অনলাইন ডেস্ক :::
সাবেক প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক দেশের গণতন্ত্রের জন্য সর্বোচ্চ খারাপ নজির স্থাপন করেছেন বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রিজভী আহমেদ। তিনি বলেছেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে নির্বাচনহীন এক ব্যক্তির দুঃশাসন চালু রাখতে সহায়তা করে দেশের স্থিতিশীলতা ধ্বংস করেছেন সাবেক এ প্রধান বিচারপতি। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা দেশের মানুষের আশা-ভরসার জায়গা ছিল। এ ব্যবস্থা বাতিল করে বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক দেশের গণতন্ত্রের জন্য সর্বোচ্চ খারাপ নজির স্থাপন করেছেন। তিনি আইনের শাসন, গণতন্ত্র, মানুষের ভোটের অধিকার ও জনগণের শত্রু এবং বর্তমান এক ব্যক্তির ভয়াবহ দুঃশাসনের ঘৃণ্য সেবক। যুক্তি, বিবেকবর্জিত ও চাকরি লোভী হিসেবে সাবেক এ বিচারপতির ঠাঁই হবে ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে। গতকাল দুপুরে নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে তিনি এসব কথা বলেন। রিজভী বলেন, আবার ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিলের রায় আদালতে প্রকাশ্যে পড়ে শোনানোর সময় তিনি বলেছিলেন, আরও দুই মেয়াদের জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা রাখা যেতে পারে। অথচ এর ১৬ মাস পর যখন তিনি পূর্ণাঙ্গ রায় লিখিতভাবে প্রকাশ করলেন তাতে এ কথাটা বাদ দিয়ে জাতির সঙ্গে প্রতারণা করেছিলেন। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে খায়রুল হক দেশকে চূড়ান্তভাবে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিয়েছেন। গণতন্ত্রকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গেছেন। বর্তমান রাজনৈতিক অচলাবস্থা এবং সংঘাতময় পরিস্থিতির জন্য বিচারপতি এবিএম খায়রুল হকই দায়ী। রিজভী বলেন, বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে তিনি যে তা করেছিলেন তার বর্তমান বক্তব্যে সেটি আবারও জনগণের কাছে প্রমাণিত হলো। ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায়ের প্রতিক্রিয়ায় তিনি যে বক্তব্য দিয়েছেন সেটিও প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশেই করেছেন। আইন কমিশনের চেয়ারম্যান হয়ে এর পুরস্কারও পেয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর তহবিল থেকে পুরস্কার হিসেবে ১০ লাখ টাকাও নিয়েছেন চিকিৎসার কথা বলে, সেটিও গণমাধ্যমের খবরে বের হয়েছে। বিএনপির এ মুখপাত্র বলেন, প্রধান বিচারপতি থাকাকালে একটি রায়ে তিনি বলেছিলেনÑ ‘সর্বোচ্চ আদালতের বিচারকের অবসরের পরে লাভজনক কোন পদে চাকরি করতে পারবেন না।’ কত বড় ভ- হলে নিজের রায়ের কথা নিজেই ভঙ্গ করতে পারেন। একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতির সরকারের এ ধরনের চাকরি গ্রহণ করা নজীরবিহীন এবং আত্মবিক্রয়ের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। ভবিষ্যতে হয়তো আরও বড় কোন পুরস্কারের আশায় ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় নিয়ে তিনি মনগড়া কথা বলেছেন। তার ওই বক্তব্য নিয়ে দেশজুড়ে নিন্দার ঝড় বইছে। রিজভী বলেন, বিএনপির পক্ষ থেকে মহাসচিব আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন। আইন কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকে তিনি সর্বোচ্চ আদালতের রায় নিয়ে যে তিক্ত ও প্রতিহিংসামূলক সমালোচনা করেছেন সেটা তার চাকরির আচরণবিধির পরিপন্থী। রিজভী বলেন, সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি সম্পর্কে খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলামের বক্তব্য চরম ঔদ্বত্যপূর্ণ ও স্বাধীন বিচার বিভাগের প্রতি হুমকি। যিনি পঁচা গমের বেসাতি করেন তিনি প্রধান বিচারপতিকে চলে যাওয়ার উপদেশ দিচ্ছেন। খাদ্যমন্ত্রী কামরুল সাহেব আপনি কোন নৈতিকতা নিয়ে কথা বলছেন। আপনি কি আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে কথা বলছেন? নিজের দিকে তাকালে লজ্জা করে না আপনার। আপনি তো সর্বোচ্চ আদালতে দোষী ও দন্ডিত অপরাধী। আপনি সংবিধান রক্ষার শপথ ভঙ্গ করে এখনও মন্ত্রী হিসেবে বহাল রয়েছেন। বিশ্বে এমন নজির কোথাও আছে সর্বোচ্চ আদালতের দন্ডিত ব্যক্তি মন্ত্রী হিসেবে বহাল থাকতে পারে। রিজভী বলেন, আপনি কোন উকিলের কথা বলছেন? কারা? ব্যারিস্টার মাহবুবউদ্দিন খোকন, অ্যাডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়া- তারা নির্বাচিত হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে আইনজীবীদের প্রতিনিধিত্ব করছেন সর্বোচ্চ আদালত ও জেলা আদালতে। সারাদেশে দলের সদস্য সংগ্রহ অভিযান কর্মসূচিতে পুলিশ ও ক্ষমতাসীন দলের সমর্থকরা বাঁধা দিচ্ছে অভিযোগ করে রিজভী বলেন, বৃহস্পতিবারও যশোর, ময়মনসিংহ, ঝিনাইদহসহ বিভিন্ন জেলায় তিন শতাধিক গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অবিলম্বে গণগ্রেপ্তার বন্ধের দাবি জানাচ্ছি। সংবাদ ব্রিফিংয়ে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবুল খায়ের ভুঁইয়া, যুগ্ম মহাসচিব মাহবুবউদ্দিন খোকন, হারুনুর রশীদ, আইন বিষয়ক সম্পাদক সানাউল্লাহ মিয়া উপস্থিত ছিলেন।
পাঠকের মতামত: