:: এম.আর মাহমুদ ::
দেশের ১০টি শিক্ষা বোর্ডের আওতাধীন সকল এইচএসএসি ও মাদ্রাসা বোর্ডের আলিম পরীক্ষার্থীদের অটোপাস ঘোষণা করেছেন। শনিবার সকাল ১১ টার মধ্যে এসব শিক্ষার্থী তাদের বহু কাঙ্খিত ফল পেয়েছে। এবারের ফলাফলে কোন শিক্ষার্থী অকৃতকার্য হয়নি। শতভাগই পাস ফলে অকৃতকার্য কোন শিক্ষার্থী অপমানে আত্মহত্যার পথ বেচে নেয়নি। আবার অটোপাস করা শিক্ষার্থীদের মধ্যে আনন্দ উল্লাস পরিলক্ষিত হচ্ছে না। বিশেষ করে মিষ্টির দোকানের অবস্থা দেখে মনে হয়েছে সেখানে কোন শিক্ষার্থীদের ভিড় নেই।
করোনা মহামারীর কারণে ২০২০ সালের এইচএসসি ও আলিম পরীক্ষা নেয়া সম্ভব হয়নি। শিক্ষা মন্ত্রণালয় অনেক কাঠ-খড় পুড়িয়ে পরীক্ষা নিতে ব্যর্থ হয়ে বাধ্য হয়ে শিক্ষার্থীদের অটোপাস ঘোষণা করতে বাধ্য হয়েছে। জানিনা ২০২১ সালের এসএসসি/দাখিল ও এইচএসসি/আলিম পরীক্ষার্থীদের বেলায় কি সিদ্ধান্ত নেয়া হয়? গেল বছরের ১৭ মার্চ থেকে দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ। শিক্ষার্থীরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শ্রেণিকক্ষে গিয়ে শিক্ষক মহোদয়দের পাঠদান থেকে বঞ্চিত হয়েছে। ফলে লেখাপড়া কেমন হয়েছে বলা নিষপ্রয়োজন। শিক্ষার্থীরা দীর্ঘ ১০ মাসের বেশি সময় থেকে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার্জন থেকে বঞ্চিত বলা যাবে। সচেতন পরিবারের শিক্ষার্থীরা বাড়িতে, প্রাইভেট বা কোচিং সেন্টারে গিয়ে লেখাপড়া চালু রেখেছে। যা নগণ্য বলাই চলে। কিছু কিছু প্রতিষ্ঠান অনলাইনে পাঠদান ও সংসদ টেলিভিশনে পাঠদানের মাধ্যমে শিক্ষাজ্ঞান অর্জন করলেও ক’জনের কপালে জুটেছে বলা মশকিল। তবে করোনা মহামারী চলাকালেও কওমী (বেসরকারি) মাদ্রাসা ও হাফেজখানাগুলো কিছুদিন বন্ধ থাকলেও স্বাভাবিকভাবে এখন শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। এসব প্রতিষ্ঠানে কেউ করোনা আক্রান্ত হয়েছে বলে জানাও যায়নি।
সরকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে করোনা মহামারী ছড়িয়ে পড়ার ভয়ে হয়তো প্রতিষ্ঠানগুলো খুলে দিচ্ছে না। আল্লাহ না করুক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে করোনা ছড়িয়ে পড়লে মারাত্মক আকার ধারণ করার আশঙ্কা একেবারে অমূলক নয়। এদিকে ৪ ফেব্র“য়ারী থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার ব্যাপারে একটি সিদ্ধান্ত হলেও পুনরায় ১৪ ফেব্র“য়ারি পর্যন্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছেন। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছাড়া অন্যান্য ক্ষেত্রে এ ধরণের প্রতিবন্ধকতা নেই বলা চলে। বিশেষ করে করোনা মহামারী চলাকালে পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে উপছে পড়া ভিড়। সিটি কর্পোরেশন থেকে পৌর নির্বাচন চলছে। অফিস পাড়া খোলা রয়েছে। এখানে নেই কোন করোনার ভয়। তারা সামাজিক দূরত্বও মানছে না। তারপরও করোনা রোগী সনাক্তের পরিমাণ দিন দিন কমছে। মৃত্যুর সংখ্যাও অনেকাংশে কম। কি কারণে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ করে রাখা হয়েছে সংশ্লিষ্টরাই ভাল জানে।
এ অবস্থা অব্যাহত থাকলে জাতি শিক্ষাক্ষেত্রে চরমভাবে পিছিয়ে পড়বে। অটোপাস প্রথা যদি অব্যাহত থাকে তাহলে শিক্ষার্থীদের জীবনে নেমে আসবে চরম হতাশা। এবারের অটোপাসের ফলাফল বিশ্লেষণ করতে গিয়ে দেখা গেছে, অনেক শিক্ষার্থী জেএসসি/জেডিসিতে গোল্ডেন এ+, এসএসসি/দাখিল পরীক্ষায় এ পেলেও অটোপাসের ক্ষেত্রে জিপিএ বিন্যাসের ক্ষেত্রে দেখা গেছে বৈষম্য। নামে প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন শিক্ষার্থী দাবী করেছেন, সে জেডিসি পরীক্ষায় ৫.০০ (গোল্ডেন এ+) ও দাখিল পরীক্ষায় ৪.৭৫ (এ) অর্জন করে অটোপাসে তার ফলাফল আসে ৪.৪২ (এ)। কিন্তু তার একজন সহপাঠী জেডিসি পরীক্ষায় ৪.৯৪ (এ) ও দাখিল পরীক্ষায় ৪.৭৫ (এ) অর্জন করে অটোপাসে তার ফলাফল আসে ৪.৮৩ (এ)। অথচ যার জিপিএ বেশি আসার কথা তার এসেছে কম, যার কম আসার কথা তার এসেছে বেশি। বিষয়টি যেন হ-য-ব-র-ল অবস্থা। যাক এসব বলে লাভই কি? ভিক্ষার চাল আবার কাড়া-আকড়া বলে লাভ কি? তবে প্রশ্ন জাগে করোনার কারণে শুধুমাত্রই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলেও অফিস ও আদালত পাড়া, পর্যটন খোলা রয়েছে।
এছাড়া করোনাকালীন সময় সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভার নির্বাচনগুলো হচ্ছে অনায়সে। যেখানে লাখ লাখ শিক্ষার্থীকে শিক্ষা জীবন রক্ষার স্বার্থে অটোপাস দিয়ে মহানুভবতার পরিচয় দিয়েছে সেখানে আগামীতে অনুষ্ঠিত হওয়া পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে অটো বিজয়ী ঘোষণা করলে নির্বাচন কমিশন (সরকারি কোষাগারে) কোটি কোটি টাকার ব্যয় থেকে যেমন রক্ষা পাবে তেমনি সংঘাত, প্রাণহানি ও করোনা ছড়ানোর আশঙ্কা থেকে মানুষ নিস্তার পাবে।
সব কথার শেষ কথা হচ্ছে আগামী ৭ ফেব্র“য়ারির মধ্যে সারাদেশে করোনার টিকা প্রয়োগ করার ঘোষণা দিয়েছেন। ইতিমধ্যে জেলায় জেলায় করোনার টিকা পৌঁছিয়ে দেয়া হচ্ছে। আমরা আশাবাদী আল্লাহ আমাদেরকে করোনা মহামারী থেকে রক্ষা করবে। আবার শিক্ষার্থীরা তাদের প্রিয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ফিরে যাবে।
লেখক: এম আর মাহমুদ সিনিয়র সাংবাদিক, দৈনিক সমকাল -চকরিয়া প্রতিনিধি ও সভাপতি -চকরিয়া অনলাইন প্রেসক্লাব, চকরিয়া, কক্সবাজার।
পাঠকের মতামত: