ঢাকা,বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪

কুতুবদিয়ায় কালভার্ট বন্ধ করে মাছ ধরছে প্রভাবশালীরা: লবণাক্ত পানিতে নষ্ট হচ্ছে ধানের ক্ষেত

কুতুবদিয়া প্রতিনিধি  ::  কক্সবাজারের কুতুবদিয়ার প্রতিটি ইউনিয়নে অবস্থিত কালভার্টগুলোতে জাল বসিয়ে মাছ ধরার জন্য স্বাভাবিক জোয়ারের সময় লোকালয়ে প্রবেশ করা সাগরের লোনা পানি আটকে রাখায় পানিতে ডুবে নষ্ট হচ্ছে দ্বীপের গরিব কৃষকদের শতশত একর ফসলী জমির ধান ক্ষেত।

বিশেষ করে উত্তর ধুরুং,দক্ষিণ ধুরুং ও লেমশীখালী ইউনিয়নের কালভার্টগুলোর সবকটিতেই বিভিন্নভাবে বাঁধ দিয়ে মাছ ধরার কারণে ওই সব ইউনিয়নের কৃষকদের ফসলী জমির ধানের চারাগুলো নষ্ট হচ্ছে। এ অভিযোগ দ্বীপের বিভিন্ন ইউনিয়নের গরিব কৃষকদের।

কৃষকরা জানান, চলতি বর্ষা মৌসুমে সাগরের স্বাভাবিক জোয়ারের পানিতে বারবার প্লাবিত হয়ে কুতুবদিয়া দ্বীপের আবাদি জমিগুলোতে লবণাক্ততা বেড়ে যাওয়ায় চাষ করতে পারেনি কয়েক শতাধিক প্রান্তিক কৃষক। অনাবাদী পড়ে আছে অনেক জমি। তার ওপর স্থানীয় কালভার্টগুলো প্রভাবশালীরা দখল করে লোনা পানি আটকে রেখে মাছ মাছ ধরতে ব্যাস্ত থাকায় লোনা পানির নিচে ডুবে আছে চাষ করা ধানী জমিগুলোও। যার ফলে চোখে অন্ধকার দেখছেন এসব এলাকার চাষিরা।

স্থানীয়দের অভিযোগ কালভার্টগুলো, স্থানীয় ইউপির চেয়ারম্যান,মেম্বরাগণ টাকার বিনিময়ে ইজারা দিয়ে থাকেন। যার কারনে কালভার্ট দখলকারী প্রভাবশালীরা কোন কিছুর তোয়াক্কা করে না। পানি আটকে রেখে বছরের পর বছর মাছ ধরে যাচ্ছে এবং অন্যদিকে গরিব কৃষকদের ক্ষতি করছে।

বৃহষ্পতিবার (৫ সেপ্টেম্বর) উত্তর ধুরুং,দক্ষিণ ধুরুং ও লেমশীখালী ইউনিয়নের যথাক্রমে বকশালী সিকদার পাড়া কালভার্ট, সতরুদ্দিন রোড সংলগ্ন কালভার্ট,ধুরুং কাঁচা কালভার্ট, মিরাখালী সড়ক কালভার্ট, কাজীর পাড়া কালভার্ট,তেলিয়াকাটা কালভার্টগুলো পরিদর্শন করে দেখা যায়, বাঁশ,বাশের বেড়া, মাটির বস্তা ও পলিথিন দিয়ে পানি যাওয়ার প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে মাছ ধরছে স্থানীয় প্রভাবশালীরা। কথা হয় তাদের মধ্যে লেমশীখালী কাজীর পাড়া কালভার্টে বাঁধ দিয়ে মাছ ধরা মোজাফ্ফর এর ছোট ভাইয়ের সাথে। তিনি জানান, কালভার্টটিতে জাল বসাতে স্থানীয় লেমশীখালী ইউপির চেয়ারম্যানকে বারো হাজার টাকা দিতে হয়েছে তার ভাইকে।

স্থানীয়রা জানান কালভার্টটি নিয়ে এলাকায় অনেক বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়েছিল। উত্তর ধুরুং ইউনিয়নের ভোক্তভুগি কৃষক জাহাঙ্গীর হোসেন, মকবুল আহমদ,ইউনুছ,শাহীন,আবু ও শফিসহ আরো অনেকেই জানান, ওই এলাকার প্রতিটি কালভার্ট ইজারা দিয়ে টাকা কামিয়েছেন ইউপির চেয়ারম্যান-মেম্বাররা। তাই পানি লোনা পানি বেঁেধ রেখে মাছ ধরছে ইজারাদাররা। আর কৃষকদের ধানী জমিগুলো লোনা পানিতে ডুবে থাকায় তাদের ধানের চারাগুলো নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। প্রশাসন দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে তাদের অনেক ক্ষতি হবে বলে তারা জানান।

এব্যাপারে উত্তর ধুরুং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আ.স.ম শাহরিয়ার চৌধুরীর সাথে কথা হলে তিনি বলেন, ‘আমার ইউনিয়নের প্রতিটি কালভার্ট থেকে পানি নিষ্কাশনের প্রতিবন্ধকতা দূর করেছি। তারপরেও আমার অগোচরে থাকা কালভার্টগুলোর ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে দ্রুত ব্যবস্থা নিব।’

এদিকে অভিযোগের ব্যাপারে লেমশীখালী ইউপির চেয়ারম্যান আকতার হোছাইন জানান, তিনি একটি কালভার্ট ইজারা দিয়েছেন। কিন্তু অন্যগুলো প্রভাবশালীরা গায়ের জোরে দখল করে মাছ ধরছেন। বিষয়টি তিনি দেখবেন বলে জানান।

এব্যপারে কুতুবদিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জিয়াউল হক মীর বলেন, আমি কুতুবদিয়া যোগদান করার পর থেকে বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালিয়ে অনেকগুলো কালভার্ট দখলমুক্ত করে লোনা পানি নিষ্কাশনের প্রতিবন্ধকতা দূর করেছি।

প্রভাবশালীদের দখলকৃত বাকি কালভার্টগুলোমুক্ত করতে দ্রুত অভিযান চালিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবেন বলে জানান তিনি।

পাঠকের মতামত: