ঢাকা,মঙ্গলবার, ১৯ নভেম্বর ২০২৪

ঘুষের ৬লাখ ৪২হাজার টাকাসহ গ্রেপ্তার ২

চকরিয়ায় সাব রেজিস্ট্রার কার্যালয়ে দুদকের সফল অভিযান (ফলোআপ)

নিজস্ব প্রতিবেদক, চকরিয়া ::  চকরিয়ায় সাব রেজিস্ট্রার কার্যালয়ে দুদকের অভিযান, ঘুষের টাকাসহ গ্রেপ্তার ২
চকরিয়া উপজেলা সাবরেজিস্ট্রার কার্যালয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) অভিযান চালিয়েছে। বৃহস্পতিবার বিকাল ৫টা থেকে রাত সাড়ে ৩টা পর্যন্ত এ অভিযান পরিচালনা করা হয়। এ সময় সাব রেজিস্ট্রার মো. নাহিদুজ্জামান (৩২) ও অফিস মোহরার দূর্জয় কান্তি পালকে (৩৯) গ্রেফতার করা হয়।

প্রায় সাড়ে ১০ ঘণ্টার অভিযানে চকরিয়া সাব রেজিস্ট্রার কার্যালয় থেকে ঘুষ ও কমিশন বাবদ আদায় করা বিভিন্ন স্থান থেকে ৬ লাখ ৪২ হাজার ১০০ টাকা উদ্ধার করা হয়। দুদক চট্টগ্রাম কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক রিয়াজ উদ্দিন অভিযানের এ তথ্য চকরিয়া নিউজকে নিশ্চিত করেছেন।

ব্যাপক ঘুষ লেনদেনসহ দূর্নীতির অভিযোগে এ অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে বলে দুদকের এ কর্মকর্তা জানিয়েছেন। গ্রেফতার দুজনকে আদালতে সোপর্দ করার জন্য ভোরে চকরিয়া থানায় নেওয়া হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, চকরিয়া পৌরসভার কাহারিয়ার ঘোনার মৃত আবদুল হাকিমের ছেলে রশিদ আহমদ কিছু দিন আগে সাবরেজিস্ট্রার কার্যালয়ের বিরুদ্ধে ঘুষ ও কমিশন আদায়ের অভিযোগ এনে হটলাইন ১০৬ নম্বরে অভিযোগ দেন।

জমি রেজিস্ট্রি করার সময় তার কাছ থেকে সাড়ে ৯ হাজার টাকা ঘুস ও কমিশনের টাকা আদায় করা হয়েছিল বলে জানিয়েছেন তিনি। রশিদ আহমদ জানান, বৃহস্পতিবার দুদকের অভিযানের সময় তার কাছ আদায় করা টাকা দুদক কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে ফেরত দেওয়া হয়েছে।

আদালতে সোপর্দের জন্য দেওয়া দুদকের প্রতিবেদনে ৩জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে। অভিযুক্তদের মধ্যে দুজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অপর অভিযুক্ত সাব রেজিস্ট্রার কার্যালয়ের অফিস সহকারী শ্যামল বডুয়া অভিযানের খবর পেয়ে দুদক টিমকে ফাঁিক দিয়ে ছাদের উপর দিয়ে কৌশলে পালিয়ে গেছে। অভিযুক্ত ও গ্রেফতার দুজনের বিরুদ্ধে মামলার প্রক্রিয়া চলছে বলে দুদক কর্মকর্তা রিয়াজ উদ্দিন জানান।

দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয় চট্টগ্রাম-২ এর সহকারি পরিচালক মো. রিয়াজ উদ্দিন জানান, সাব-রেজিস্ট্রার মো. নাহিদুজ্জামানের ব্যববহৃত রেকর্ড রুমের স্টিলের লকারের প্রথম ড্রয়ার থেকে ১ লাখ ৯২ হাজার ৫৫০ টাকা জব্দ করা হয়েছে। এছাড়াও অফিস সহকারি শ্যামল বড়ুয়ার টেবিলের ড্রয়ার থেকে ২ লাখ ৮৯ হাজার ৫৫০ টাকা এবং অফিস মোহরার দুর্জয় কান্তি পালের ড্রয়ার থেকে ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা জব্দ করা হয়েছে। জব্দ করার টাকাগুলোর বিষয়ে তারা দুদককে সন্তোষজনক কোন ব্যাখ্যা দিতে পারেননি। টাকাগুলো তারা দলিল রেজিস্ট্রিকালে ঘুষ হিসেবে গ্রহন করেছেন। তাদের ড্রয়ার থেকে ঘুষ লেনদের হাতের লেখা ৪১টি স্লিপ জব্দ করা হয়েছে। ওই স্লিপে সাব-রেজিস্ট্রারসহ বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ঘুষ লেনদেনের তথ্য উল্লেখ আছে।


 

তিনি জানান, আটক দুই জনকে আজ ভোররাত সাড়ে ৩ টার দিকে চকরিয়া থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে। আজ বিকেল ৫ টার মধ্যে তাদের আদালতে তোলা হবে। এ ঘটনায় মামলা দায়েরর প্রস্তুতি চলছে।

দুদক সূত্র জানায়, সাধারণ মানুষের অভিযোগের প্রেক্ষিতে দুর্নীতি দমন কমিশনের একটি টিম ছদ্মবেশে বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে চকরিয়া সাব-রেজিস্ট্রারের কার্যালয়ে অবস্থান নেয়। ঘুষ লেনদেনের বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পর সন্ধ্যা ৬ টার দিকে তারা অভিযান শুরু করে। অভিযান শেষ হয় রাত ৩ টার দিকে।
চকরিয়া থানার ওসি শাকের মোহাম্মদ যুবায়ের চকরিয়া নিউজকে জানান, গ্রেফতারদের থানা হেফাজতে রাখা হয়েছে। তিনি আরও জানান, আটক সাবরেজিস্ট্রার মো. নাহিদুজ্জামানের বাড়ি নাটোর জেলার গুরুদাশপুর থানার উত্তর নাড়িবাড়ি গ্রামে। তার পিতার নাম মো. মোজাম্মেল হক। অফিস মোহরার দুর্জয় কান্তি পালের বাড়ি কক্সবাজার সদর উপজেলার খুরুশকুলে। তার পিতার নাম মধুরাম পাল। পলাতক অফিস সহকারি শ্যামল বড়ুয়া কক্সবাজার শহরের মোহাজের পাড়া এলাকার দীনবন্ধু বড়ুয়ার ছেলে।

পাঠকের মতামত: