সিলেট, ঢাকা, চট্টগ্রাম, কুমিল্লাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় সম্প্রতি ধর্মীয় জঙ্গিবাদের নামে পরিচালিত সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের বিস্তারে গভীর উদ্বিগ্ন প্রকাশ করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। একই সঙ্গে তিনি দোষারোপের রাজনীতি না করে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ জাতীয়ভাবে মোকাবিলা করার জন্য ক্ষমতাসীনদের প্রতি আবারো আহ্বান জানান।
মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে তিনি এসব কথা বলেন। বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রেস সচিব মারুফ কামাল খান বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেন।
খালেদা জিয়া বলেন, ‘আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলেই কেন জঙ্গিবাদ এভাবে মাথাচাড়া দিয়ে উঠে, তা নিয়ে প্রশ্ন থাকলেও আমরা এ প্রশ্ন কখনো তুলিনি এবং এ নিয়ে দোষারোপের রাজনীতিতেও লিপ্ত হইনি। বিশেষ কোনো সরকার বা দলের নয়, এটি একটি জাতীয় সমস্যা। তাই দোষারোপের রাজনীতি না করে সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদের সমস্যাকে জাতীয়ভাবে মোকাবিলার জন্য ক্ষমতাসীনদের প্রতি আবারো আহ্বান জানাচ্ছি। দেশের সকলকে এ সমস্যা নিরসনে ঐক্যবদ্ধ হবার অনুরোধ করছি।’
তিনি বলেন, বর্তমানে স্পর্শকাতর একটি সময়ে জঙ্গিবাদের আকস্মিক বিস্তার এবং দমন অভিযানে স্বচ্ছতার অভাবে জনমনে নানা প্রশ্ন ও সংশয়ের সৃষ্টি হয়েছে। এই সব সন্দেহ দূর করতে হবে। এই বিষয়গুলো গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানান তিনি।
সিলেটে একটি আবাসিক ভবনে আগ্নেয়াস্ত্র ও বিস্ফোরকসহ গোপনে অবস্থানকৃত সন্ত্রাসীদের দমনের লক্ষ্যে সফল অভিযান পরিচালনার জন্য সেনাবাহিনীর প্যারা কমান্ডোবৃন্দসহ দেশরক্ষা বাহিনীকে অভিনন্দন জানান খালেদা জিয়া। একইসাথে অভিযানে বিভিন্ন বাহিনীর সদস্য এবং যেসব সাধারণ মানুষ হতাহত হয়েছেন, তাদের প্রতি শোক ও সহানুভূতি প্রকাশ করেন তিনি।
বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ একটি বৈশ্বিক সংকটে পরিণত হয়েছে। বাংলাদেশও এ থেকে বিচ্ছিন্ন নয়। এ সংকট মোকাবিলায় আমাদেরকে প্রয়োজনীয় আন্তর্জাতিক সহযোগিতা নিয়ে জাতীয় ঐক্যের ভিত্তিতে অগ্রসর হতে হবে।
তিনি বলেন, দুঃখের বিষয় আমাদের এই আহ্বান চরমভাবে উপেক্ষিত হয়ে আসছে।
বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, কেবল দমন অভিযান চালিয়ে সমাজ থেকে জঙ্গিবাদের শেকড় পুরোপুরি উচ্ছেদ করা সম্ভব নয়। দু’-একটি দমন অভিযানের সাফল্যে আত্মপ্রসাদ লাভ করারও কোনো সুযোগ নেই। মুসলিমপ্রধান এই দেশটিতে গণতন্ত্রহীনতা, জবাবদিহিতাহীন শাসন, দুর্নীতি, সুবিচারের অভাব এবং যুব সমাজের বেকারত্বই জঙ্গিবাদ বিস্তারের প্রধান কারণ। এ কারণগুলো দূর করতে হবে। জনগণকে আস্থায় নিয়ে তাদের কাছ থেকে সক্রিয় সহযোগিতা নিতে হবে।
তিনি বলেন, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে বিএনপির অবস্থান অত্যন্ত কঠোর ও খুবই স্পষ্ট। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতাসীন হবার পর দেশব্যাপী এই সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিস্তার ঘটে। ২০০১ সালে নির্বাচিত হয়ে আমরা দায়িত্ব নেয়ার পর বিএনপি সরকারও জঙ্গিবাদের এই সংকটের মুখোমুখি হয়।
আমরা কঠোর হাতে তা দমন করি। জঙ্গি সংগঠনগুলোর নেটওয়ার্ক পুরোপুরি ভেঙে দেয়া হয় এবং শীর্ষ জঙ্গি নেতাদের জীবিত অবস্থায় গ্রেপ্তার করে তাদের বিচার সম্পন্ন করা হয়। পরে তাদের শাস্তি কার্যকর হয়।
পাঠকের মতামত: