারণ খতিয়ে দেখে লিখিত প্রতিবেদন জমা দিতে নির্দেশ দিয়েছেন ওবায়দুল কাদের। বৈঠক সূত্র জানায়, বৈঠকে দলের সাধারণ সম্পাদক জানিয়েছেন, দলীয় প্রার্থীদের পরাজয়ের পেছনে এমপি-মন্ত্রীর দ্বন্দ্ব ছাড়াও জেলা নেতাদের কার কী ভূমিকা ছিল তা জানতে চেয়েছেন দলীয় সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ ছাড়া আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যেন এমন পরিস্থিতি তৈরি না হয় সেজন্য আগে থেকেই পদক্ষেপ নিতে হবে। সেজন্য দলের বিরুদ্ধে ব্যক্তিস্বার্থ নিয়ে এমপি-মন্ত্রীদের কেমন ভূমিকা, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এ ছাড়া অনেক কেন্দ্রীয় নেতার এলাকায় দলীয় প্রার্থীর শোচনীয় পরাজয়ের কারণে ওই নেতার কী ভূমিকা ও তার নেতৃত্বের প্রতি নিজ এলাকায় নেতা-কর্মীর আস্থা কেমন, তাও খতিয়ে দেখা হবে বলে জানা গেছে। ৪ জানুয়ারির আগেই রিপোর্ট জমা দিতে হবে বলে জানিয়েছেন বৈঠকে উপস্থিত নেতারা। এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এ কে এম এনামুল হক শামীম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, দলীয় প্রার্থীর পরাজয় ও বিদ্রোহী প্রার্থীদের জয়ের পেছনের রহস্য অনুসন্ধান করে আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকের আগে লিখিত আকারে জমা দিতে নির্দেশনা দিয়েছেন ওবায়দুল কাদের। তিনি আরও বলেন, ‘আমরা খতিয়ে দেখছি কোন নেতার কী ভূমিকা ছিল, কেন দলসমর্থিত প্রার্থীর পরাজয় হলো। ’ তিনি বলেন, ৫ জানুয়ারি গণতন্ত্রের বিজয় দিবস উপলক্ষে সারা দেশে বিশাল শোডাউন করার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। কেন্দ্রীয়ভাবে ঢাকায় দুটি স্থানে জনসভা করা হবে। ওই দিন সরকারের বিগত সাত বছরের সাফল্য জনগণের সামনে তুলে ধরার পাশাপাশি দেশে নির্বাচন না হলে কী পরিস্থিতি সৃষ্টি হতো, তা তুলে ধরা হবে জনগণের সামনে— এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। দলের আরেক সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, জেলা পরিষদ নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীদের পরাজয়ের কারণ নির্ণয় ছাড়াও ১০ জানুয়ারির পর জেলায় জেলায় বিশেষ বর্ধিত সভা করা হবে। ওই বর্ধিত সভা থেকে দলের দুর্বল দিকগুলো লিপিবদ্ধ করে লিখিত আকারে দলীয় সভানেত্রীকে জানানো হবে। এ ছাড়া গতকালের ওই অনানুষ্ঠানিক বৈঠকে ওবায়দুল কাদের দলের ভিতরে অনুপ্রবেশকারীদের ব্যাপারে সতর্ক থাকতে কেন্দ্রীয় ও জেলা নেতাদের বিশেষ নির্দেশনা দিয়েছেন। বৈঠক সূত্র জানায়, এ ছাড়া ৫ জানুয়ারি সরকারের তৃতীয় বর্ষপূর্তি উপলক্ষে গণতন্ত্র দিবস পালন করতে বিভাগীয় ও জেলায় জেলায় নির্দেশনা পাঠাতে বলা হয় দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের। অন্যদিকে টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনের তারিখ পেছাতে দলীয় সভানেত্রীর কার্যালয়ে এসেছিলেন স্থানীয় আওয়ামী লীগের দুই শতাধিক নেতা-কর্মী। ৮ জানুয়ারি ঘাটাইলে সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। যারা সম্মেলন পেছানের পক্ষে তারা বিতর্কিত এমপি আমানুর রহমান রানার কর্মী-সমর্থক বলে জানা গেছে। এ বিষয়েও সেখানে আলোচনা হয়েছে। তবে সম্মেলন পেছানোর কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
পাঠকের মতামত: