ঢাকা,রোববার, ১৭ নভেম্বর ২০২৪

চকরিয়া উপজেলা নির্বাচন: আওয়ামীলীগ প্রার্থী গিয়াস উদ্দিনের বিরুদ্ধে হলফনামায় সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক, কক্সবাজার ::   কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী গিয়াস উদ্দিন চৌধুরীর বিরুদ্ধে স্থাবর সম্পদের তথ্য গোপন করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। নির্বাচন কমিশনে দাখিলকৃত মনোনয়ন পত্রের হলফনামায় তিনি রহস্যজনকভাবে সম্পদ বিবরণীতে তার এবং স্ত্রীসহ নির্ভরশীলদের নামের স্থাবর সম্পদের তথ্য গোপন করেন। খোদ স্ত্রী দিলতাজ বেগমের নামে ঘুনিয়া মৌজা ও পুকপুকুরিয়া পানখালী মৌজায় থাকা বিপুল স্থাবর সম্পদের তথ্য মিলেছে। যার অকাট্য ডকুমেন্ট হিসেবে দুটি পৃথক খতিয়ান পাওয়া গেছে। অথচ তাঁর দেওয়া হলফনামায় সম্পদ বিবরণীতে নিজের নামে কিছু স্থাবর সম্পদ দেখালেও নির্ভরশীলদের মধ্যে স্ত্রী বা পরিবার সদস্যদের কারো নামে স্থাবর সম্পদ নেই বলে দাবি করেছেন। গিয়াস চকরিয়া উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক বর্তমানে।

উপজেলা ভূমি অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের ঘুনিয়া মৌজায় সৃজিত বিএস ৪৬৪ নম্বর খতিয়ানে বিএস ১৫৪, ৯৫০ ও ৯৫৭ দাগের আন্দরে ২ একর ৪০ শতাংশ নাল জমি রয়েছে। অত্র খতিয়ানে জায়গার মালিকের ঘরে নাম উল্লেখ রয়েছে ঘুনিয়া এলাকার মৃত মতিয়র রহমানের পুত্র আলী আকবর ও পুকপুকুরিয়া এলাকার গিয়াস উদ্দিন চৌধুরীর স্ত্রী দিলতাজ বেগমের। তন্মধ্যে দিলতাজ বেগম ১ একর ২০ শতাংশ জমির মালিক।

একই ইউনিয়নের পুকপুকুরিয়া পানখালী মৌজায় সৃজিত বিএস ৫১৮ নম্বর খতিয়ানে বিএস ৯১০, ৩১৬ ও ৩১০ নম্বর দাগের আন্দরে ৩৯ দশমিক ২৫ শতাংশ নাল জমি রয়েছে। এই জায়গার মধ্যে গিয়াস উদ্দিন চৌধুরীর নামে রয়েছে ১২ শতাংশ ও বাকী ২৭ দশমিক ২৫ শতাংশ জায়গা তাঁর স্ত্রী দিলতাজ বেগমের নামে উল্লেখ রয়েছে।

গিয়াস উদ্দিন ও নির্ভরশীলদের মধ্যে স্ত্রী এবং সন্তানদের নামে আরো বিপুল পরিমাণ স্থাবর সম্পত্তি রয়েছে বলে এলাকায় প্রচার রয়েছে। তন্মধ্যে উপজেলার সুরাজপুর-মানিকপুর ইউনিয়নের সুরাজপুর মৌজায় বিপুল পরিমাণ স্থাবর সম্পত্তি রয়েছে। আবার ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের রাজারবিল মৌজা, উচিতার বিল মৌজা ও চকরিয়া পৌর এলাকায়ও বিপুল স্থাবর সম্পদের মালিক তারা। ফাঁসিয়াখালী ভে-িবাজার এলাকায় নিজের বাড়ির সামনে খোদ ছেলের নামে আইয়ুব চৌধুরী ফিলিং স্টেশন থাকলেও এসব স্থাবর সম্পদের তথ্য রহস্যজনক কারণে গোপন করেছেন আওয়ামীলীগ প্রার্থী গিয়াস উদ্দিন চৌধুরী।

ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের দিগরপানখালী ফকিরাবাজার এলাকার স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন, ফকিরাবাজারে একটি কবরস্থান রয়েছে। শতবছর আগে থেকে স্থানীয়রা এটিকে কবরস্থান হিসেবে জেনে আসছেন এবং কেউ মারা গেলে সেখানে দাফন করে আসছেন। কিন্তু গিয়াস উদ্দিন ওই কবরস্থানে প্রায় ২০ শতাংশ জায়গা জবর-দখলে নিয়ে সেখানে স্ত্রীর নামে স্থায়ী মার্কেট নির্মাণের চেষ্টা করলে প্রতিহত করেন এবং আদালতে মামলা করেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে আদালত কর্তৃক নিয়োজিত উকিল কমিশন এসে সরজমিন পরিদর্শন করেন এবং তা কবরস্থান হিসেবে সার্টিফাই করেন। এর পর আদালত সেখানে স্থায়ী স্থাপনা নির্মাণে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন। কিন্তু সুচতুর গিয়াস উদ্দিন সেখানে বাজার বসিয়ে দিয়ে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছেন। এই ঘটনার পর আদালত গিয়াস উদ্দিনের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার মামলা রুজু করেন। বর্তমানে মামলাটি বিচারিক পর্যায়ে রয়েছে। স্থানীয় লোকজন ওই জায়গা যে কবরস্থান তা জানতে এবং পবিত্রতা রক্ষা করতে দেয়ালিকাও স্থাপন করেছেন।

এদিকে নির্বাচন কমিশনে দাখিলকৃত হলফনামায় মামলার বিবরণীতে তার নামে দুটি মামলা চলমান রয়েছে বলে উল্লেখ করেছেন। মামলা দুটিই বিচারাধীন বলে দাবি করেন।

অভিযোগ রয়েছে, বনাঞ্চল উজাড় এবং ইট পোড়ানো নিয়ন্ত্রণ আইনের মামলায় নিন্ম আদালত তাকে ৬ মাসের কারাদ- ও ১০ হাজার টাকা জরিমানা করলেও হলফনামায় তা গোপন করেছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উপজেলা ও পৌরসভা আওয়ামীলীগের সিনিয়র একাধিক নেতা বলেন, ‘কক্সবাজার উত্তর বনবিভাগের ফাঁসিয়াখালী রেঞ্জের উচিতারবিল মৌজাসহ কয়েকটি মৌজার সংরক্ষিত বনাঞ্চল ধংসের মহানায়ক গিয়াস উদ্দিন। এসব মৌজার সংরক্ষিত বনের শতবর্ষী মাদার ট্রি, সেগুনসহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছপালা নিধনের পর কয়েকশত পাহাড় সাবাড় করে মাটি বিক্রিও করেছেন। তিনি দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতার প্রভাব বিস্তার করে গড়েছেন সম্পদের পাহাড়। সরকারের গোয়েন্দা সংস্থা, দুর্নীতি দমন কমিশন, কর কমিশনসহ সরকারি সংস্থাগুলো নিরপেক্ষভাবে এসব বিষয় অনুসন্ধান করলে আসল তথ্য বেরিয়ে আসবে।’

তবে এসব বিষয়ে বক্তব্য নেওয়ার জন্য গিয়াস উদ্দিন চৌধুরীর ব্যবহৃত মুঠোফোনে অসংখ্যবার যোগাযোগ করা হয়। কিন্তু তিনি ফোন রিসিভ না করায় বক্তব্য পাওয়া যায়নি। অবশ্য তিনি বর্তমানে নির্বাচনী প্রচারণায় মাঠে রয়েছেন এ কারণে ফোন ধরছেন না দাবি করেন আওয়ামীলীগের স্থানীয় এক নেতা।

চকরিয়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে গিয়াস উদ্দিনের প্রধান প্রতিদ্বন্ধী আওয়ামীলীগ নেতা ফজলুল করিম সাঈদী বলেন, ‘গিয়াস উদ্দিন নির্বাচন কমিশনে দাখিলকৃত হলফনামায় বিভিন্ন বিষয়ে তথ্য গোপন করেছেন। তন্মধ্যে নিজের নামে এবং নির্ভরশীলদের নামে থাকা বিপুল স্থাবর সম্পদের তথ্য গোপন করেন। এমনকি তার বিরুদ্ধে সংখ্যালঘু নির্যাতনের অভিযোগে এবং কবরস্থান দখলের অভিযোগে মামলা থাকলেও তা হলফনামায় দেখাননি। বিষয়গুলো জানার পর আমি নির্বাচন কমিশনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছি।’

এ ব্যাপারে সহকারি রিটার্নিং কর্মকর্তা ও চকরিয়া উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. সাখাওয়াত হোসেনের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি জানান, বিষয়টি মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাইয়ের সময় উত্থাপন করা উচিত ছিল।

পাঠকের মতামত: