নিজস্ব প্রতিবেদক, চকরিয়া :: এমপি জাফর মনোনয়ন না পাওয়ায় চকরিয়া পৌরশহরে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী-সমর্থকদের ব্যাপক বিক্ষোভ, স্বতন্ত্র হিসেবে লড়াইয়ের ঘোষণা
কক্সবাজার-১ (চকরিয়া-পেকুয়া) আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে বিগত তিনটি সংসদ নির্বাচনে পরাজিত প্রার্থী কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সালাহউদ্দিন আহমদ সিআইপিকে।
রবিবার (২৬ নভেম্বর) বিকেলে কেন্দ্র থেকে তাঁর নাম ঘোষণার পর পরই মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে নির্বাচনী এলাকা চকরিয়া-পেকুয়ার দলীয় নেতাকর্মী থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষের মাঝে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও জাফর আলমের পক্ষে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা যায়।
এই আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য হচ্ছেন দলের চকরিয়া উপজেলার সভাপতি জাফর আলম। তাকে দলের মনোনয়ন না দেওয়ায় তাত্ক্ষণিক প্রতিক্রিয়ার অংশ হিসেবে চকরিয়া পৌরশহরের থানা রাস্তার মাথার সিস্টেম চকরিয়া কমপ্লেক্স চত্বরে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয় সন্ধ্যার আগে। এর পর বিক্ষোভ মিছিল চলে পৌরশহরে। এতে দলের তৃণমূল নেতাকর্মী থেকে শুরু করে হাজারো নারী-পুরুষ অংশ নেয়।
মতবিনিময় ও বিক্ষোভ মিছিলে ‘চকরিয়া-পেকুয়ার মাটি শেখ হাসিনার ঘাটি, জাফর ভাইয়ের ঘাটি’, ‘জাফর ভাই ভয় নাই, রাজপথ ছাড়ি নাই’সহ নানা শ্লোগানে মুখরিত হয়ে উঠে পৌরশহরের চিরিঙ্গা। এ সময় চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে যানবাহন চলাচলে ধীরগতি দেখা দেয়।
মনোনয়ন না পাওয়ার খবরে তাত্ক্ষণিক প্রতিক্রিয়ার এই কর্মসূচি থেকে বর্তমান সংসদ সদস্য জাফর আলম স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন বলে ঘোষণা দেওয়া হয় পরিবারের পক্ষ থেকে। এ সময় উপস্থিত ছিলেন সংসদ সদস্য জাফর আলমের সহধর্মিনী শাহেদা জাফর, পুত্র তানভীর আহমদ সিদ্দিকী তুহিন, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের মধ্যে চিরিঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান জামাল হোসেন চৌধুরী, ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হেলাল উদ্দিন হেলালী, হারবাং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মেহরাজ উদ্দিন মিরাজ, সাহারবিল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নবী হোছাইন চৌধুরী, কৈয়ারবিল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মক্কী ইকবাল হোসেনসহ আওয়ামী লীগ এবং অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা।
দলীয় মনোনয়ন বঞ্চিত বর্তমান সংসদ সদস্য জাফর আলমের সহধর্মিনী বলেন – বিগত ২৫ বছর ধরে চকরিয়া-পেকুয়ার রাজপথে বিএনপি-জামায়াতের বিরুদ্ধে লড়াই-সংগ্রাম করে, জেল-জুলুম-নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। আজ এই আসনে এমন একজনকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে, যার পক্ষে কোন জনগণ নেই। বিএনপির প্রার্থীর কাছে তিনবার পরাজিত হয়ে ঘরে ঢুকে গিয়েছিলেন সেই প্রার্থী। ইনশাআল্লাহ আগামী ৭ জানুয়ারির নির্বাচনেও খেলা হবে। সেই খেলায় চকরিয়া-পেকুয়ার জনগণ বর্তমান এমপি জাফর আলমকে বিপুল ভোট দিয়ে আবার নির্বাচিত করে সংসদে পাঠাবেন। আর জনবিচ্ছিন্ন সালাহউদ্দিন আবারও ঘরে ঢুকে যাবে।
মতবিনিময় সভায় উপস্থিত জনপ্রতিনিধিরা বলেন- বিএনপি-জামায়াতের সময় অপশাসন, মামলা-হামলা, জেল খাটাসহ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা অত্যাচার-নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন। এখানে কেউ আওয়ামী লীগ পরিচয় দেওয়ার সাহস করতো না। সেই অবস্থা থেকে উত্তরণ ঘটিয়ে নিরাপদ এলাকা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন এমপি জাফর আলম। নেতাকর্মীদের সুখে-দুঃখে পাশে থেকেছেন, মূল্যায়ন করেছেন। রাজপথে বিএনপি-জামায়াতকে এক মুহূর্তের জন্যও দাঁড়াতে দেননি নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড সংঘটিত করতে। সেই জাফরকেই দলীয় মনোনয়ন না দেওয়ায় হতাশ তৃণমূলের নেতা-কর্মী ও সাধারণ জনতা।
এদিকে যে কোন ধরণের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে পুলিশ, বিজিবিসহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সতর্ক অবস্থান ও টহল দিতে দেখা যায়।
এ ব্যাপারে চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মোহাম্মদ আলী বলেন ‘তাত্ক্ষণিক কর্মসূচিকে ঘিরে চকরিয়া পৌরশহরে যাতে কোন ধরণের বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি না হয় সেজন্য পুলিশসহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সতর্ক অবস্থায় ছিল।
পাঠকের মতামত: