শাহীন মাহমুদ রাসেল :: প্রতি বছর কোরবানি ঈদকে সামনে রেখে বাড়ে মসলার দাম। এবারও এর ব্যতিক্রম হয়নি। চাহিদার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে প্রতিটি মসলার দাম। খুচরা ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, পাইকারি ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে এই দাম বাড়িয়ে থাকেন। সারা বছরের লাভ কোরবানি ঈদে করে উঠিয়ে নেয়ার চেষ্টা করেন ব্যবসায়ীরা।
গত বৃহস্পতিবার কক্সবাজারের বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, গত দুই সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতিকেজি লবঙ্গের দাম বেড়েছে ২৫০ টাকা, জিরা ৭০, এলাচ ২৫০, গোলমরিচ ২৫০, শুকনো মরিচ ২০ ও ধনে ২০ টাকা করে বেড়েছে। এ ছাড়া আদার দামও হু হু করে বাড়ছে। প্রতিকেজি আদায় বেড়েছে ২০-৩০ টাকা। রসুনেরও একই অবস্থা। প্রতিকেজিতে বেড়েছে ১০-১৫ টাকা। পেঁয়াজে বেড়েছে ১৫-২০ টাকা।
অনুসন্ধানে জানা যায়, কোরবানির ঈদে পেঁয়াজ, রসুন, আদা, দারুচিনি, এলাচ, জিরা, লবঙ্গ, তেজপাতা ও গোলমরিচের চাহিদা বেশি থাকে। ফলে এ সময়টাকে কাজে লাগিয়ে কিছু অসাধু মসলা আমদানিকারক ও ব্যবসায়ী দাম বাড়িয়ে বাজার অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করে।
খরুলিয়া বাজারের পাইকারি বিক্রেতা মাহ-মদুল্লাহ বলেন, তেমন একটা দাম বাড়েনি। তবে এখন আর নতুন করে দাম বাড়ার সুযোগ নেই। দাম যা বাড়ার বেড়ে গেছে। এখন ঈদের যে কদিন আছে, এর মধ্যে দাম না কমলেও বাড়ার সম্ভাবনা দেখছি না।
রামুর ফঁতেখারকুল থাকেন ইমাম শরিফ। তিনি জানান, কোরবানির গরু কেনা হয়েছে এক মাস আগে। এখন মসলাটা কিনতে পারলেই জামেলা শেষ হয়। তাই তিনি মসলার বাজার ঘুরে ঘুরে প্রয়োজনীয় মসলা কিনে নিচ্ছেন। মসলা তবে তার কথায় উঠে এসেছে দরদাম নিয়ে কিছু অভিযোগও। ইমাম বলেন, যেকোনো উৎসব উপলক্ষে বাজারে পণ্যের দাম বাড়বে- আমাদের দেশে এটা একটা স্থায়ী প্রবণতা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে উৎসবভেদে কিছু নির্দিষ্ট পণ্যের দাম আর সবকিছুকে ছাড়িয়ে যায়। ঈদুল আজাহাকে কেন্দ্র করে মসলার দাম যেভাবে বেড়েছে সরকার এদিকটায় খেয়াল রাখলে সবার জন্য ভালো হয়।
ট্রেডিং করপোরেশনের (টিসিবি) হিসাব অনুযায়ী, দেশের মসলার মজুদের পরিমাণ চাহিদার তুলনায় অনেক বেশি। অন্যদিকে বৈধ পথের তুলনায় অবৈধ পথেই বেশি মসলা আমদানি হয়। অথচ চাহিদা বাড়ার কারণেই ভোক্তাদের অনেকটা জিম্মি করেই বেশি দামে মসলা বিক্রি করছেন পাইকারি ব্যবসায়ীরা।
তবে খুচরা বাজারে দাম বাড়ার ব্যাপারে দ্বিমত রয়েছে পাইকারি ব্যবসায়ীদের। তাদের দাবি, নতুন করে কোনো ধরনের মসলার দাম বাড়ানো হয়নি।
কক্সবাজার ব্যবসায়ী সমিতি ও গরম মসলা ব্যবসায়ী সমিতির নেতারা আমদানিতে ও পাইকারি বাজারে দাম কিছুটা বাড়ার কথা স্বীকার করেন। তবে তারা জানান, চাহিদার দিকে লক্ষ রেখে যথেষ্ট আমদানি হয়েছে। ঘাটতি পড়ার কোনো আশঙ্কা নেই। ঈদকে কেন্দ্র করে মসলার বাজারে কোনো সিন্ডিকেটের কথা তারা অস্বীকার করেন।
তবে মধ্যবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্ত পর্যায়ের ক্রেতাদের অভিযোগ- যাদের পকেটে অগণিত টাকা আছে দাম বাড়লেও তাদের সমস্যা হয় না। কিন্তু গোণা টাকা নিয়ে যারা বাজারে আসেন বাড়তি দামে পণ্য কিনতে তাদেরকে পড়তে হয় হিমশিম অবস্থায়। তাতে করে নির্দিষ্ট টাকার ক্রেতাদের পক্ষে ঈদের সব বাজার ঠিকঠাকভাবে করা কঠিন হয়ে পড়ে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে সুনজরদারি রাখলে হয়তো তাদের এতটা হাপিত্যেশ পোহাতে হতো না বলেও মনে করেন সাধারণ ক্রেতাগণ।
পাঠকের মতামত: