ঢাকা,শনিবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪

চট্টগ্রামে গোপন বৈঠক থেকে ইসলামী সমাজের ২৪ নেতা-কর্মী আটক

অনলাইন ডেস্ক ::::আটক9_113690_121433-1_121882-3

চট্টগ্রামে ইসলামী সমাজ নামে পুলিশের কালো তালিকাভুক্ত একটি সংগঠনের ২৪ নেতা-কর্মীকে আটক করেছে পুলিশ। শুক্রবার রাতে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ডিবি পুলিশ ও স্পেশাল টাস্ক গ্রুপের (এসটিজি) সদস্যরা নগরীর পাহাড়তলী থানাধীন নয়াবাজারের মৌসুমী ময়ূর ম্যানশনের একটি ফ্ল্যাটে অভিযান চালিয়ে বৈঠকরত অবস্থায় তাদের আটক করে।
নগর গোয়েন্দা পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার পরিতোষ ঘোষ এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তাদের বিরুদ্ধে মামলার প্রস্তুতি চলছে বলেও জানান তিনি।
আটককৃতরা হচ্ছে- মো. ইউসুফ (৪৬), রুহুল আমিন (৪৫), আমির হোসেন (৫০), জামাল উদ্দিন (৪২), আবু হানিফ হারিস(৫৩), মো. রফিকুল ইসলাম রুবেল (২৭), আলমগীর হোসেন (৩৫), দিদার হোসেন (৩৫), মো. আনোয়ার (৪৪), মো.শাহ আলম (৪০), রবিউল হোসেন (৩৭), তৌহিদুল ইসলাম (২২), আনোয়ার হোসেন (৪২), আব্দুল ওহাব (৫৪), আব্দুর রব (৪০), মো. সাদেক (৪২), আবু বক্কর কামাল (৫০), আব্দুল কাদের (২৭), মো. আকবর হোসেন (৪২), ধর্মান্তরিত মুসলমান সাইফুল ইসলাম (সাবেক নাম কৃষ্ণানন্দ দে), মো. খলিল (২৬), আব্দুল হাকিম (৪৫), মোবারক আলী (৪৫) ও মো. রবিউল (২৮)।
এ বিষয়ে শনিবার দুপুরে সিএমপি হেড কোয়ার্টারে দুপুর সাড়ে ১২টার সময় এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে গোয়েন্দা পুলিশ। এতে নগর গোয়েন্দা পুলিশের উপ পুলিশ কমিশনার পরিতোষ ঘোষ জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ময়ূর ম্যানশনের ভাড়াটে পিক-আপ চালক জামাল উদ্দিনের বাসায় বৈঠকরত অবস্থায় তাদের গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃতরা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে, তারা প্রচলিত গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় বিশ্বাসী নয় এবং এজন্য খেলাফত প্রতিষ্ঠার জন্য দলে লোক ভেড়ানোর উদ্দেশ্যে গোপন বৈঠক করছিল।
তিনি আরও জানান, গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে মো. ইউসুফ (৪৬) সংগঠনটির টঙ্গী এলাকার ও রুহুল আমিন (৪৫) চট্টগ্রাম এলাকার দায়িত্বশীল নেতা। এরা সংগঠনের প্রচার ও জনবল বাড়ানোর কাজে নিয়োজিত ছিলেন। মূলত অল্প শিক্ষিত নিম্নআয়ের মানুষদের টার্গেট করে ধর্মের ভয় দেখিয়ে ও নিজেদের মতো করে ধর্মের বয়ান দিয়ে তাদের দলভুক্ত করার চেষ্টা করতেন এরা।
গোয়েন্দা পুলিশের এই কর্মকর্তা জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ইউসুফ জানিয়েছে, আগে টঙ্গী এলাকায় দর্জিগিরি করতো সে। কিন্তু এ পথে আসার পর দলের সদস্যরাই চাঁদা তুলে তার সাংসারিক খরচ চালিয়ে থাকে। সে এর আগে ২০০৮ সালে জামালপুরে দায়ের করা জেএমবির একটি মামলায় গ্রেফতার হয়ে দুই মাস কারাভোগ করেছিল। তবে এসব তথ্য আরও যাচাই করে দেখবে পুলিশ।
এদিকে, গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার হুমায়ুন কবির জানিয়েছেন, তারা খোঁজ নিয়ে জেনেছেন, ইসলামী সমাজের কেন্দ্রীয় কার্যালয় কুমিল্লার কুশিয়ারা বাজারের রায়পুরে অবস্থিত। এ সংগঠনটির সঙ্গে জামায়াতের সংযোগ রয়েছে। সংগঠনটি প্রতিষ্ঠা করে আব্দুল জব্বার নামের এক জামায়াত নেতা। কিন্তু শুরুর দিকে দলটির তেমন কর্মসূচি ছিল না। পরে হুমায়ুন কবির নামে জামায়াতের একজন সদস্য সংগঠনটি পুনরুজ্জীবিত করে এর আমির হিসেবে হাল ধরেছেন।
তিনি আরও বলেন, এ সংগঠনে মূলত নিম্ন আয়ের অল্প শিক্ষিত মানুষকে মগজ ধোলাই করে দলের সদস্য বানানোর পাঁয়তারা চলছিল। রাষ্ট্রের যে প্রচলিত আইনি কাঠামো তা এরা বিশ্বাস করে না। তারা খেলাফত প্রতিষ্ঠার জন্য লড়ছে।
হুমায়ুন কবির আরও জানান, আটক হওয়া ইউসুফ দাবি করেছে সে ইসলামী সমাজের টঙ্গী শাখার দায়িত্বে রয়েছে আর রুহুল আমিন চট্টগ্রামের নয়াবাজারের বউবাজার ওয়ার্ড জামায়াতের সভাপতি। তবে এর সত্যতা নিশ্চিত করার চেষ্টা করছেন তারা।
খেলাফত প্রতিষ্ঠার কথা আরও কিছু চরমপন্থী ও নিষিদ্ধ সংগঠনও বলে থাকে। সেক্ষেত্রে এসব দলের সঙ্গে ইসলামী সমাজের কোনও যোগসূত্র আছে কিনা সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করা হবে। এই মুহূর্তে কিছু বলা যাচ্ছে না।
তিনি জানান, আটকদের বিরুদ্ধে আজ থানায় মামলা দায়ের হবে এবং তাদের আদালতে হাজির করে রিমান্ড চাওয়া হবে।

পাঠকের মতামত: