চকরিয়া নিউজ ::
পর্যটন জেলা সৈকত নগরী কক্সবাজারে চলছে চিকিৎসা সেবার নামে চরম নৈরাজ্য। চিকিৎসকদের দায়িত্ব-কর্তব্যে অবহেলা ও ভুল চিকিৎসার কারণে প্রায়ই উপজেলার বিভিন্ন হাসপাতালে রোগী মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে বলে অভিযোগ আসছে। এসব ঘটনায় কখনো রোগীর ক্ষুব্ধ স্বজনরা কাউকে বুঝাতে বা কোন সেবা না পেলেই ক্ষুব্ধ হয়ে হতাশার আলো নিয়ে বাড়ী ফিরে যাই। ডাক্টারদের অপারেশন ও প্রাইভেট বানিজ্যে ব্যস্ত হয়ে পড়ায় সাধারন রোগীরা সেবা থেকে বাদ হয়ে যাই। কোন কিছুতেই থামানো যাচ্ছেনা প্রাইভেট বানিজ্য। অল্প কিছুতেই চিকিৎসা সেবার মতো মানবিক বিষয়ের তোয়াক্কা না করে ডাক্তাররা নিজের ধান্দায় ব্যস্ত হয়ে বসে থাকেন দিনের পর দিন। পরিস্থিতি এমন যে, কক্সবাজার জেলায় সরকারি হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসা সেবা নিতে আসা গরিব রোগীরা ডাক্তার-কর্মচারীদের হাতে জিম্মি হয়ে পড়েছেন। আর ওষুধ কালোবাজারে বিক্রি থেকে শুরু করে নানা অনিয়ম দুর্নীতি তো আছেই। হাসপাতাল ঘুরলেই রোগীদের অসংখ্য অভিযোগ শোনা যায়। টেকনাফ থেকে আসা রোগী মাইনুল ইসলাম জানান, হাসপাতালে ৫ দিন ধরে কাতরাচ্ছে তিনি তার কাছে ডাক্তার এসেছে মাত্র তিনবার। কেবল স্যালাইন আর ইনজেকশন দেয়া ছাড়া রোগীর আর কোনো চিকিৎসা হচ্ছে না। এসব অভিযোগ কেবল তিনি একা নয়। তার মতো অনেক স্বজনের অভিযোগ ডাক্তার ও নার্সদের বিরুদ্ধে। এসব স্বজনদের রোগিরা ভর্তি আছেন ফুয়াদ আল খতিব হাসপাতালে, ডিজিটাল, জেনারেল ও ডক্টর চেম্বারসহ ও শহরের আরো নামি-দামি হাসপাতালগুলোতে। রোগী এবং স্বজনদের অভিযোগের কারণে, অকারণে ডাক্তাররা রোগিদের হেয় প্রতিপন্ন ও মারধর করার অভিযোগ ও রয়েছে। বারংবার বললেও দায়িত্বে অবহেলা করছেন ডাক্তার এবং নার্সরা। হাসপাতালে রোগী দেখার চেয়ে ডাক্তাররা চেম্বারে রোগী দেখার প্রতিই বেশি মনোযোগী। কক্সবাজারে সরকারি হাসপাতালের নার্স এবং ডাক্তাররা রোগীদের প্রাইভেট হাসপাতালে ভর্তিতে প্রলুব্ধ করছে। সব মিলিয়ে ভেঙে পড়েছে কক্সবাজার সরকারী স্বাস্থ্য সেবার শৃঙ্খলা। শহরের টেকপাড়ার সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আজিজ জানান, তিনি হাসপাতালে ভর্তি থাকাকালে রাতদিন ওয়ার্ডে ডাক্তার তো দূরের কথা, কোনো নার্সও থাকছে না। তিনি আরো জানান, ওয়ার্ডে ডাক্তারের দেখা পাওয়া খুবই ভাগ্যের ব্যাপার। নার্সরা থাকলেও তাদের কাছ থেকে কাঙ্খিত সেবা পাওয়া যাচ্ছে না। রোগীর শরীরের স্যালাইন পুশ করতে নার্সদের ডাকলে তারা বলে রোগীকে মুখে তুলে খাওয়ান। কখনও কখনও বলেন, রোগীকে আমাদের কাছে নিয়ে আসেন। সে প্রতিবেদককে আরো বলেন, যে রোগী কোনো কথা বলতে পারে না। উঠে বসতে পারে না। এক কথায় প্রায় অচেতন। ওই রোগীকে কিভাবে মুখে তুলে খাওয়াব? কিভাবে নার্সের কাছে নিয়ে আসবো, না আনলে নার্সরা উত্তেজিত হয়ে পড়ে বলে জানান তিনি। বাধ্য হয়ে রোগীর গায়ে প্রায়ই নিজেদের ইনজেকশন পুশ করতে হচ্ছে। অনেক সময় রোগী ছটফট করতে থাকে। ওই সময় স্যালাইন ছিঁড়ে ফেলার উপক্রম হয়। এটা নার্সকে জানালেও ধমক খেতে হয়। হাসপাতালে গত ৫ দিনের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করতে গিয়ে তিনি আরো বলেন, ডাক্তার নার্সদের ওপর রোগী ও স্বজনরা চরম ক্ষুব্ধ। ওপর থেকে কেউ এসে যদি উপযুক্ত চিকিৎসার জন্যে চাপ দেয় তাহলে, সাময়িকভাবে ভালো চিকিৎসা দেয়া হয়। কিন্তু ওপর মহলের ওই ব্যক্তিটি চলে যাওয়ার পরই বন্ধ হয়ে যায় সংশ্লি¬ষ্ট রোগীর চিকিৎসা। তাছাড়া ডাক্তার এবং নার্সদের জাড়িতো শুনতেই হয়। কক্সবাজার সদর হাসপাতালের পুরুষ ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন জালাল (২৬)। নিজের ভিটে দখল করতে আসলে প্রতিপক্ষের হামলায় আহত হয়ে টেকনাফের নয়াবাজার থেকে ৮ দিন ধরে ভর্তি রয়েছেন। তিনি জানান, সে মাথা, মুখ এবং পায়ে প্রচন্ড আঘাত পেয়েছে। তার জ্ঞান নেই বললেই চলে। ভর্তির পর তিনদিনে একবারও ডাক্তার আসেনি। কেবল নার্সরা ইনজেকশন ও স্যালাইন পুশ করছে। টেকনাফ হাসপাতালে যে ব্যান্ডেজ করা হয়েছিল সেই ব্যান্ডেজ এখনও আছে। ব্যান্ডেজ খুলতে হবে কি-না জানতে চাইলে নার্সরা বলেন, ডাক্তার নেই। তাই এ বিষয়ে আমরা কোন পরামর্শ দিতে পারছি না। ডাক্তারের সহযোগী আসলে এ নিয়ে তার সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন। ডাক্তারের সহযোগী কখন আসবে তা-ও জানাতে পারছে না নার্সরা। ক্ষোভের সঙ্গে তিনি বলেন, আমি ও আমার মা বোন আরো একভাইকে হাসপাতালে ভর্তি করে দুর্ভোগের মধ্যে পড়ে গেছি। তার চেয়ে বাসায় রাখলেও দুর্ভোগ অনেকটা কম হতো। কারণ, এখানে চিকিৎসা হচ্ছে না বললেই চলে।
সাম্প্রতিক সময়ে সবচেয়ে বেশি অশান্ত পরিস্থিতি বিরাজ করে কক্সবাজারে। কক্সবাজার জেলায় সরকারি হাসপাতালগুলোর বেহাল পরিস্থিতি দেখে যারা বেসরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিকের দিকে পা বাড়ান তারা শিকার হন আরো বেশি হয়রানির। বেসরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিকগুলোতে উন্নত সেবার নাম দিয়ে চলছে রমরমা বাণিজ্য। কারণে-অকারণে পরীক্ষা, ক্লিনিকে বেশি দিন রোগী ধরে রাখা ইত্যাদি অভিযোগে অভিযুক্ত ক্লিনিকগুলো। সচেতন মহলরা মনে করেন, হাসপাতালগুলোকে সব কিছুর ঊর্ধ্বে রাখা দরকার। দুর্ভাগ্যজনকভাবে জেলা শহরে ডাক্তার, রোগী, কর্মকর্তা-কর্মচারী, প্রশাসন, মিডিয়াসহ সব জায়গা থেকেই হাসপাতালগুলো একধরনের নেতিবাচক আচরণের শিকার হচ্ছে। এর জন্যে অসচেতনতাই দায়ী। হাসপাতালগুলোকে সুরক্ষার দায়িত্ব সমাজের সর্বস্তরের মানুষকেই নিতে হবে। তবে সবার আগে অধিকতর কার্যকর ভূমিকা রাখতে হবে সরকারকে।
প্রকাশ:
২০১৬-০৬-০৭ ১০:১৬:০৩
আপডেট:২০১৬-০৬-০৭ ১০:১৬:০৩
- মেরিন ড্রাইভ সড়কে অস্ট্রেলিয়ান নাগরিক নিহত
- চকরিয়ায় সাবেক এমপি জাফর সাঈদি সহ আওয়ামী লীগের ২৮৭ জনের বিরুদ্ধে থানায় নতুন মামলা
- চকরিয়ায় যাত্রীবাহী বাস থেকে ৪০ কেজি গাঁজা উদ্ধার, বিক্রেতা গ্রেফতার
- দুর্নীতির আখড়ায় কক্সবাজার সিটি কলেজ
- চকরিয়ায় ব্যবসায়ীকে ডেকে নিয়ে হত্যার ভয় দেখিয়ে দুই লাখ টাকা ছিনতাই
- বদরখালী সমিতির ১১টি মৎস্য প্রকল্পের নিলাম নিয়ে বিরোধ
- রামুতে আপন ভাতিজিকে অপহরণ করে মুক্তিপণ দাবি
- রামুতে ল্যাপটপ পেলেন ৮০ নারী ফ্রিল্যান্সার
- চকরিয়ায় আওয়ামিললীগ ক্যাডার নজরুল সিণ্ডিকেটের দখলে ৩০ একর বনভুমি:
- চকরিয়ায় শিক্ষা ক্যাডার মনিরুল আলমকে ঘুষের বদলেগণপিটুনি
- চকরিয়ার বিষফোঁড়া সিএনজি-টমটম স্টেশন
- চকরিয়া সদরের বক্স রোড সম্প্রসারণ কাজে ব্যাপক অনিয়ম ও দূর্নীতির অভিযোগ
- বহিরাগতদের নিয়ে কলেজে গেলেন পদত্যাগ করা বিতর্কিত অধ্যক্ষ মুজিবুল আলম
- চকরয়ার ঠিকাদার মিজান গ্রেফতার, কোটি টাকার ঋণের জেল-জরিমানার দায়ে
- কক্সবাজার আবাসিক হোটেলে ৭০ ইউপি সদস্যের ‘গোপন বৈঠক’, আটক ১৯
- চকরিয়ার রশিদ আহমদ চৌধুরী উচ্চ বিদ্যালয় : কোটি টাকা লোপাটের অভিযোগ প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে
- চকরিয়ায় ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান, ২টি ডাম্পার ও স্কেভেটর জব্দ
- ঈদগাঁও’র নবাগত ইউএনও বিমল চাকমা
- চকরিয়ার সাবেক এমপি জাফর আলম, সালাহউদ্দিনসহ আওয়ামী লীগের ৭৩৬ জন আসামী
- চকরিয়ায় ব্যবসায়ীকে ডেকে নিয়ে হত্যার ভয় দেখিয়ে দুই লাখ টাকা ছিনতাই
- উত্তপ্ত রামু সরকারি কলেজ: অধ্যক্ষ মুজিবের অপসারনের দাবিতে কার্যালয় ও প্রশাসনিক ভবনে তালা
- কুতুবদিয়ায় গর্তে ১০ লক্ষ মণ পুরাতন লবন,লোকসানের শংকা চাষীরা
পাঠকের মতামত: