ঢাকা,শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪

চকরিয়ার বনাঞ্চল দখল নিয়ে চলছে খুনাখুনী

Chakaria Picture 29-05-2016.(1)নিজস্ব প্রতিনিধি, চকরিয়া :::

কক্সবাজার উত্তর বনবিভাগের ফাঁসিয়াখালী রেঞ্জের বিভিন্ন বনবিট ও চট্রগ্রাম দক্ষিণ বনবিভাগের চকরিয়ার বরইতলী বনবিটের বিশাল ভূমি বেদখল হয়ে যাচ্ছে। ভূমিদস্যুরা বনাঞ্চলের জমি বেচাবিক্রি করছে। প্রভাবশালী ব্যক্তিরা বন কর্মকর্তা কর্মচারীদের টাকা দিয়ে জমি কিনে নিয়ে বনাঞ্চলের ভিতরে কটেজ নির্মাণও করে নিয়েছে। মৎস্য ঘেরও তৈরী করেছে। এসব দখল বেদখলে বাঁধা দেয়ার কেউ নেই। এ ক্ষেত্রে বন কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে বরং যোগসাজসের অভিযোগ রয়েছে। বন ভূমি দখল বেদখল নিয়ে খুনোখুনির ঘটনাও ঘটছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে চকরিয়ার পুরো বনভূমি অচিরেই বেদখল হয়ে যাবে। আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতিরও অবনতি ঘটার আশংকা দেখা দিয়েছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়; অপর দিকে চট্রগ্রাম দক্ষিণ বনবিভাগের চুনতি রেঞ্জের চকরিয়া উজেলার বরইতলী বনবিটের বেশীর ভাগ বনভূমি বেদখল হয়ে গেছে। এখানে নতুন নতুন ঘর নির্মাণ করে বসতি স্থাপন করা হচ্ছে। বরইতলী বনবিট অফিসের পাশে রয়েছে শত বছরের মাদার গর্জন বাগান। যা চট্রগ্রাম-কক্সবাজার সড়ক দিয়ে যাতায়তকারী যে কারো দৃষ্টি খানিক আটকে দিতে পারে। ওই মাদার গর্জন গাছের ফাঁকে ফাঁকে এখন নতুন নতুন ঘর তোলা হচ্ছে। ওই গর্জন বাগানের ভেতরে মোহাম্মদ নগর এলাকায় চকরিয়া পৌরসভার এক কোটিপতি ব্যবসায়ী কটেজ নির্মাণ করেছেন। পাশে তৈরী করা হয়েছে মৎস্য ঘের। ওই কটেজে চলছে বনভূমি বেচা বিক্রির হাট। এখানে প্রভাবশালী ব্যক্তিদের বনভূমি বেচা বিক্রিতে বাঁধা দেয়ায় তাদের ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসীরা গত ৩ মার্চ মোরশেদ আলী নামের এক কলেজ ছাত্রকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যাও করেছে। এ অভিযোগ নিহতের মা মুজিবুন্নেছা বেগম ঝিনু’র। বরইতলী এলাকার বেশিরভাগ সামাজ বাগানও ক্ষমতাসীন দলের নাম ভাঙ্গিয়ে এক প্রভাবশালী ব্যক্তি নিজের লোক দিয়ে দখল করে রেখেছে। এসব কর্মকান্ড হচ্ছে পুলিশ ও বন কর্মকর্তা-কর্মচারীদের একেবারে নাকের ডগায়। এ ব্যাপারে চুনতি রেঞ্জার মিজানুর রহমান বন ভূমি বেদখল হয়ে যাওয়ার কথা স্বীকার করে জানান; অতি সত্তর সেখানে অভিযান পরিচালনা করা হবে।
অপর দিকে কক্সবাজার উত্তর বনবিভাগের ফাঁসিয়াখালী রেঞ্জে ৪টি বনবিট রয়েছে। ওই ৪টি বনবিটে সরকারী রিজার্ভের বনাঞ্চল এখন তেমন আর নেই। কিছু কিছু সামাজিক বনায়ন রয়েছে। তাও কেটে নিয়ে যাচ্ছে বনদস্যূরা। এলাকার কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি বনবিভাগের কিছু দূর্নীতি পরায়ন কর্মকর্তা-কর্মচারীর সাথে যোগসাজস করে বনভূমি টাকার বিনিময়ে বেচাবিক্রি করছেন। এলাকার ভূমিহীন লোকজন তাদের কাছ থেকে বন ভূমি কিনে নিয়ে বনঞ্চলের যত্রতত্র বসতি স্থাপন করে নিচ্ছে। এমনকি কক্সবাজার-চট্রগ্রাম মহাসড়কের পাশের বনভূমিও বাদ যাচ্ছে না। ফাঁসিয়াখালী রেঞ্জ অফিসের অতি নিকটে মালুমঘাট ষ্টেশনেও অবৈধভাবে বনভূমি দখল করে নিয়ে দোকাপাট তৈরী ও মার্কেট তৈরী করা হয়েছে। মালুমঘাট বাজারের উত্তর পাশে মহাসড়কের পাশে বনাঞ্চলে দেখা যায় নতুন নতুন ঘর উঠছে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এখানে বসতি স্থাপনের ক্ষেত্রে সরকারীদলের নামও ভাঙ্গানো হচ্ছে। এভাবে ফাঁসিয়াখালী রেঞ্জের বেশীরভাগ বনভূমি এখন বেদখল হয়ে গেছে। দখলকারীরা জানায়; এখানে বন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা তাদের কাছ থেকে মাসিক ভিত্তিতে টাকা আদায় করে থাকেন। যারা ঠিক মতো টাকা দেয় না, মাঝে মধ্যে অভিযান চালিয়ে শুধু তাদের ঘর গুলো উচ্ছেদ করা হয়ে থাকে। দখল বেদখলের ব্যাপারে ফাঁসিয়াখালী রেঞ্জের রেঞ্জ কর্মকর্তা জসিম উদ্দিন জানান; এখানে জবরদখলকারীরা বেপরোয়া হয়ে গেছে। ভেঙ্গে দিলেও দখলকারী আবারও ঘর তৈরী করে নেয়।
কক্সবাজার-চট্রগ্রাম মহাসড়কের পাশে রয়েছে খুটাখালী ন্যাশনাল পার্ক। এ পার্কে রয়েছে বিশাল আকৃতির শত বছরের কয়েক হাজার গর্জন গাছ। কিন্তু দৃষ্টি নন্দন এ গর্জন বাগানের ভেতরেও গড়ে তোলা হয়েছে বড় বড় ইমারত। মহাসড়কের পশ্চিম পাশে গর্জন বাগানে এখনো নতুন করে পাহাড় কেটে সমতল করা হচ্ছে। এখানে বসবাসকারীদের বেশীরভাগ পরিবারই স্বচ্ছল। শুধু এখানকার বনভূমি মূলবান হওয়ায় ভূমি দস্যুরা দখল করে নিয়েছে।

 

পাঠকের মতামত: