ঢাকা,শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪

চকরিয়ার চিংড়িজোনে তাণ্ডব ১৭টি ঘের দখল, শতাধিক রাউন্ড ফাঁকা গুলি

gerer picছোটন কান্তি নাথ, স্টাফ রিপোর্টার, চকরিয়া :
চকরিয়ার চিংড়িজোনে এবার তাণ্ডব ও লুটপাট শুরু করেছে আলোচিত জিয়াবুল বাহিনী। এই বাহিনীর সদস্যরা এবার জবরল-দখল করে নিয়েছে আওয়ামীলীগ ও যুবলীগ নেতাসহ ১৭ জনের মালিকানাধীন ১০ একর বিশিষ্ট ১৭টি চিংড়ি ঘের। মাছ ধরার জোঁ শুরুর দিনেই সশস্ত্র সন্ত্রাসী বাহিনীটি এসব চিংড়িঘের দখলে নিয়ে অন্তত অর্ধ শতাধিক রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছুঁড়ে এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে। এ সময় এলাকায় ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে এসব ঘেরে দায়িত্বরত কর্মচারীরা প্রাণ বাঁচাতে ঘের থেকে পালিয়ে যায়। এই সুযোগে একে একে নিয়ন্ত্রণে নেয় এসব চিংড়ি ঘের। বর্তমানে এসব ঘেরের দখলদারিত্ব বজায় রাখতে সশস্ত্র পাহারা বসানো হয়েছে বলে লিজপ্রাপ্ত ভুক্তভোগী ঘের মালিকেরা অভিযোগ করেছেন। গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে উপজেলার চিরিঙ্গা ইউনিয়নের চরণদ্বীপ মৌজার চিংড়ি ঘেরে এ ঘটনা ঘটে।
লিজপ্রাপ্ত যাদের চিংড়িঘের দখলে নেওয়া হয়েছে তারা হলেন উপজেলা কৃষকলীগের সভাপতি ও চিরিঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. জসীম উদ্দিন, কক্সবাজার জেলা যুবলীগ নেতা মো. আমিনুল করিম, চকরিয়া উপজেলা যুবলীগের যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক মো. মামুনুল করিম, মাষ্টার নুরুল ইসলাম, মো. সোহেল, মোহাম্মদ শোয়াইব, মুবিনুল করিম, নুরুল কবির, জিয়াবুল হক, মিজানুর রহমান, আজিজুল হক, অ্যাডভোকেট রাজীব, ছৈয়দ আলম, নেজামুল করিম, এ্যামি, জমির উদ্দিন, একরামুল হক।
ভুক্তভোগী ঘের মালিকেরা অভিযোগ করেছেন, প্রভাবশালী আওয়ামীলীগের এক নেতার আশ্রয়-প্রশ্রয়ে থাকা জিয়াবুল হক ও সাবেক জনপ্রতিনিধি ছালাহউদ্দিনের পরিকল্পনা ও নির্দেশে গতকাল শুক্রবার রাত আটটার দিকে দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী ও বহু মামলার পলাতক আসামী মো. করিম ওরফে রাইফেল পটু, আবু তাহের ওরফে তাহের ডাকাতের নেতৃত্বে প্রায় ৭০ জন সশস্ত্র সন্ত্রাসী এসব চিংড়িঘেরে একযোগে হানা দেয় জবর-দখলে নেওয়ার উদ্দেশ্যে। এ সময় এসব ঘেরে দায়িত্বরত কর্মচারীরা কিছু বুঝে উঠার আগেই উপর্যপুরি ফাঁকা গুলিবর্ষনের মধ্য দিয়ে এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে। এ সময় ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে ঘেরে নিয়োজিত কর্মচারীরা ঘের ছেড়ে প্রাণ বাঁচাতে এদিক-ওদিক পালিয়ে যায়।
উপর্যপুরি গুলিবর্ষন ও একযোগে হানা দেওয়ার সময় পালিয়ে বাঁচা ঘেরের বেশ কয়েকজন কর্মচারী বলেন, ‘আজ শুক্রবার (গতকাল) থেকে চলতি মৌসুমের মাত্র চিংড়ি ধরার জোঁ শুরু হয়েছে। প্রথমদিনেই আমরা ঘের থেকে মাছ ধরা নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম। কিন্তু রাত আটটার দিকে হঠাৎ করে দেখি প্রায় শতাধিক সশস্ত্র সন্ত্রাসী আমাদের ঘেরে হানা দিচ্ছে। এ সময় অন্তত অর্ধ শতাধিক রাউন্ড উপর্যপুরি ফাঁকা গুলির শব্দে পুরো এলাকা প্রকম্পিত হয়ে উঠে। অবস্থা বেগতিক দেখে আমরা ঘেরে থেকে পালিয়ে যাই। এর পর তারা একে একে এসব ঘের দখলে নিয়ে নেওয়ার পর সেখানে সশস্ত্র পাহারা বসায়।’
ভুক্তভোগী ঘের মালিক উপজেলা কৃষকলীগের সভাপতি ও চিরিঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. জসীম উদ্দিন বলেন, ‘সরকারের কাছ থেকে লিজপ্রাপ্ত হয়ে এসব চিংড়িঘের পরিচালনা করে আসছিলাম। কিন্তু বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে তৎকালীন এপিএস সালাহউদ্দিনের নির্দেশে আমাদের এসব ঘের দখল করে ৫ বছর ধরে লুটপাট চালায়। পরবর্তীতে আমাদের ঘের আমরা আবারো ফিরে পেয়ে এতদিন ধরে চিংড়ি উৎপাদন করে আসছিলাম। কিন্তু প্রভাবশালী এক ব্যক্তির ছত্রছায়ায় থাকা সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা আমাদের এসব ঘের আজ (গতকাল) রাতে আবারো দখল করে নিয়েছে। বিষয়টি আমরা ইতিমধ্যে কক্সবাজার জেলা পুলিশ সুপার, সহকারী পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল), থানার ওসিসহ প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের অবহিত করেছি।
এ ব্যাপারে চকরিয়া থানার ওসি মো. জহিরুল ইসলাম খান দৈনিক চকরিয়া নিউজকে বলেন, ‘আসলে চিংড়িজোনটি একেবারেই দুর্গম এলাকা। যেখানে তাৎক্ষণিক যাওয়ার ইচ্ছেপোষণ করলেও পুলিশের পক্ষে সাধ্য হয়ে উঠেনা। এর পরও ঘের মালিকদের কাছ থেকে লিখিত অভিযোগ করা হলে ঘের দখলের ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে অবশ্যই আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

পাঠকের মতামত: