এম জিয়াবুল হক, চকরিয়া ::
কক্সবাজারের চকরিয়া কোনাখালী ইউনিয়নে ঘাতকদের ছুরিকাঘাতে নির্মম খুনের শিকার কলেজ ছাত্র আসহাবুল করিম জিহাদ হত্যাকাণ্ডে জড়িত ঘাতকদের গ্রেফতার দাবিতে মানববন্ধন করেছে আত্মীয় স্বজনসহ বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসি। গতকাল সোমবার বেলা এগারোটার দিকে চকরিয়া উপজেলা পরিষদ সড়কের চিরিঙ্গা ভুমি অফিসের সামনে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
মানববন্ধন থেকে দাবি করা হয়েছে, পেকুয়া উপজেলার কলেজ ছাত্র নিরাপরাধ আসহাবুল করিম জিহাদকে চকরিয়া উপজেলার কোনাখালীতে কৌশলে ঢেকে নিয়ে ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়েছে। এ ঘটনায় চকরিয়া থানায় ১২ জনকে আসামি করে মামলা হলেও গত ১১ দিনে এজাহারনামীয় কোন আসামি গ্রেফতার হয়নি।
অবশ্য ঘটনার দিন তাৎক্ষণিক স্থানীয় লোকজন একজনকে আটক করে পুলিশে দিয়েছেন। পরে নিহতের পরিবার থানায় এজাহার দিলে মামলায় ওই আসামীকে গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে প্রেরণ করে চকরিয়া থানা পুলিশ।
তবে, হত্যাকান্ডের মুল মাস্টারমাইন্ড ও চোরাই মোবাইল বেচাকেনার সাথে জড়িত চোর চক্রের শীর্ষ গডফাদার এবং জিহাদ হত্যা মামলার ১নং আসামী নোমানসহ জড়িত ১১ আসামী গ্রেফতার না হওয়ায় ক্ষোভ ও অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন নিহতের পরিবারের সদস্যরা ও এলাকাবাসী।
চকরিয়া থানা পুলিশ জানিয়েছেন, কলেজ ছাত্র জিহাদের খুনিদের গ্রেফতারে পুলিশের কয়েকটি টিম মাঠে কাজ করছেন এবং ইতোমধ্যে এ ঘটনায় একজনকে গ্রেপ্তারও করা হয়েছে।
জানা যায়, গত ১ ডিসেম্বর শুক্রবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে চকরিয়া উপজেলার কোনাখালী ইউনিয়নের মরংঘোনা স্টেশনে পেকুয়া সিকদার পাড়া থেকে কৌশলে ডেকে নিয়ে ছুরিকাঘাত করে নির্মমভাবে হত্যা করা হয় কলেজ ছাত্র আসহাবুল করিম জিহাদকে (২২)। নিহত জিহাদ পেকুয়া উপজেলার সদর ইউনিয়নের সিকদার পাড়া গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য মকছুদল করিমের ছেলে এবং কক্সবাজার সিটি কলেজের অনার্স তৃতীয় বর্ষের নিয়মিত ছাত্র ছিলেন।
ঘটনার পর গত ৩ ডিসেম্বর নিহতের পিতা মকছুদুল করিম বাদী হয়ে চকরিয়া থানায় ১২ জনের নাম উল্লেখ করে আরো ২/৩ জনকে অজ্ঞাত দেখিয়ে চকরিয়া থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
এজাহারনামীয় আসামীরা হলেন চকরিয়া কোনাখালী ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের ছড়াপাড়া এলাকার আবদুল হাকিমের ছেলে নোমান (২৫), কালাম বকসুর ছেলে মোবারক (২৩) মৃত জাফর আলমের ছেলে মো: বখতিয়ার (২৫), আজিজুল হকের ছেলে মো: বোরহান (২৩), জাহাঙ্গীর আলমের ছেলে মো: আমজাদ, আবদুল হাকিম এর ছেলে মো: দানব প্রকাশ দানু (২২), ফিরোজ ওরফে কালা পুতুর ছেলে সাইফুল ইসলাম (৩০), মোঃ সোহেল (২০), আবদুল হাকিমের ছেলে মো: রমিজ রানা (২০), নুরুল আবছারের ছেলে মো: মুবিন (২২), মৃত জাফর আলমের ছেলে ফারুক (২২) ও একই ইউনিয়নের কুতুবদিয়া পাড়া গ্রামের টমটম চালক সোহান (২০)।
চকরিয়া থানায় দায়েরকৃত হত্যা মামলার এজাহারে বাদি মকছুদুল করিম উল্লেখ করেছেন, তার ছেলে আসহাবুল করিম জিহাদ (২৩) কক্সবাজার সিটি কলেজে অনার্স ৩য় বর্ষের ছাত্র। তিনি বলেন, ১ নং আসামী নোমানের কাছ থেকে প্রায় ২-৩ মাস পূর্বে আমার ছেলে ত্রিশ হাজার টাকা পাওনা আছে। ১নং আসামী উক্ত টাকা আমার ছেলেকে আজ দিবে, কাল দিবে মর্মে বলে কালক্ষেপণ করে আসছিলেন। পরবর্তীতে ঘটনার কয়েকদিন পূর্বে ১নং আসামী নোমানের সাথে পাওনা টাকার বিষয়ে আমার ছেলের সাথে কথা কাটাকাটি হয়। এরপর থেকে বিভিন্ন কৌশলে ১নং আসামীর নেতৃত্বে অপরাপর আসামীরা আমার ছেলেকে হত্যার পরিকল্পনা করে।
মামলার বাদী এজাহারে আরো উল্লেখ করেন, ঘটনার দিন গত ১ ডিসেম্বর সন্ধ্যা আনুমানিক ৭ঘটিকার সময় আমার ছেলে আসহাবুল করিম জিহাদকে মামলার ১নং আসামীর কাছ থেকে পাওনা ৩০হাজার টাকা নেওয়ার জন্য চকরিয়া উপজেলার কোনাখালী ইউনিয়নের মরংঘোনাস্থ কামাল হোসেন এর দোকানের সামনে আসতে বলে।
আমার ছেলে পেকুয়া থেকে মোটর সাইকেল যোগে ঘটনাস্থলে পৌঁছানোর পর পূর্ব থেকে উৎপেতে থাকা নোমানের নেতৃত্বে সন্ত্রাসীরা টাকা লেনদেন সংক্রান্ত আক্রোশে পরিকল্পিতভাবে হাতে ধারালো দা, ছোরা, লোহার রড ইত্যাদি মারাত্মক দেশীয় অবৈধ অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে তার ছেলেকে টানা-হেঁচড়া করে সড়কের পাশে নিয়ে যায়। এরপর নোমান তার কোমর থেকে ধারালো ছোরা বের করে আমার ছেলে আসহাবুল করিম জিহাদকে হত্যার উদ্দেশ্যে বুকের বাম পার্শ্বে গুরুতর আঘাত করে। এরপর নোমানের সাথে থাকা অপরাপর সন্ত্রাসীরা জিহাদের শরীরের বিভিন্ন অংশে ধারালো অস্ত্রদ্বারা নির্মমভাবে আঘাত করে ঘটনাস্থলেই জিহাদের মৃত্যু নিশ্চিত করে।
জানা যায়, ঘটনার পর আশেপাশের লোকজন সন্ত্রাসীদের কবল থেকে জিহাদকে গুরুতর রক্তাক্ত জখম অবস্থায় উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য পেকুয়া সরকারী হাসপাতালের জরুরী বিভাগে ভর্তি করায়। এসময় কর্তব্যরত চিকিৎসক জিহাদের শরীর পরীক্ষা করে মৃত ঘোষনা করেন। এরপর পেকুয়া থানা পুলিশ হাসপাতালে এসে নিহত জিহাদের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরী করেন।
নিহতের পিতা মকসুদুল করিম জানান, আমার ছেলে খুবই মেধাবী ও ভাল মনের অধিকারী ছিলেন। খুনিরা তাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে। ছেলেকে তো আর ফিরে পাবোনা। আমি এখন খুনীদের বিচার চাই।
চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মো: আলী বলেন, কলেজ ছাত্র জিহাদ খুনের ঘটনায় ১জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেফতারকৃত আসামী ইতোমধ্যে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্ধি দিয়েছেন। আমরা মামলার অপরাপর আসামিদের গ্রেপ্তারে জোর চেষ্টা চালাচ্ছি।
ইতোমধ্যে কলেজ ছাত্র জিহাদ হত্যার মামলার আসামীদের গ্রেফতার দাবিতে পেকুয়া চৌমুহুনী এলাকায় মানববন্ধন, প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে নিহত জিহাদের সহপাঠি ও এলাকাবাসীরা।
পাঠকের মতামত: