বংশ ও পারিবারিক ব্যবসা রক্ষায় ছেলে চেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু ছেলের বাবা হতে পারছিলেন না। পরে ছোট ভাইয়ের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনে বাধ্য করেন স্ত্রীকে। শুধু তাই নয়; ছোট ভাইয়ের সঙ্গে স্ত্রী মেলামেশা করছে কি না সে বিষয়েও নজরদারি করতেন তিনি।
এ রকম অবৈধ আবদারে অতিষ্ঠ হয়ে স্বামীকে খুন করেছেন ওই নারী। পরে ওই নারী ও তার ভাইকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে এ ঘটনা ঘটেছে বলে দেশটির জাতীয় দৈনিক হিন্দুস্তান টাইমস এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, ওই নারী যখন স্বামীর অবৈধ নির্দেশ পালনে অনীহা দেখাতেন; তখন তার ওপর নেমে আসত নির্যাতনের খড়্গ। তাকে মারধর করতেন স্বামী; এমনকি গণধর্ষণ ও পতিতালয়ে বিক্রি করারও হুমকি দিতেন। এক মেয়ের বাবা ওই ব্যক্তি স্ত্রীর গর্ভে মেয়ে সন্তান আসায় তাকে কয়েকবার গর্ভপাত করাতেও বাধ্য করেছেন।
ওই নারী দাবি করে বলেন, স্বামীর এমন কাজে তিনি ক্লান্ত-বিধ্বস্ত হয়ে পড়েছিলেন। গত রোববার তিনি ধৈর্য হারিয়ে ফেলেন এবং স্বামীকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। ওই রাতে খাবারের সঙ্গে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে দেন তিনি। রাতের খাবারের পর যখন ঘুমিয়ে পড়েন, তখন শ্বাসরোধে হত্যা করেন তাকে।
পরদিন সকালে পুলিশ ডেকে স্বামীকে খুনের তথ্য জানান তিনি। এক তদন্ত কর্মকর্তা হিন্দুস্তান টাইমসকে বলেন, এটি ছিল ক্লুবিহীন একটি মামলা। আমরা এক নারীর টেলিফোন পাই যে, তার স্বামী খুন হয়েছেন। তিনি কান্নাকাটি করছিলেন। গ্রেফতার এড়াতে একটি গল্পও সাজান তিনি। তিনি আমাদেরকে বলেন, তাদের বাড়িতে দুই মেহমান এসেছিল; একটি পার্টিতে অংশ নেয়ার পর তারা এক কক্ষে ঘুমিয়ে পড়েন; তিনি অন্য কক্ষে ঘুমিয়েছিলেন।
ওই নারী বলেন, পরদিন সকালে ঘুম থেকে ওঠে ওই কক্ষ বাইরে থেকে তালাবদ্ধ অবস্থায় দেখতে পান। দরজা খুলে স্বামীকে বিছানার ওপর মৃত অবস্থায় দেখেন। এ সময় ওই দুই মেহমানকে খুঁজে পাননি তিনি।
পুলিশ দুই অতিথির সন্ধানে নেমে কোনো ক্লু পায়নি। তদন্তে নেমে পুলিশ ওই এলাকার সিসিটিভি থেকে একটি ফুটেজ সংগ্রহ করে। এরপরেই বেরিয়ে আসে ঘটনার রহস্য। রাত ৩ টার দিকে ওই নারীর বাসা থেকে এক ব্যক্তি বেরিয়ে যান।
ফুটেজে দেখা যাওয়া ব্যক্তি ওই নারীর ভাই বলে ফুটেজ বিশ্লেষণে বেরিয়ে আসে। পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা যখন তাকে ওই ফুটেজের মুখোমুখি করি তখন মুখ খোলেন তিনি। কীভাবে স্বামীকে হত্যার পরিকল্পনা করেছিলেন তাও জানান। আমরা স্বীকারোক্তি অনুযায়ী ভাইসহ ওই নারীকে গ্রেফতার করেছি।’
পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে আসে ভয়াবহ তথ্য। তিনি পুলিশকে বলেন, ১৮ বছর আগে তাদের বিয়ে হয়। বিয়ের কয়েক বছর পর, তার স্বামী ছেলে সন্তান চাওয়া শুরু করেন। ২০১০ সালে এক মেয়ের জন্ম হলেও অপুষ্টিহীনতার কারণে চার বছর মারা যায়। মেয়ে শিশুর ভ্রুণ গর্ভে আসায় তার স্বামী বেশ কয়েকবার গর্ভপাত করাতে বাধ্য করেন তাকে।
পরে প্রায়ই তাকে মারধর করেন স্বামী। তার চরিত্র নিয়েও প্রশ্ন তোলেন। ওই নারীর অভিযোগ, স্বামীর ছোট ভাইয়ের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনের বাধ্য করা হতো তাকে। ভাইয়ের সঙ্গে স্ত্রী শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করেছে কি না সেবিষয়ে তত্ত্বাবধান করতেন।
পাঠকের মতামত: